রবিবার- ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তানোরে ব্র্যাকের আলুবীজ কেলেঙ্কারি ধামাচাপার চেষ্টা 

তানোরে ব্র্যাকের আলুবীজ কেলেঙ্কারি ধামাচাপার চেষ্টা 

তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে ব্র্যাকের আলুবীজ কিনে কৃষকেরা প্রতারিত হওয়ার ঘটনা রাতারাতি ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এতে করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার এমন জঘন্য ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টার ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়লে কৃষকদের মাঝে চাঁপাক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যর সৃষ্টিও হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা যোগসাজশ করে নিঃস্ব আলু চাষিদের পক্ষে আলুর বীজ ডিলারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো কৃষকদের সমঝোতা হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে ব্র্যাকের মতো স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানের আলুবীজ কেলেঙ্কারির খবর ছড়িয়ে পড়লে রীতিমতো এলাকাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত বীজ ডিলারকে আটক ও ক্ষতিপুরুণের দাবিতে কৃষকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, গত ২ জানুয়ারী  রোববার মোহর গ্রামের  ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও  এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল বাজারের ব্র্যাকের বীজ ডিলার মোর্তুজা অধিক মুনাফার আশায় গোপণে দীর্ঘদিন ধরে  তিনি নীতিমালা লঙ্ঘন ও চোরাপথে তানোর-গোদাগাড়ী, মান্দা এবং পবা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় আলুবীজ ও রাসায়নিক বিক্রি করে আসছেন। এসব বীজ সার বিক্রিতে কোনো রশিদ দেয়া হয় না।
জানা গেছে, মোহনপুর উপজেলার ধুরইল বাজারের ব্র্যাকের আলুবীজ ডিলার মোর্তুজা ব্র্যাকের উচ্চ ফলনশীল আলুবীজ বলে তানোর উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) মোহর গ্রামের কীটনাশক ব্যবসায়ী মেসার্স সোহান ট্রেডার্সের কাছে বিক্রি করেছেন। এদিকে মোহর, লসিরামপুর ও শুকদেবপুর গ্রামের কৃষকেরা সোহান ট্রেডার্স
থেকে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা দরে ব্র্যাকের আলু বীজ (বি-গ্রেড) কিনে রোপণ করেন। কিন্তু  ভেজাল ও নিম্নমাণের বীজের কারণে গাছ গজায়নি। এতে কৃষকেরা চরম বিপাকে পড়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত প্রতি বিঘা আলু চাষে কৃষকের প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।মেসার্স সোহান ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী দুলাল মন্ডল বলেন, তিনি ধুরইল বাজারের ব্র্যাকের বীজ ডিলার মোর্তুজার দোকান থেকে কিনেছেন। তিনি বলেন, এর দায় মোর্তুজার।কারণ তিনি ব্র্যাকের প্যাকেট রিপ্যাক করে নিম্নমানের বীজ দেয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি মনে করছেন। মোহর গ্রামের কৃষক আকতার হোসেন (৪৫) বলেন, তিনি দুলালের দোকান থেকে ৩৬ হাজার টাকার ব্র্যাকের বি-গ্রেড আলু বীজ কিনে রোপণ করেছেন। কিন্তু ভেজাল বীজের কারণে গাছ গজায়নি। এতে দেড় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষক আনারুল ও জব্বার বলেন, তারাও দুলালের দোকান থেকে আলু বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছে। তারা বলেন, দুলালের দোকানের আলু বীজ কিনে তাদের মতো আরো অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,গত ৩ জানুয়ারী মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের কথা বলে তানোর পৌর এলাকার কাশেমবাজার ডেকে নেয়া হয়। পরে স্থানীয় কাউন্সিলের নেতৃত্বে ব্যবসায়ী মোর্তুজা ও দুলাল কৃষকের কাছে থেকে কৌশলে ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে তাদের স্বাক্ষর নিয়ে আপোষনামা লিখে নিয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কৃষি কর্মকর্তার কাছে করা অভিযোগ একজন কাউন্সিলর কি আপোষরফা করতে পারেন ? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক বলেন, দ্রুত ক্ষতিপূরুন না পেলে তারা মানববন্ধন কর্মসূচি দিবেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স সোহান ট্রেড্রার্সের স্বত্ত্বাধিকারী দুলাল বলেন, তিনি ব্র্যাকের রি-ট্রেলার। তিনি মোহনপুর উপজেলার ধুরইল বাজারের ব্র্যাকের বীজ ডিলার মুর্তজার  দোকান থেকে এসব বীজ কিনে এনে বিক্রি করছেন, তায় এর দায় মুর্তজার। তিনি বলেন, মঙ্গলবার কাশিমবাজার বসে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে সমঝোতা করা হয়েছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে ধুরইল বাজারের ব্র্যাকের বীজ ডিলার মুর্তজা বলেন, তার কাছে থেকে বীজ কিনে দুলাল তার ঘরে রাসায়নিক সারের সঙ্গে আলু বীজ রাখায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তিনি মোহনপুর উপজেলার ডিলার হয়ে তানোর উপজেলায় বিক্রি করেন কিভাবে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদোত্তর না দিয়ে কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, কৃষকরা অভিযোগ দিয়েছে, সরেজমিন তদন্তপুর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও পংকজ চন্দ্র দেবনাথ জানান, কৃষকেরা আলু চাষ করে ক্ষতিগস্থ হয়েছে বলে অভিযোগ দিয়েছে, বিষয়টি কৃষি কর্মকর্তাকে তদন্ত সাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৬১ বার ভিউ হয়েছে
0Shares