![পাথর অপসারন সার্জারীতে নার্ভ কেটে ফেলায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ৩ সন্তানের জননী সুফিয়া পাথর অপসারন সার্জারীতে নার্ভ কেটে ফেলায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ৩ সন্তানের জননী সুফিয়া](https://spnewsbd.com/wp-content/uploads/2022/12/20221217_171925_2.jpg)
পাথর অপসারন সার্জারীতে নার্ভ কেটে ফেলায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ৩ সন্তানের জননী সুফিয়া
![](https://spnewsbd.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
কলমাকান্দা(নেত্রকোনা) প্রতিনিধি: পাথর অপসারন সার্জারীতে নার্ভ কেটে ফেলায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তিন সন্তনের জননী নেত্রকোনা কলমাকান্দা উপজেলার লেংঙরা ইউনিয়নের উদাপাড়া গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার স্ত্রী সুফিয়া খাতুন (২৫) । ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের ডা. এ.কে.এম খাইরুজ্জামান চৌধুরী বেসরকারি হাসপাতাল ‘এভারকেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনো কমপ্লেক্সে’ পাথর অপসারনের সার্জারী করার সময় সুফিয়ার খাতুনের নার্ভ কেটে ফেলেন। দিন দিন অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা বারডেম হাসপাতালে নেওয়া হলে নার্ভ কাটার বিষয়টি ধরা পড়ে।
সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট ডা. এ.কে.এম খাইরুজ্জামান চৌধুরী ও বেসরকারি হাসপাতাল ‘এভারকেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনো কমপ্লেক্সে এর উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে আইনি আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও আর্থিক ক্ষতিপূরণের জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর স্বামী সিদ্দিক মিয়াসহ এলাকাবাসী ।
এবিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মহাখালী, ঢাকা মহাপরিচালক ও পরিচালক (প্রশাসন), নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন, কলমাকান্দার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা , স্থানীয় ও জেলা এবং বিভাগীয় প্রেসক্লাবে অনুলিপিসহ শনিবার ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন এর বরাবর ডাকযোগে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে ও ভুক্তভোগী পরিববারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিন সন্তানের জননী সুফিয়া খাতুন আজ থেকে প্রায় তিন মাস আগে অসুস্থবোধ করলে লেংঙরায় প্রাইভেট চিকিৎসক ইমরান কাদের রুবেল এর পরামর্শে স্থানীয় রেজিয়া রহমান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর পর তার পিত্তথলীতে পাথর ধরা পড়ে। পরবর্তীতে পিত্তথলীতে পাথর আছে কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সিদ্দিক মিয়া তার অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে ময়মনসিংহ শহরে যান। সেখানে গিয়ে তিনি মৌ শফি হাসপাতালের চিকিৎসক সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা. মো. শফিকুল ইসলামের নিকট শরণাপন্ন হন । পরে নিশ্চিত হওয়ার জন্য মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারে আবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর পর পিত্তথলীতে পাথর রয়েছে। তিনি অপারেশন লাগবে বলে জানান। পরবর্তীতে স্থানীয় একজনের পরামর্শে তৃতীয় বারের সময় ময়মনসিংহ বেসরকারি হাসপাতাল ‘এভারকেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনো কমপ্লেক্সে’ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের ডা. এ.কে.এম খাইরুজ্জামান চৌধুরীর নিকট
শরণাপন্ন হন । পরে তিনি আবার ওই হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাম করান এবং পিত্তথলীতে পাথর থাকা বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে দ্রুত অপারেশন করাতে বলেন। পরে স্বামী সিদ্দিক মিয়া চুক্তিতে ‘এভারকেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনো কমপ্লেক্সে’ ২৬ সেপ্টেম্বর-২০২২ তারিখে ডা. এ.কে.এম খাইরুজ্জামান চৌধুরী সুফিয়ার অপারেশন সম্পন্ন করেন। তিনদিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেন। পরে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ীতে চলে আসেন সিদ্দিক । বাড়ীতে আসার পর দিন দিন অবস্থার অবনতি হলে সাতদিন পর আবার ময়মনসিংহ এভারকেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনো কমপ্লেক্সে’ ডা. এ.কে.এম খাইরুজ্জামান চৌধুরীর নিকট যান। তখন আবার আল্ট্রাসনোগ্রামসহ পরীক্ষা- নিরীক্ষা শেষে কৃমি কথা বলে কিছু ঔষধ পত্র লিখে দেন তিনি । পরে বাড়িতে চলে আসেন। কৃমির ঔষধসহ খাওয়ানোর পর উন্নতি না হয়ে দিন দিন অবস্থার আরো অবনতি হয় সুফিয়ার।
পরবর্তীকে উন্নতি না হওয়ায় ময়মনসিংহ শহরে ডা. ফখরুজ্জামান ও ডা. মো. শফিকুল ইসলামের নিকট শরণাপন্ন হলে পরীক্ষা- নিরীক্ষা শেষে সুফিয়াকে বাঁচানোর জন্য দ্রুত ঢাকা বারডেম হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বলেন ডাক্তারগন। পরে ওইদিন রাতেই সুফিয়াকে নিয়ে যান ঢাকার ওই হাসপাতালে। ওখানে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ১৪ দিন বেডে থেকে এমআরসিপি রির্পোট করার পর অপারেশন করানো হয় সুফিয়ার । ওই সময় ধরা পড়ে যে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের ডা. এ.কে.এম খাইরুজ্জামান চৌধুরী বেসরকারি হাসপাতাল ‘এভারকেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনো কমপ্লেক্সে’ পাথর অপসারনের সার্জারীর সময় সুফিয়া খাতুনের নার্ভ কেটে ফেলেছেন বলে জানতে পারেন সিদ্দিক মিয়া। ঢাকা বারডেম হাসপাতালে ২৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ছাড়পত্র দিয়ে বলা হয়েছে একমাস পর চেক-আপ করতে হবে বারডেম হাসপাতাল ও ছয় মাস পর অপারেশন করে নার্ভে সংযুক্ত টিউবটি বের করতে হবে। পরে রোগীকে নিয়ে বাড়ীতে চলে আসেন। ওই ডাক্তারের খামখেয়ালিপনায় পাথর অপসারন সার্জারীতে নার্ভ কেটে ফেলা ও চিকিৎসার কারণে তিন সন্তানের জননী সুফিয়া খাতুন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়েছেন। এতে করে আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সিদ্দিক মিয়া । এখন ২৪ শতাংশ ফসলি জমি বিক্রি করে অনেকটা নিঃস্ব হওয়ার পথে তিনি । রোগীর পিছনে প্রতিদিন প্রায় ৫০০০/= টাকা খরচ হচ্ছে তার । সে সংসার চালাবে নাকি রোগীর চিকিৎসা করাবে ? এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সিদ্দিক মিয়া।
ভুক্তভোগীর স্বামী সিদ্দিক মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের ডা. এ.কে.এম খাইরুজ্জামান চৌধুরী ও বেসরকারি হাসপাতাল ‘এভারকেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনো কমপ্লেক্সে এর উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি ।
আপনি দায়ভার এড়াতে পারেন না এমন প্রশ্নের জবাবে ময়মনসিংহ এভারকেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনো কমপ্লেক্সে এর চেয়ারম্যান শিপন আকন্দ তিনি প্রতিবেদককে বলেন,আমার এখানে যেহেতু চিকিৎসা হইছে প্রথম। দ্বিতীয় বার আমার প্রাইভেট হাসপাতালে না এসে অন্য ডাক্তারের পরামর্শে ঢাকা বারডেম হাসপাতালে গেছে। এখানে আমার করার কি আছে বলে ফোন কেটে দেন তিনি।
এবিষয়ে অভিযুক্ত ডা. এ.কে.এম খাইরুজ্জামান চৌধুরী এর নিকট জানার জন্য তার ব্যবহৃত 01825908828 এ নাম্বার একাধিকবার চেষ্টা করেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা: নজরুল ইসলাম তিনি প্রতিবেদককে বলেন, এখনো লিখিত অভিযোগ পাননি। অভিযোগটি পাওয়ার পর দেখে তদন্ত করার প্রয়োজন হলে বিষয়টি দেখা হবে বলে জানান তিনি ।