মঙ্গলবার- ১৮ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ভূ পৃষ্ট থেকে ১৩০০ মিটার গভীরে নিশ্চিন্তে নীদ্রাযাপন, রয়েছে ওয়াইফাই ও ৫জির সুবিধা

ভূ পৃষ্ট থেকে ১৩০০ মিটার গভীরে নিশ্চিন্তে নীদ্রাযাপন, রয়েছে ওয়াইফাই ও ৫জির সুবিধা

” ভূ পৃষ্ট থেকে ১৩০০ মিটার গভীরে নিশ্চিন্তে নীদ্রাযাপন, রয়েছে ওয়াইফাই ও ৫জির সুবিধা “

সারাদিনের কাজের শেষে দিনের ক্লান্তি কাটাতে গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন হতে চান? সম্পূর্ণ আধুনিকতায় গড়া এরকমই একটি সুন্দর ব্যবস্থা করেছে ওয়েলস সরকার কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ওয়েলসে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১,৩৭৫ ফুট বা ৪১৯ মিটার নীচে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী মানুষদের জন্য একটি বিলাসবহুল হোটেল খোলা হয়েছে। এটিকে বিশ্বের ‘গভীরতম হোটেল’ বলে বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি।

এটি আসলে স্নোডোনিয়া পাহাড়ের নীচে অবস্থিত একটি পাথরের পরিত্যক্ত খনি। সেই খনির মধ্যেই তৈরি করা হয়েছ এই অদ্ভুত ধরনের হোটেল। আবাসিকরা খনি তথা হোটেলটির মধ্যে রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা পাবেন। তবে মাটির অনেক নিচে এই হোটেলে পৌঁছনোর পথটা খুব একটা সহজ নয়। কয়েকশো বছর আগে খনিতে কাজ চলার সময় শ্রমিকরা মাটি-পাথর কেটে যে খাড়াই এবং কঠিন রাস্তা তৈরী করেছিলেন সেটি দিয়েই হোটেলে প্রবেশ করতে হবে। হোটেলটির নামটিও দারুন? ‘ ডিপ স্লিপ ’ বা ‘ গভীর ঘুম ’।

হোটেলটির বর্তমান নির্মাতারা অবশ্য এটিকে হোটেল না বলে ‘ রিমোট-ক্যাম্প অ্যাডভেঞ্চার এক্সপেরিয়েন্স ‘ বলতে বেশি আগ্রহী। বর্তমানে এই হোটেলে আধুনিক ঘরানার চারটি প্রাইভেট টুইন-বেড কেবিন এবং একটি ডবল বেড সহ ‘রোমান্টিক’ গ্রোটো রুম রয়েছে।

তবে সপ্তাহে শুধুমাত্র শনিবার রাতে এটি খোলা থাকে। আগ্রহী অতিথিদের প্রতি সপ্তাহের শনিবার বিকেল ৫ টার মধ্যে ব্লেনাউ এফফেস্টিনিয়োগ শহরের কাছে গো বেলোর বেসে আসতে হয়। সেখানে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করেন একজন দক্ষ গাইড। তিনিই অতিথিদের পথ দেখিয়ে এই হোটেলে নিয়ে যান।

হোটেলে যাওয়ার রাস্তাটি বেশ ঝক্কির।প্রথমে পাড়ি দিতে হয় ৪৫ মিনিটের চড়াই উৎরাই পাহাড়ি পথ। তারপর একটি কটেজে আগে থেকেই রেখে দেওয়া হেলমেট, টর্চ, বুটের মতো সাজ-সরঞ্জাম নিতে হয়। এরপর হোটেলের ওয়েবসাইট অনুযায়ী ‘বহির্বিশ্বকে বিদায় জানানোর এবং বিশ্বের বৃহত্তম এবং গভীরতম পরিত্যক্ত খনির গভীরে যাওয়ার সময়।’

পরিত্যক্ত এই খনিটির ইতিহাস থেকে জানতে পারা যায় আনুমানিক ১৮১০ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত খনিটিতে পাথর উত্তোলনের শ্রমিকেরা কাজ করতেন।আগত অতিথিদের সেই সময়ের শ্রমিকদের তৈরি করা সিঁড়ি, ক্ষয়ে যাওয়া সেতু, দড়ি বেয়ে নামতে হয় গভীরে।তাও আবার প্রায় এক ঘণ্টার পথ। হোটেলে নামতে নামতে খনিশ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কাহিনী বলেন সরকার থেকে নিয়োজিত উক্ত গাইড।

হোটেলের মূল প্রবেশদ্বারটি আসলে একটি বড় ইস্পাতের দরজা। হোটেলে ঢোকার পর অতিথিদের পানীয় দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। তারপর এতটা পথ আসার ক্লান্তি দূর করার জন্য হোটেলের পিকনিক টেবিলে খেতে দেওয়া হয়।

খাবার বলতে সাধারণত কোনও অভিযানে গেলে মানুষ যা সঙ্গে নিয়ে যায় সেই ধরনের খাবার। খাবার ও পানীয় গ্রহনের পর গভীর ঘুম দিতে পারেন অতিথিরা। সারা বছরই এই হোটেলের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা থাকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কক্ষগুলির দেওয়ালে পুরু শীত নিরোধক লাগানো থাকায় ঘরের ভিতরে ঢুকলেই আরাম পাওয়া যায়। কনকনে শীতের বদলে কক্ষের ভেতরে নাতিশীতোষ্ণ আরামদায়ক আবহাওয়া অনুভব করা যায়।

খনির বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য হোটেলটির সমস্ত বৈদ্যুতিক আলো কম-ভোল্টেজের এবং মাত্র ১২ ভোল্টের ব্যাটারি-চালিত। অর্থাৎ হোটেলের কক্ষে এবং অন্যান্য অংশে আলোআঁধারিতে ভরা এক পরিবেশ বিরাজ করে।

তবে মাটির এত গভীরে হলেও এখানে ওয়াইফাই এবং ৫জি সংযোগের সুবিধা পাওয়া যায়। আগত অতিথিদের কথা মাথায় রেখে এই সুবিধা প্রদানের জন্য ভূপৃষ্ঠে একটি ৫জি অ্যান্টেনা লাগিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে এক কিলোমিটার দীর্ঘ ইথারনেট তারের মাধ্যমে খনিত ওয়াইফাই সরবরাহ করা হয়েছে। এমনকি খনির ভিতর একটি ঝর্ণা থেকেও জল আসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। যাতে এখানে আসা অভিযাত্রীদের জলের কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে না হয়

(সংগৃহীত) মুসা।

৬০ বার ভিউ হয়েছে
0Shares