স্বাবলম্বী নারী উদ্যোক্তা ইসরাত জাহান


দশমিনা(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি।। সততা, কর্মোদ্যোগ ও কর্মস্পৃহা থাকলে চাকরি না করেও স্বাবলম্বী হওয়া যায়। এই দৃষ্টান্তই স্থাপন করলেন বরিশাল বিএম কলেজ থেকে রসায়ন বিভাগের অনার্স করা তরুণ শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান(২৩)। তিনি পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দশমিনা গ্রামের গাজী শিহাবের সহধর্মিণী। ২০২১ সালে পরিবারে স্বাচ্ছন্দ্য আনার প্রয়োজনে নিজ হাতে বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানের কেক বানিয়ে তা বাজারজাত করা শুরু করেন।
জানা যায়, প্রথম পর্যায়ে কেক তৈরি ও সরবরাহের বিষয়ে ইসরাত জাহান ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেন। সেই বিজ্ঞপ্তির সুবাদে শুরু হয় অর্ডার পাওয়া। ধীরে ধীরে অর্ডারের পরিমাণ বাড়তে থাকে। সেইসঙ্গে বাড়তে থাকে তাঁর কর্মব্যস্ততা। এক সময় গড়ে প্রতিদিন তিন-চারটা কেকের অর্ডার পেলেও এখন পাচ্ছেন ১৫ থেকে ১৮টির অর্ডার। এই কাজ তাঁকে শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্য যেমন দিচ্ছে, তেমনি প্রতি মাসে টাকা রোজগারের পথও খুলে দিয়েছে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক দপ্তর থেকে ক্ষুদ্র ঋন ৭৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করে আজ তিনি প্রতি মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকার কেক সরবরাহ করছেন। মাসে ১৫থেকে ১৮ হাজার টাকা আয় করছেন। শহরে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন।
ইসরাত জাহান জানান, প্রথম দিকে তাঁর দু’একজন বান্ধবীর কাছ থেকে তিনি এই কাজের অনুপ্রেরণা লাভ করেন। কাজে নেমে এখন তিনি খুবই আনন্দ ও উৎসাহবোধ করছেন। তিনি বলেন, ‘চাকরিই জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। চাকরি না করেও উদ্যোক্তা হয়ে চাকরির চেয়ে বেশি আয় করা সম্ভব, যেটি আমি করছি। ইতোমধ্যে ইসরাত জাহান ‘চকো কেক শপ” নামের একটি ফেসবুক পেজ খুলেছেন। এই পেজের কারণেও তাঁর ব্যবসার প্রচুর প্রসার ঘটছে। ইসরাত আরো জানান, একটি সুদৃশ্য ও দৃষ্টিনন্দন কেক তৈরি করতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। ডিম, ময়দা, চিনি, ফুডকালার, বাটার, ক্রিম ও বিভিন্ন সুগন্ধি কেকে ব্যবহার করতে হয়। একটি কেকে কোন উপাদান কতটুকু লাগবে, তা জানা না থাকলে ভালো ও মজাদার কেক তৈরি করা সম্ভব নয়। কাজে অধৈর্য ও তড়িঘড়ি করাও ঠিক হবে না। কাজের সময় স্থির মানসিকতায় ধৈর্যসহ মনোযোগ দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘যাঁরা এই স্ব-উদ্যোগী কাজে নিয়োজিত হয়ে অর্থ উপার্জন করতে চান, তাঁদের হতোদ্যম হলে চলবে না। সততার সঙ্গে পরিশ্রম করতে হবে এবং উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। তবেই তিনি সফল উদ্যোক্তা হতে পারবেন।’ আমার এ কাজে বর্তমানে তিন জন নারী কাজ করে তাদের সংসার চালাচ্ছেন।
এবিষয়ে ইসরাত জাহানের স্বামী গাজী শিহাব জানান, ইসরাত জাহানের উদ্যোক্তা হওয়ার এই চেষ্টাকে আমি সবসময়ই সমর্থন করেছি। ওর মতো অন্য মেয়েরাও অবসর সময়ে এসব কাজে মনোনিবেশ করলে তাঁদের সংসারেও আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য আসবে।
দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. মিঠুন চন্দ্র বলেন, ‘আমি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জানতে পেরে আমার সহধর্মিণীর জন্মদিনের জন্য দুই পাউন্ডের একটি কেক তৈরি করতে অর্ডার করি। দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যময় সুগন্ধিমিশ্রিত চমৎকার কেকটি পেয়ে আমি অভিভূত হয়ে যাই। তাঁর তৈরি কেকের স্বাদও অসাধারণ। গুণগত মানসম্পন্ন কেক প্রস্তুতকারক হিসেবে এখন আমি প্রায়ই তাঁর কাছ থেকে কেক আনি। আমার দেখাদেখি পরিচিত অনেকেই তাঁর কেকের নিয়মিত গ্রাহক হয়েছেন।’
শহরের একাধিক কনফেকশনারির মালিক জানান, গ্রাহকের অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনে তাঁরা প্রায়ই ইসরাত জাহানের শরণাপন্ন হন। ইসরাত জাহান তাঁদের মানসম্পন্ন কেক সরবরাহ করেন। অনার্স ও মাস্টার্স পড়ূয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ইসরাত জাহান আপুর এই আয়বর্ধক উদ্যোগী কর্মকাণ্ড দেখে তাঁরাও ঘরে বসে কেক-শন্দেষ ইত্যাদি তৈরি ও সরবরাহ করে আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বললেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নের মূল জায়গা হচ্ছে তাঁর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা। ইসরাত জাহানের মতো আরও অনেক মেয়ে ঘরে বসে নারী উদ্যোক্তা হয়ে মাসে মাসে ভালো আয়-রোজগার করছেন। এটা আমাদের জাতীয় অর্থনীতির জন্যও একটি ইতিবাচক সুখবর। এ ধরনের উদ্যোক্তা নারীদের সরকারিভাবেও পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া প্রয়োজন।
১৬ বার ভিউ হয়েছে