শুক্রবার- ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রাজিল ইতিহাস বদলাতে পারল না

ব্রাজিল ইতিহাস বদলাতে পারল না

ক্রোয়েশিয়ার জার্সিতে দাবার ছক। ফুটবল মাঠেও থাকল সেই মেধার প্রতিফলন। এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে তাই সাম্বার ঝড় তুলেও বিদায় নিতে হলো ব্রাজিলকে। ২০০২ থেকে থাকতে হলো শিরোপাহীন। এই ব্যর্থতা মেনে নিলেন ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা, ‘এটা খুব কঠিন। তবে আমরা যতই দুঃখী হই, জীবন থেমে থাকবে না। তাই মাথা উঁচু রাখতে হবে। ছেলেরা যা করেছে তাতে আমি গর্বিত। তবে দুর্ভাগ্য হচ্ছে যে এটাই ফুটবল।

ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে বিবিসির ধারাভাষ্যে জার্মানির কিংবদন্তি ইয়ুর্গেন ক্লিনসমান বলছিলেন, ‘ক্রোয়েশিয়া হচ্ছে ইউরোপের ব্রাজিল, মডরিচরা ব্রাজিলের মতোই খেলে। ’ বিরতির আগে মিলেও গেল এটা। দুই দলের বল পজেশন ছিল ঠিক ৫০ শতাংশ! গোলপোস্টে ক্রোয়েশিয়ার শট তিনটি আর ব্রাজিলের পাঁচটি। তবে ক্রোয়েশিয়ার কোনো শটই ছিল না লক্ষ্যে। বিপরীতে ব্রাজিলের লক্ষ্যে শট তিনটি। বিরতির পর ব্রাজিলের আক্রমণগুলো বেশি ভয়ংকর হলেও বল পজেশন সেই ৫০-৫০! পজেশনে সমান হলেও ব্রাজিল পুরো ম্যাচে পোস্টে শট নেয় ২১টি। এর ১১টিই সেভ করেন নায়ক গোলরক্ষক ডোমিনিক লিভাকোভিচ। নেইমারের রেকর্ডটাও ম্লান হয়েছে তাতে। জাদুকরী এক গোলে ব্রাজিলের জার্সিতে পেলের সমান ৭৭ গোল করেছেন তিনি।

এজন্য পেলে খেলেছেন ৯২ ম্যাচ আর নেইমার ১২৪ ম্যাচ। পেলে তিনটি বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন সেলেসাওদের। তবে নেইমারের ৭৭ গোলেও খালি হাতে বিশ্বমঞ্চ থেকে ফিরতে হলো ব্রাজিলকে। সেই ১৯৭০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপ খরায় ভুগেছিল ব্রাজিল। টানা পাঁচটি বিশ্বকাপ থেকে ফিরতে হয়েছিল খালি হাতে। সেই রেকর্ড গত শুক্রবার আরো একবার স্পর্শ করল সেলেসাওরা। ২০০২ থেকে ২০২২ সাল-টানা পাঁচ বিশ্বকাপ ট্রফিহীন নেইমাররা।

গত শুক্রবার তাঁদের বিদায়ে সবচেয়ে বড় অবদান ক্রোয়েশিয়ান গোলরক্ষক লিভাকোভিচের। জাপানের বিপক্ষে তিনটি পেনাল্টি আটকে রূপকথার নায়ক হওয়া লিভাকোভিচ গত শুক্রবার ঠেকালেন রোদ্রিগোর শটও। তাঁর দৃঢ়তায় মার্কিনহোসও মিস করেন ব্রাজিলের চতুর্থ শটটা। বেচারা নেইমার! পঞ্চম শট নেওয়ার সুযোগই পেলেন না আর। ক্রোয়েশিয়ার এই স্বপ্নযাত্রা কিন্তু একেবারে লটারিতে পাওয়া ব্যাপার নয়। ২০১৮ বিশ্বকাপ থেকেই ধরা যাক। সেবার শেষ ষোলোয় তারা টাইব্রেকারে ৩-২ ব্যবধানে হারায় ডেনমার্ককে। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক রাশিয়াকেও টাইব্রেকারে হারায় ৪-৩ ব্যবধানে। সেমিফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে ইংল্যান্ডকেও হারায় ২-১ ব্যবধানে। সেই বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে কিন্তু আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল ক্রোয়েশিয়া। সেই দলের অনেকে না থাকলেও নেতৃত্বে এখনো লুকা মডরিচ। তাঁর নেতৃত্বে বিরতির আগে মাঝমাঠে দাপট ছিল ক্রোয়েশিয়ারই। বিরতির আগে ১০২টি পাসের মধ্যে ৯০টি সম্পন্ন করেছিল তারা।

ট্যাকল সাতটি আর বল কেড়েছিল ১১ বার। ব্রাজিলকে পেছনে ফেলে টানা দ্বিতীয়বার সেমিফাইনালে পৌঁছলেও ক্রোয়েশিয়ান কোচ জ্লাতকো দালিচ থামতে চান না এখানেই, ‘আমরা ভীষণ গর্বিত। তবে এখানেই শেষ নয়, আমরা আরো দূরে যেতে চাই। টানা দ্বিতীয়বার আমরা সেমিফাইনালে। খেলোয়াড়রা ভীষণ উচ্ছ্বসিত।

ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হারের অতীতই ছিল না ব্রাজিলের। মুখোমুখি চার ম্যাচে সেলেসাওদের জয় তিন আর ড্র একটি। লাতিনদের সঙ্গেও রেকর্ডটা গর্ব করার মতো নয় গত বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা ক্রোয়েশিয়ার। বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচ খেলে হেরেছিল চারটি। গত বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে হারানোটা তাদের সেরা সাফল্য। গত শুক্রবার নতুনভাবে ইতিহাস লিখে টাইব্রেকারে ব্রাজিলকেও হারাল ক্রোয়াটরা। ২০০২ বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানিকে হারানোর পর ইউরোপীয় দলগুলোর বিপক্ষে বিবর্ণ ছিল ব্রাজিল। বিশ্বকাপ নক আউটে কোনো ইউরোপীয় দলকে টানা ২০ বছর হারাতে পারেনি তারা। ব্রাজিল ইতিহাসটা বদলাতে পারল না গত শুক্রবারও।

১৫০ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS