বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
” সেচযন্ত্রে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ” কলমাকান্দায় ত্রিশ একর বোরো জমি আবাদ নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা 

” সেচযন্ত্রে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ” কলমাকান্দায় ত্রিশ একর বোরো জমি আবাদ নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা 

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি :  সেচযন্ত্র চালানোর জন্য প্রায় চার মাস আগে নেত্রকোনার কলমাকান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আঞ্চলিক কার্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করার জন্য আবেদন করেন কৃষক হুমায়ূন কবির। কিন্তু তিনি এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি। ফলে প্রায় ৩০ একর বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন খারনৈ ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর বৈঠাখালী ফসল মাঠের কৃষকরা।
এবিষয়ে হুমায়ূন কবির জানান , ওই ফসলের মাঠের অনুমোদিত সেচ লাইন আমার। এই সেচযন্ত্রেও মাধ্যমে তিন বছর ধরে বোরো ধান চাষাবাদ কওে আসছেন স্থানীয় কৃষকেরা। গত বছর আমার সেচযন্ত্রেও পাশে অবৈধভাবে একই এলাকার হুজায়েল মুন্সি নতুন কওে আরেকটি সেচযন্ত্র বসানোর কাজ শুরু করে। পওে আমি ৮০০ ফুটের মধ্যে যাতে নতুন করে হুজায়েল মুন্সিগং’রা আরেকটি সেচমটর বসাতে না পাওে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ ও যাতে না পান। সেজন্যে আদালতের শরণাপন্ন হই। আদালত এই অভিযোগটি আমলে নিয়ে গত ১৩ এপ্রিল মোকদ্দমাটি চুড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থিতাবস্থা রাখার নির্দেশ দেন। পরে গত ১০ অক্টোবর আমার বৈধ সেচলাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য কলমাকান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বরাবওে আবেদন করি। ১৭ অক্টোবর রশিদমূলে ২ হাজার ৪৬০ টাকা জমাও দেই। টাকা  জমা হবার পর বিদ্যুৎ অফিসে সংযোগের জন্য যোগাযোগ করলে আমাকে হুজুয়েল মুন্সীর সাথে আপোষ মীমাংসা করে জানানো কথা বলে। পরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিবে না হয় দিবে না বলে আমাকে জানান।  আমি তো বৈধ । আমি কেন তাদের সাথে আপোষ মীমাংসা হবো? আমি তো বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছি। আদালত আমার পক্ষে আদেশও দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ আমার সেচলাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেননি।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, বিশ্বনাথপুর বৈঠাখালী গ্রামের কৃষক রঞ্জন রেমা, সবুল মিয়া, জাহিদ আলী, লোকমান মিয়া, মো: বাচ্চু মিয়া, কাদির মিয়া, সার্টিন রেমা, আবু তাহের, শামছুন্নাহারসহ আরও অনেকেই জানান, ওই এলাকার  অনুমোদিত মো. হুমায়ূন কবিরের সেচে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ায় বোরো ধান চাষ করতে না পারার আশঙ্কায় তারা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
বৈঠাখালী গ্রামের কৃষক জাহেদ আলী বলেন, এই মাঠে তার এক একর জমি আছে। পানির অভাবে জমিটি চাষাবাদ করতে পারছেন না। ইতিমধ্যে অনেক এলাকাতেই বোরো ধান লাগানো শেষ হয়ে গেছে। এ নিয়ে তারা এখন বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আওলাদ হোসেন জানান, হুমায়ুন কবিরের সেচলাইন থাকার পরও নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ওই সেচের পাশে ৫৮৮ ফুট দুরত্বে নতুন করে  হুজুয়েল মুন্সী আরেকটি ডিপটিউবওয়েল বসানোর পাঁয়তারা করছেন। তাছাড়া এখন বোরো ফসল আবাদেও সময় প্রায় শেষের দিকে কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বৈধ হুমায়ুন কবিরের সেচ লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ায় ফসলের মাঠটিতে থাকা  প্রায় ৩০ একর ফসলী জমি পতিত থাকার আশঙ্কা আছে।
আরেক স্থানীয় ইউপি সদস্য এনামুল হক বলেন, হুমায়ূন কবির সেচ বিদ্যুৎ এর লাইনের মূলখুটি হুজুয়েল মুন্সী এর জমিতে পড়ায়। সে খুটিটিকে বেড়া দিয়ে আটকে রেখেছেন। পল্লী বিদুৎ এর লোকজন সংযোগ দিতে গেলে রামদাসহ লাঠিসোটাসহ তেড়ে আসে। আমরা সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।   বোরো ধান চাষ করতে না পারার আশঙ্কায় তারা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে কলমাকান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী রাশেদুজ্জামান বলেন, হুমায়ুন কবীর ও হুজুয়েল মুন্সীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য লোক পাঠালে হুজুয়েল মুন্সীর লোকজন বাঁধা দেয়। তাই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। পত্রের মাধ্যমে আপোষ মীমাংসা হলে বিষয়টি জানাতে বলা হয়েছে হুমায়ূন কবিরকে। এরপর বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে এর আগে না।
অভিযুক্ত হুজুয়েল মুন্সীর বিদ্যুৎ সংযোগে বাধা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, গত বছর হুমায়ূনের সেচ থেকে ৬০০ ফুট দুরত্বে আমাকে উপজেলা সেচ কমিটি ছাড়পত্র দিয়েছেন। এনিয়ে হুমায়ূন কবির আদালতে আমাকে সহ ৬ জনকে বিবাদী করে একটি মামলা করেছেন। এর জন্য আমার সেচ বসানোর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আমার লাইন চালু করতে না দিলে হুমায়ুনের সেচ লাইন চালু করতে দিবো না।
এব্যাপারে কলমাকান্দা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ  মো. ফারুক  আহমেদ জানান, খবর পেয়ে বৈঠাখালী ফসলের মাঠে উপ-সহকারি মো. সাখাওয়াত হোসেনকে পাঠানো হয়। তাছাড়া কৃষকরা যাতে নির্বিঘ্নে এই জমি চাষাবাদ করতে পারে এ জন্য সকল প্রকার পদক্ষেপ নেয়া হবে।
১৬ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS