শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
উখিয়ায় রোহিঙ্গা ঢলের ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে গণহত্যা দিবসের সমাবেশ অনুষ্ঠিত :  নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা 

উখিয়ায় রোহিঙ্গা ঢলের ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে গণহত্যা দিবসের সমাবেশ অনুষ্ঠিত : নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা 

কায়সার হামিদ মানিক,স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার।  মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা হত্যা,ধর্ষণ, দমন-পীড়নের ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে বৃহস্পতিবার।আর সেই দিনটিকে রোহিঙ্গারা কালো দিবস আখ্যা দিয়ে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন।
 এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে উখিয়ার,কুতুপালং,লম্বাশিয়া,বালুখালী,মধুরছড়া,থাইংখালী, পালংখালী,জামতলী তাজনিমার খোলা ময়নার ঘোনাসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে,রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘হোপ ইজ হোম’ ক্যাম্পেইন পালন করেছেন রোহিঙ্গারা।
সরেজমিনে কুতুপালং,লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেখা যায়, ‘হোপ ইজ হোম’ ক্যাম্পেইন উপলক্ষে আশপাশের ক্যাম্প থেকে সকাল থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা খেলার মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন। ক্যাম্পেইন সমাবেশে পুরুষদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারী, শিশুরাও যোগ দেন। পোস্টার, প্ল্যাকার্ডে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলেন।
রোহিঙ্গা ঢলের ৫ বছরে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবসের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার শোয়াইব, মাস্টার নুরুল আমিন, মাস্টার জুবায়ের, মোহাম্মদ ইউসুফ, মাস্টার কামাল প্রমুখ।
সমাবেশে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘আজকে ‘গণহত্যা’ দিবসে পালন করেছি। কারণ এইদিনে মিয়ানমার জান্ত সরকার আমাদের উপর ‘গণহত্যা’ চালিয়েছিল। আমরা রিফুজি হয়ে বাংলাদেশে আর থাকতে চায় না। আমরা আমাদের দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চায়। জান্ত সরকার আমাদের নিধন করতে ৫ বার বিতাড়িত করেছে মিয়ানমার থেকে। প্রতিবারই মানবিক বাংলাদেশ আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণকে ধন্যবাদ জানায়।
পরে দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য দোয়া করেন রোহিঙ্গারা।ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আমির জাফর বলেন, ‘ক্যাম্পে শান্তিপূর্ণভাবে ‘রোহিঙ্গাদের জেনোসাইড রিমেম্বার ড’ কর্মসূচি শেষ হয়েছে। ক্যাম্পে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলের মংডু, বুচিথং ও রাসেথং জেলার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। সে সময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া -টেকনাফের পাহাড়ে এসে আশ্রয় নেয়। ওই দিনটিকে স্মরণে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা ‘রোহিঙ্গা জেনোসাইড রিমেম্বার ডে’ পালন করে আসছে।
জানা গেছে, রোহিঙ্গা ‘গণহত্যা’র পাঁচ বছর পূর্তির উপলক্ষ্যে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত ১, ৩, ৫, ৭, ৯, ১২, ১৩, ৮, ১৯, ২০, নম্বর ক্যাম্পসহ ২২ জায়গায় (বৃহস্পতিবার) একসঙ্গে পৃথকভাবে দিবসটি পালন করেন। তাঁরা সেখানে মিয়ানমারে গণহত্যার বিচার, দ্রুত প্রত্যাবাসনসহ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো- মিয়ানমারে পার্লামেন্টে রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি, সীমিত সময় রাখা যাবে মিয়ানমার ট্রানজিট ক্যাম্পে, সকল রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করতে হবে, সেফজোন, নিজস্ব সহায়-সম্বল ফেরত, প্রত্যাবাসনের সময় বেঁধে দেওয়া, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, এক বারে গ্রামের সব মানুষকে প্রত্যাবাসন করা, রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসেবে উত্থাপন না করা। এছাড়া প্রত্যাবাসনে প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ওআইসি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, বাংলাদেশসহ দাতা সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোঃ কামরান হোসেন বলেন, তার অধিনে ১১ টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে হোপ ইজ হোম’ ক্যাম্পেইন পালন করেছেন রোহিঙ্গারা।
৭৫ বার ভিউ হয়েছে
0Shares