শুক্রবার, ২রা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, English Version

সাপাহারের খরসতা  পুনর্ভবা নদী এখন দৌড়ঝাঁপ ও খেলার মাঠ।।

সাপাহারের খরসতা  পুনর্ভবা নদী এখন দৌড়ঝাঁপ ও খেলার মাঠ।।

তছলিম উদ্দীন,সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি: বৈশাখ পেরিয়ে জৈষ্ঠ আসন্নপ্রায় হলেও নওগাঁর সাপাহার উপজেলার সীমান্তবর্তী এক কালের খর¯্রতা পুনর্ভবা নদী এখন মরা খাল ও ছেলেদের দৌড়ঝাপ এবং খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বিকালে ওই সীমন্ত এলাকার ছেলেরা নদীগর্ভে নেমে পানিশূন্য শুকনো নদীতে বালির চরে দৌড়ঝাঁপ,ফুটবল ও ক্রিকেট খেলছে। গতমঙ্গলবার সরেজমিনে নদী দেখতে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা গেছে।
পুনর্ভবা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্ত:সীমান্ত নদী এটি বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের দিনাজপুর জেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার একটি নদী। নদীরটির দৈর্ঘ ২২৩কিলোমিটার ও গড় প্রস্ত ১০২মিটার, পুনর্ভবা নদীর প্রাচীন উৎস ব্রম্মনপুর বরেন্দ্র ভূমি।
অতিতে নদীটি তীব্র খর¯্রতা ও প্রায় সারাবছর নদীতে পানি প্রবহমান ছিল তখনকার দিনে নদী পাড়ের মানুষ ওই নদীর পানি দিয়ে মাঠে হরেক রকম ফসল ফলাদি উৎপাদন করত এবং চৈত্র বৈশাখ মাসে নদীর পানি কমে যাওয়ায় প্রতিবছর সীমন্ত এলাকার মানুষ ওই নদী হতে বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক মাছ শিকার করে থাকত। কালের বিবর্তনে সব কিছুই হারিয়ে গিয়ে বর্তমানে নদীটি দেখলে মনেই হবেনা যে এটি একটি খর¯্রতা নদী মনে হয় যেন বর্ষকালে পানি নি:ষ্কাশনের একটি খাল বা ক্যানেল।
সীমান্তবর্তী নদী এলাকার সাপাহার উপজেলার উত্তর পাতাড়ী গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি মতিউর রহমান, আব্দুল খালেক বিশ^াস ও আব্দুল্লাহ জানান যে, পাকিস্থান শাসনামলে কিংবা তারও পূর্ববর্তী সময়ে নদীটি সারাবছর প্রবহমান থাকত দেশের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন না থাকায় সারা বছর এই নদীর বুক চিলে নৌকা যোগে মানুষ বিভিন্ন হাটে গঞ্জে গিয়ে তাদের উৎপাদিত পণ্যমাগ্রী বিক্রি করে হাটবাজার করত, এমনকি মাঝে মধেই বাহারী বিয়ের নৌকার বহর ও চোখে পড়ত এই নদীতে। ভারত বাংলা বিভক্তের সময় ইন্দ্রা,মুজিব চুক্তি মোতাবেক এই নদীটি উভয় দেশের আন্ত:সীমানা চুক্তি হয়েছে বলে অনেকেই জানিয়েছেন। সে চুক্তি মোতাবেক নাকি নদীর মাঝখানে উভয় দেশের সীমানা, যখন যে অঞ্চল যে দিকে ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলিন হবে তখন সে অঞ্চল সেদেশের ভূখন্ড বলে বিবেচিত হবে এবং নদীর মাঝখানে সীমান্ত পিলার বলে ধরা হবে। পুনর্ভবা নদীটি উজানে ভারত থেকে নেমে এসে সাপাহার উপজেলার উত্তর পাতাড়ী গ্রামের কাবলীরঘাটে নেমে বাংলাদেশের আন্ত:সীমানা নদী হয়ে কলমুডাঙ্গা, পোরশার নিতপুর চাপাই নবাবগঞ্জের রোকনপুর হয়ে মহানন্দা নদীর মোহনায় মিলত হয়ে পদ্মা নদীতে পড়েছে।
এককালের খর¯্রতা এই নদীটি এখন তার অতীত যৌবন, ঐতিহ্য, সৌন্দর্য্য, গৌরব সব হারিয়ে এখন মরা খাল ও ছেলে মেয়েদের খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। এলাকার প্রবীন ব্যক্তি,ভবিষ্যত প্রজম্ম ও শিক্ষিত সমাজের সকল স্তরের মানুষের ধারণা ও দাবী নদীটি সরকারীভাবে নদীশাসন ও ড্রেজিং বা খনন করা হলে নদীটি আবারো তার পুন:যৌবন ফিরে পেত এবং সারা বছর ধরে প্রবাহমান থাকায় নদীর পাড়ের লোকজন ও হাজার হাজার হেক্টর জমিতে নদীর পানিতে সেচের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করত পারত। ফলে এক দিকে এলাকাবাসীর যেমন আয়ের পথ উম্মচিত হত অপর দিকে দেশের অর্থনৈতিক বাজারেও কিছুটা হলেও অর্থের প্রভাব পড়ত। তাই সাপাহারবাসী নদীটিকে নতুন করে নদীশাসনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক আয়ের উৎস ও এলাকাবাসীর জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন।

৭৬ বার ভিউ হয়েছে
0Shares