বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তানোরে রহমান হিমাগারে টনের টন পচা আলু জঙ্গলে কপালে ভাজ কৃষকদের

তানোরে রহমান হিমাগারে টনের টন পচা আলু জঙ্গলে কপালে ভাজ কৃষকদের

তানোর প্রতিনিধি : রাজশাহীর তানোরে রহমান পটেটো – হিমাগার দুটিতে ধারন ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত আলু রাখার কারনে টনের টন পচা আলু রাতের আধারে জঙ্গলে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা ধারন ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুন বেশি আলু রাখার কারনে এত আলু পচেছে বলেও নিশ্চিত করেন চাষীরা। হিমাগার থেকে ব্যাপকহারে বের হচ্ছে পচা আলু। প্রায় পনেরদিন ধরে ট্রাকের ট্রাক আলু বিক্রি হচ্ছে। সেই সাথে ট্রাকের ট্রাক পচা আলু ফেলছেল হিমাগারের দক্ষিনে পতিত জঙ্গল ও পানিতে। পচা আলুর চরম দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ ওই রাস্তা দিয়ে কর্তাবাবুরা নিয়মিত যাতাযাত করলেও কোন কিছুই বুঝতে পারেন না। কিন্তু পথচারীরা পচা আলুর দুর্গন্ধে অথিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। এতে করে হিমাগারে আলু রাখা চাষীরা সর্বশান্ত হয়ে পড়ছেন। শুধু পচায় না বস্তা প্রতি ১০-১৫ কেজি করে আলু চুরি করা হয়েছে বলেও অহরহ অভিযোগ।
জানা গেছে, গত মৌসুমে উপজেলায় আলুর বাম্পার ফলন হয়। বিভাগের মধ্যে উপজেলায় ব্যাপকহারে চাষ হয় আলু। আলু উত্তোলন ও বিক্রির সময় হিমাগার কর্তৃপক্ষের দাপটে অসহায় হয়ে পড়ে কৃষকরা। আবার কোন কৃষক তাদের বিরুদ্ধে কথা এবং ক্ষতিপুরন চাইলে তার সমস্ত আলুর সর্বনাশ। এজন্য কৃষকরা ঘটনা বললেও নাম ব্যবহার করতে অনুরোধ করেন। নচেৎ ওই কৃষকের জন্য হিমাগার নিষিদ্ধ হয়ে যায়। যার কারনে বেপরোয়া অনিয়ম দূর্নীতি করলেও নিরবে থাকতে হয় পা ফাটা কৃষকদের।
গত ২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে দেখা যায়, তানোর টু মুন্ডুমালা রাস্তার আড়াদিঘি মোড়ের পূর্বে মুল রাস্তার উত্তরে রহমান গ্রুপের রহমান পটেটো ২ হিমাগারের ভিতরে ট্রলিতে করে পচা আলু তুলছেন। ট্রলিতে তুলে হিমাগারের বা মুল রাস্তার দক্ষিণে গভীর নলকুপ সংলগ্ন বিশাল জায়গা পতিত অবস্থায় দীর্ঘ দিন ধরে পড়ে রয়েছে। সেখানে ট্রলিতে করে পচা আলু ফেলা হচ্ছে। যেখানে আলু ফেলা হচ্ছিল সেখানে কিছু ছেলে পাখি মারার জন্য পচা আলুর উপরে ফাদ পেতেছেন। তারা বলেন এখানে অল্প পচা আলু, সামনে অনেক পচা আলু ফেলেছে। তাদের কথামত ভিতরে গিয়ে শুধু পচা আর পচা আলুর স্তুুপ। টনের টন পচা আলুর স্তুপ। পচা আলু কাদা পানি ও ঘাসে একাকার হয়ে পড়েছে। সেখানে একজন ঘাস কাটছিলেন তিনিও জানান পুরো জঙ্গল ও পানিতে পচা আলু। এখানে আসায় যায় না, এতই দুর্গন্ধ।
কৃষকরা জানান, তানোর টু মুন্ডুমালা রাস্তার দেবিপুর মোড়ের পশ্চিমে ও আড়াদিঘি মোড়ের পুর্ব দিকে রহমান গ্রুপের দুটি হিমাগার তিন ফসলি কৃষি জমির শ্রেনী পরিবর্তন না করে প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পরের বছর থেকেই শুরু হয় হিমাগারের কারিশমা। তাদের একান্ত যাদুতে বস্তা থেকে চুরি হচ্ছে এবং পচে একাকার হয়ে পড়ছে আলু। তারা এবার অধিক লাভের আসায় ধারন ক্ষমতার চেয়ে বেশি আলু রাখেন যত্রতত্র ভাবে। বেশি রাখার কারনে মেশিনে কাজ করতে পারেনি। অথচ তাদের মেশিন সব হিমাগারের চাইতে নাকি উন্নত। তাহলে আলু পচলো কেন আর চুরি হল কেন। যারা আলু উৎপাদন করেন তারাই জানেন কি পরিমান অর্থ শ্রম ও ঝুকি থাকে। হিমাগারে রাখা হয় নিরাপদ ও ভালো থাকবে বলে।  কিন্তু নাম রহমান হলে কি হবে তাদের প্রচুর বে রহমানী কার্যক্রমের জন্য আলুর এই করুন অবস্থা।
হিমাগারে আলু রাখা একজন চাষী জানান, ৭০ কেজির বস্তা রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখন ৪০- ৪৫ কেজি করে মিলছে না, আবার অনেকের তার চেয়েও কম। তারা তো ভাড়া কম নিবেন না। আবার তাদের পছন্দের ব্যবসায়ীকে না দিলে নানান কাহিনী। আসলে এদেরকে নিয়ন্ত্রণ কেউ করেন না, তারা ইচ্ছেমত সবকিছু করে যাচ্ছেন দাপটের সাথে। বস্তা প্রতি নিম্মে হলেও ২০০ টাকা করে লোকসান গুনতে হবে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি শিল্পপতি লুৎফর রহমান, তিনিই রহমান গ্রুপের মালিক। তার রয়েছে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঢাকা রুটে চলে ন্যাশনাল ট্রাভেল নামের বাস। এই বাসে কয়েকবার হেরোইন ফেন্সিডিলি পাচারের সময় বিভিন্ন জায়গায় আটক হয়েছে। অবশ্য লুৎফর রহমান তানোরের হিমাগারে তেমন ভাবে আসেন না। দেখভাল করেন তার ভাই ফজলুর রহমান। তিনি হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। লুৎফর রহমান বিএনপির অর্থদাতা ও দলের শিল্পপতি হিসেবে পরিচিত। তাদের প্রতিষ্ঠানের এমন করুন অবস্হা ও পচা আলুর ভিডিও প্রকাশ পেলেও কোন গুরুত্ব নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে। রহমান হিমাগার -২ এর এজিএম আব্দুল হালিমের সাথে কথা বলতে হিমাগারে গেলে তিনি ভিতরের বিশাল গরুর খামারের কাছে ছিলেন, তার কাছে পচা আলুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমরা চাষিরা বুঝব, অত মাথা ঘামানোর দরকার নেই, নইলে সমস্যা হবে।
শুধু এই হিমাগারেই না রাজশাহীর বিভিন্ন হিমাগারে আলু পচেছে। যা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করলে তিনি বলেন কোন ভিডি ফুটেজ থাকলে দেন, অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইউএনওকে শনিবারে পুনরায় বলা হয় ভিডিও দেওয়া হয়েছে, তিনি জানান আমি দেখার সময় পায়নি, দেখে বলেন দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।
৪৯ বার ভিউ হয়েছে
0Shares