বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
চট্টগ্রামের মহাসমাবেশে লক্ষ লক্ষ জনতাকে সজাগ থাকতে বললেন প্রধানমন্ত্রী।

চট্টগ্রামের মহাসমাবেশে লক্ষ লক্ষ জনতাকে সজাগ থাকতে বললেন প্রধানমন্ত্রী।

এনামুল হক রাশেদী, স্টাফ করেসপন্ডেন্টঃ সকাল থেকেই লোকে লোকারন্য চট্টগ্রাম মহানগরীর রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠ। দুপুর ২ টা বাজতেই মাঠ পরিপুর্ন হয়ে নগরীর দেওয়ান হাট, টাইগার পাস, লালখান বাজার, সিআরবি, কদমতলী হয়ে দক্ষিনে রেললাইন পর্যন্ত লোকজনের অবস্থান। তখনো মহাসমাবেশের প্রধান অথিতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাছিনা সমাবেশস্থলে আসেননি। চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন এমপি ও মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাবেক চট্টগ্রাম নগর মেয়র অা,জ,ম নাসির উদ্দিনের যৌথ সঞ্চালনায় মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রীবর্গ, চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিনের আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।
০৪ ডিসেম্বর’২২ ইং রবিবার চট্টগ্রাম নগরীতে অনুষ্ঠিত আওয়ামীলীগের মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামীলীগের সভাপতি বর্ষিয়ান আওয়ামীলীগ নেতা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। বিভিন্ন আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দের নামে নানান রঙ্গের গেঞ্জি মাথার ক্যাপ পরিহিত নেতৃবৃন্দের ছবি ও উন্নয়নের ফিরিস্তির পোস্টার ব্যানার, পেস্টুন হাতে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত চট্টগ্রাম মহানগরীর সব প্রবেশ পথ দিয়ে বিভিন্ন যানবাহানে করে উপজেলাগুলো থেকে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মী মাঠের দিকে আসতে শুরু করেন সকাল থেকেই। শনিবার রাতেও অনেকে নগরীতে এসে পৌঁছান। দূরবর্তী উপজেলা গুলো থেকে আসা নেতাকর্মীরা শনিবার রাতে নগরীর বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে এসে অবস্থান নেন। তাদের মাঝে শনিবার রাতে ও রোবববার সকালে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয় বিভিন্ন নেতার পক্ষে। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিন আওয়ামীলীগের আয়োজনে জনসভা মঞ্চে দুপুর ৩.০২ মিনিটে হাজীর হন প্রধান অথিতি গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা। এর পরপরই মঞ্চ থেকে এক হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহত্তম চট্টগ্রামে নির্মিত ২৯টি প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন এবং এক হাজার ৪৫৩ কোটি টাকার চারটি প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করেন সরকার প্রধান। ১১টি মন্ত্রণালয়ের অধীন এসব প্রকল্পের মধ্যে লালদিঘী ময়দানের সংস্কার, হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প; চট্টগ্রামে বিপিসি ভবনের নির্মাণ, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র গড়ে তোলা, নারীদের জন্য আবাসন ও প্রশিক্ষণ ভবন নির্মাণ, বাঁশখালীতে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে।
এ মহাসমাবেশকে ঘিরে বিগত এক সপ্তাহ থেকে বৃহত্তম চট্টগ্রামের নগর, শহর ও মফস্বলের আনাছে-কানাছে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতা কর্মিদের মাঝে উৎসবের আমেজ পরিলক্ষিত হচ্ছিল। ভোর থেকেই তারা রঙবেরঙের ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে, ব্যান্ড বাজিয়ে রঙিন টুপি পরে জড়ো হতে থাকেন পলোগ্রাউন্ডে।
‘জয় বাংলা- বাংলার জয়’ গান দিয়ে সকাল ১০টায় মঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরপর বেলা ১২টায় এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সভার মূল কার্যক্রম।
১৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের ২০০ জনের ধারনক্ষমতা সম্পন্ন নৌকার আদলে নির্মিত মঞ্চের সামনে বড় গোল আকৃতির বোর্ডে লেখা ‘নৌকায় ভোট দিন’।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর — মিনিটের ভাষনে বলেন, স্বার্থপর মহল উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে গুজব ছড়ালেও বাংলাদেশে কোন খাদ্য সংকট নেই, এখনো ৩৪ মিলিয়ন ডলার ব্যাংকে রিজার্ভ আছে, ২ কোটি ৫৩ লক্ষ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে, শিক্ষাক্ষেত্রে গবেষনায় সহযোগিতা ও শিক্ষাকে বহুমুখীকরন করে যুগোপযুগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রনয়ন, পদ্মাসেতু, কর্নফুলী ট্যানেল, মেট্রোরেল, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ মেগা প্রজেক্টগুলোর বর্ননা দিয়ে আগামীতে ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের কাতারে সামিল করতে আগামীতে উন্নয়নের বাকি কাজগুলো আগামীতেও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য উপস্থিত লক্ষ লক্ষ জনতাকে দু’হাত তুলে ওয়াদা করান। তিনি আরো বলেন, দেশে এক কোটি কৃষকের এখন কৃষি একাউন্ট আছে, দুই কোটি কৃষকের কৃষি উপকরন কার্ড আছে। ৫৬০ টি উন্নত মডেল মসজিদ ও ইসলামী কালচারেল সেন্টার স্থাপনের মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগ সরকার ইসলামী সংস্কৃতি চর্চ্চাকে গুরুত্ব দিয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গনতান্ত্রিক ধারা চালু ছিল বলেই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটেও বাংলাদেশ সফলভাবে সংকট মোকাবেলায় সক্ষম হয়েছে বলে জানান তিনি। বিএনপি জনমত সৃষ্ঠিতে ব্যর্থ হয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে গুজব ছড়িয়ে দেশে বিদেশে দেশের বিরোদ্ধে সড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে জানান তিনি। কর্নফুলী ট্যানেলের কথা বলতে গিয়ে তিনি সাবেক নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আবেগপ্রবন হয়ে পড়েন। স্বাধিনতার পর সাড়ে ৩ বছরে একটি ধ্বংসস্তুপের দেশকে পুনর্গঠনে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা স্মরন করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “ঘাতকরা জাতীর পিতাকে সহ আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করার পর আমি এবং আমার বোনকে দেশে আসার পথ রুদ্ধ করতে চেয়েছিল,  কিন্তু ৬ বছর পর আমি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে দেশের মানুষকে ভালবেসে দেশের মানুষের জিবন মান পরিবর্তনে দেশে ফিরে এসে জাতীর ভাগ্য পরিবর্তনের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। আমার কিছুই নেই, আমি রিঃক্ত, নিঃস্ব, আপনারাই আমার পরিবার। আমার হুদয়েই আপনাদের সবার স্থান।”
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন তথ্য মন্ত্রী হাসান মাহমুদ, খাদ্য মন্ত্রী ডঃ আব্দুর রাজ্জাক, ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন,  নগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সহ সভাপতি নঈম উদ্দিন আহমদ, সহ সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, কেন্দ্রীয ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহারুল ইসলাম চৌধুরীসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
৪৫ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS