শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
লঞ্চের টিকিট কালোবাজারে, যাত্রীদের ভোগান্তি

লঞ্চের টিকিট কালোবাজারে, যাত্রীদের ভোগান্তি

লঞ্চের টিকিট বিক্রির সরকারি নির্দেশনা মানছে না মালিক পক্ষ। টিকিট বিক্রিতে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক বলা হলেও এনআইডি ছাড়াই মিলছে টিকিট। কাউন্টারে পর্যাপ্ত টিকিট না থাকলেও কালোবাজারে টিকিট বিক্রি হচ্ছে অধিক মূল্যে। ঈদ উপলক্ষে স্পেশাল সার্ভিসের লঞ্চগুলোর রাখা হয়নি নির্দিষ্ট শিডিউল। সব মিলিয়ে ভোগান্তিতে যাত্রীরা।

বৃহস্পতিবার সদরঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যাত্রী উপস্থিতি পরিমিত হলেও অধিকাংশ লঞ্চেই কেবিনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। যাত্রীরা লঞ্চের এক কাউন্টার থেকে আরেক কাউন্টার ঘুরে হতাশ। যাত্রীদের অভিযোগ, গত ২০ এপ্রিল থেকে লঞ্চের অগ্রিম টিকিট ছাড়ার কথা থাকলেও সদরঘাটে এসে টিকিট না পেয়েই ফেরত গেছেন অনেকে। ফলে অগ্রিম টিকিট নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। কাউন্টার থেকে নির্দিষ্ট করে তাদের কিছু বলা না হলেও কালোবাজারিতে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে টিকিট। একাধিক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের আগে বরিশাল থেকে ঢাকার টিকিট বিক্রি করা হয়। এতে টিকিট বিক্রি হয় কম।

বাকি টিকিট মজুত রেখে ঈদের কয়েক দিন আগে কালোবাজারিতে বেশি দামে বিক্রি হয়। যাত্রীর চাপ বাড়লেই বরিশাল থেকে টিকিট বিক্রির কথা বলা হয়। কিন্তু লঞ্চের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই বেশি দামে এসব টিকিট বিক্রি করেন। আশিক নামে এক যাত্রী বলেন, বরিশালে যাওয়ার জন্য ২৮ তারিখের টিকিট পেতে গত ২৩ তারিখ এসেছিলাম। কোনও কাউন্টারেই টিকিট পাইনি। তারা নির্দিষ্ট করেও কিছু বলে না। কেউ কেউ বলেছে দিনের টিকিট দিনে পাওয়া যাবে। কিন্তু বাইরে এসে দেখি বাড়তি দামে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। জানা গেছে, সদরঘাট থেকে পটুয়াখালী ও সদরঘাট থেকে বরিশালগামী কুয়াকাটা-১ ও ২ লঞ্চ দুটিতেই ঈদের আগের কয়েক দিনের কোনও টিকিট নেই।

দূরপাল্লার অন্য লঞ্চগুলোতেও একই অবস্থা। কুয়াকাটা-২ লঞ্চের করণিকের দাবি, তারা ঈদের টিকিট আগেই বিক্রি শুরু করেছেন, তাই ২৮ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত কোনও টিকিট নেই তাদের। লঞ্চ কর্মকর্তাদের দাবি, অনলাইনে টিকিট বিক্রির কারণে কাউন্টারে টিকিটের ঘাটতি আছে। তবে যাত্রীরা বলছেন অনলাইন শুধু কেবিনের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। অনেক লঞ্চের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া নেওয়ারও অভিযোগ যাত্রীদের। ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি সুরভী তিনটি লঞ্চেই সিঙ্গেল কেবিনে ১০০ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দেড় হাজার টাকা, ডাবল কেবিনে ২০০ টাকা বাড়িয়ে ২৬০০ টাকা, ডেকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৪০০ টাকা ও ভিআইপি হাজার টাকা বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা করা হয়েছে দাবি যাত্রীদের। তবে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি সুরভী লঞ্চের মালিক, স্টাফ বা কোনও কর্মকর্তা।

এছাড়াও বিভিন্ন লঞ্চে সোফা সিট ৭০০ থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন সিট ১৪০০ থেকে ১৫০০, ডাবল কেবিন সিট ২৪০০ থেকে ২৬০০, ফ্যামিলি কেবিন ৩০০০ থেকে ৩৫০০, ভিআইপি কেবিন ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। ঈদ উপলক্ষে নিয়মিত লঞ্চগুলোর পাশাপাশি স্পেশাল সার্ভিস হিসেবে অতিরিক্ত লঞ্চ নামানোর কথা থাকলেও নেই লঞ্চগুলোর নির্দিষ্ট কোনও শিডিউল, নেই টিকিট নিয়েও পরিকল্পনা। কয়েকটি লঞ্চের একাধিক স্টাফের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালিক পক্ষ থেকে আগেভাগে জানানো হবে তাদের। তখনই ছাড়া হবে লঞ্চগুলোর টিকিট।

যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক শেখ মো. সেলিম রেজা বলেন, টিকিট কালোবাজারি হলে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টিকিট বিক্রির সময় এনআইডি যাচাইয়ের বিষয়ে মালিকদের বলা হয়েছে। আমরা আবারও তাদের বলবো। স্পেশাল সার্ভিসের বিষয়ে তিনি বলেন, যাত্রীর চাহিদার ওপর নির্ভর করে স্পেশাল সার্ভিস দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি আমরা। যাত্রীর চাপ যখন হবে, তখন তারা স্পেশালের টিকিট ছাড়বে।

স্পেশাল লঞ্চ যখন আসবে তখনই লঞ্চের কেবিনগুলো তারা বিক্রি করবে। সদরঘাট নৌ থানার ওসি কাইয়ুম আলী সরদার বলেন, ঈদ উপলক্ষে বাড়তি চাপ সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। সাদা পোশাকেও আমাদের পুলিশ সদস্যরা আছেন। পেট্রোলিং, কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে। টিকিট কালোবাজারি প্রসঙ্গে লঞ্চ মালিক সমিতি মহাসচিব শহীদুল ইসলাম ভূইঞা জানান, লঞ্চ মালিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব লঞ্চ প্রস্তুত করে দেওয়া, আমরা দিয়েছি। বাকি দায়িত্ব স্টাফদের। যদি লঞ্চের কোনও স্টাফের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাই তাহলে শাস্তির ব্যবস্থা করবো। তবে অনেকেই নিজের নামে একাধিক টিকিট কিনে বিক্রি করেন, এটা আমরা কীভাবে ঠেকাবো?

১১৪ বার ভিউ হয়েছে
0Shares