বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বেনাপোল স্থল বন্দরের গুরুত্ব বাড়লেও অবকাঠামোর কোন পরিবর্তন হয়নি, পন্যখালাসে সৃষ্টি হয়েছে নানা সমস্যা

বেনাপোল স্থল বন্দরের গুরুত্ব বাড়লেও অবকাঠামোর কোন পরিবর্তন হয়নি, পন্যখালাসে সৃষ্টি হয়েছে নানা সমস্যা

আব্দুল মান্নান, শার্শা (যশোর) সংবাদদাতা : দেশের সর্ববৃহত্তম বেনাপোল স্থল বন্দরের গুরুত্ব বাড়লেও অবকাঠামোর কোন পরিবর্তন হয়নি। রয়ে গেছে মানদাত্তার আমলের কার্যব্যব¯া’। বন্দরকে করা হয়নি আধুনিকায়ন। দিন দিন নানা সমস্যা বাড়ছে বন্দরের। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। আর কাঙ্খিত রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। কাগজ কলমে উন্নয়নের কথা বলা হলেও বাস্তবে বেনাপোল বন্দরে কোন ্্্্্উন্নয়ন হচ্ছে না। দেশের সর্ববৃহত্তম স্থল বন্দরের গুরুত্ব বাড়লেও অবকাঠামোর কোন পরিবর্তন হয়নি। বন্দরে আমদানীকৃত পণ্য রাখার শেড গুলি ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। দেড় যুগ আগের পুরাতন ও জরাজীর্ন সেড ও ইয়ার্ড দিয়ে চলছে বেনাপোল বন্দরের কার্য ব্যবস্থা। বন্দরে আমদানীকৃত মালামাল লোড-আনলোডর জন্য ভাড়া করা অধিকাংশ ক্রেন ও ফর্কলিফট নষ্ট থাকায় বিঘœ ঘটছে বন্দরের মালামাল খালাসের প্রক্রিয়া।

লোড-আনলোডের যান্ত্রিক সমস্যায় বৃহত্তম এ বন্দরটিতে প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ পণ্যজট। পানি নিস্কাসনের জন্য ড্রেন ব্যবস্তা থাকলেও দীর্ঘদিন সংস্ক্ার না করার কারনে সেগুলি ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় একটু বৃষ্টি হলে বন্দরের ভিতর হাটু পানি জমে যায়। অনেক সময় পানি সেডের ভিতর ঢুকে আমদানী কৃত কোটি কোটি টাকার পন্য পানিতে ভিজে নষ্ট হয়। আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় আমদানী কারকরা। নতুন সেড নির্মানের জন্য টেন্ডার হলেও একটি মাত্র শেড ছাড়া অন্য গুলো এখনো নির্মান কাজ শুরু হয়নি। বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে আমদানী কৃত মালামাল রাখার জন্য ৩৬টি সেড রয়েছে। যার অধিকাংশরই মেয়াদকাল অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ওপেন ইয়ার্ড পাঁচটি, ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড একটি, ট্রাকটার্মিনাল আমদানি দুটি ও রফতানি একটি। এসব গুদামে পণ্য ধারণক্ষমতা ৪৬ হাজার মেট্রিক টন।

কিন্তু সব সময়ই বন্দরে ৭০-৮০ হাজার টন পণ্য মজুদ থাকে। ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মালামাল ঝুঁকি নিয়ে রাখা হচ্ছে ঠাসাঠাসি করে। এমনকি ট্রাকটার্মিনালসহ বিপজ্জনক দাহ্য গোডাউনেও মালামাল রাখা হচ্ছে। জায়গা সংকটে প্রতিদিন কয়েকশ’ ভারতীয় ট্রাক মালামাল নিয়ে বন্দরের দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে খালাশের অপেক্ষায়। বেনাপোল বন্দর অভ্যান্তরে ট্রাক ড্রাইভারদের থাকা খাওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় ড্রাইভাররা হেলপাররা মানবেতর জীবন যাপন করছে। এদিকে দু দেশের মধ্যে আমদানী রপ্তানী গতিশীলতা বাড়াতে বেনাপোল বন্দরের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোলে নির্মান করা হয়েছে আধুনিক ্ইন্টিগেটর চেকপেষ্ট।

সেখানে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার ট্রাক রাখার ব্যবস্থা সহ সকল সুবিধা থাকলেও বেনাপোল বন্দরে সে ধরনের কোন অবকাঠামো নেই। পণ্যজটের কারণে বেনাপোল বন্দরের প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের পেট্রাপোল বন্দর ও বনগাঁ কালিতলা পার্কিংয়ে পণ্য নিয়ে শত শত ভারতীয় ট্রাক অপেক্ষা করছে। ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাষ্ট্রিজ এর আমদানী ও রপ্তানী সাব-কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৭৩ সালে বেনাপোল বন্দর পরিদর্শনে আসার পর কিছু সেড নির্মান করা হয়।

আমদানী রপ্তানিী বৃদ্ধির সাথে সাথে ১৯৮৪ সালে বেনাপোলে আরো কিছ ু সেড ও ইয়ার্ড নির্মান করে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরবর্তিতে বেনাপোল বন্দরকে বঙ্গবন্ধু সতন্ত্র বন্দর ঘোষনার দাবী করা হলে বাংলাদেশ স্থল বন্দরের আওতায় এনে বেনাপোল স্থলবন্দর ঘোষনা করা হয়। এরপর ও বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামোগত তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। দেড় যুগ আগের সেড ও ইয়ার্ড দিয়ে আমদানী রপ্তানীর কার্যক্রম চালাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বেনাপোল স্থল বন্দরকে আধুনিক বঙ্গবন্ধু স্থল বন্দর ঘোষনা করার দাবী করেছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।বেনাপোল সি এন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুর রহমান জানান, বেনাপোল স্থল বন্দরে ভারত থেকে আমদানী কৃত পন্য রাখার জন্য ৩৬ টি সেডও ৪টি ওপেন ইয়ার্ড রয়েছে। যার ধারন ক্ষমতা ৪৬ হাজার মেট্রিক টন পন্য। অথচ বেনাপোল বন্দরে প্রতিদিন ৭০-৮০ হাজার মেট্রিক টন পন্য ওঠানামা করে। বন্দরে জায়গা সংকটের কারনে প্রতিদিন বন্দর এলাকায় পন্য জটের সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে ট্রাক টার্মিনাল না থাকার কারনে খালী ট্রাক গুলি রাস্তার দু ধারে দাড়িয়ে থেকে সৃষ্টি করছে যানযটের।

আমরা দীর্ঘদিন ধরে বন্দর কর্তৃপক্ষকে বার বার বন্দর উন্নয়নের ব্যাপারে বললেও বন্দরের চেয়ারম্যান কোন কর্নপাত করছেন না। অথচ বেনাপোল বন্দর থেকে প্রতিবছর সরকার ৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে থাকেন। আমদানী রপ্তানী বানিজ্যে গতিশীলতা বাড়াতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে আধুনিক চেকপোষ্ট নির্মান করলেও বেনাপোল বন্দরকে করা হয়নি আধুনিকায়ন। জরুরী ভিত্তিতে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল রাখার জন্য একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদামসহ ১৫টি সেড নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া দুটি এক্সপোর্ট শেড ও একটি ছাউনিযুক্ত ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড নির্মাণের দাবিও করা হয়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে। অবিলম্বে বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা না হলে মুখ থুবড়ে পড়বে আমদানী রপ্তানী বানিজ্য। বেনাপোল স্থল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল জানান, সাসেক্স এর আওতায় বেনাপোল বন্দরে ১০০ কোটি টাকার কাজ শুরু হয়েছে। বেনাপোল বন্দরে নতুন ২টি শেড , ফ্লোর পাকা করন সহ ড্রেন নির্মান করা হবে। সাময়িক কিছু সমস্যা আছে কাজ শেষ হলে বন্দরে কোন সমস্যা ধাকবে না । বন্দরে পন্যজটও কমে যাবে বলে আশা করছি।

১০০ বার ভিউ হয়েছে
0Shares