শুক্রবার- ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
<span class="entry-title-primary">জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে চরম হট্টগোল</span> <span class="entry-subtitle">ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গ নিয়ে</span>

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে চরম হট্টগোল ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গ নিয়ে

ইমা এলিস/ বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক; যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গ নিয়ে চরম হট্টগোল হয়েছে। স্থানীয় সময় শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের মিলনায়তনে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালে এ ঘটনাটি ঘটে। এ সময় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিকেলে নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেবার কথা বলা হলে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা অসন্তোষ প্রকাশ করে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তবে কনস্যুলেটের অনুষ্ঠানে কোন হট্টগোল হয়নি বলে জানিয়েছেন নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট। মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে অসন্তোষ ও হট্টগোলের বিষয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে যোগাযোগ করা হলে কর্তৃপক্ষ কোন সদুত্তর দেননি। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে রেখেছে। কোন অনুষ্ঠানেই আসল মুক্তিযোদ্ধারা কথা বলার তেমন কোন সুযোগ পান না। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে বাক-বিতন্ডা ও হট্টগোল দেখা দেয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রায় ১৫/১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন বলা জানা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
বিকেল সাড়ে ছয়টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। আলোচনা পর্ব শুরুর আগে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্ম-উৎসর্গকারী বীর শহীদগণের স্মরণে একমিনিট নিরবতা পালন ও তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। এর পর উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তাঁরা তাঁদের অর্জিত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্পসমূহের বাস্তবায়নে স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আগত অতিথিদের আলোচনা শেষে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতাসহ ১৫ আগস্টের শাহাদৎবরণকারী জাতির পিতার পরিবারের সকল সদস্য, জাতীয় চার নেতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুইলাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে রূপকল্প ২০২১, রূপকল্প ২০৪১ ও ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ইতোমধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটেগরি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছি যা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের মর্যাদা ও সক্ষমতার স্বাক্ষর। বিগত কয়েক বছরে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন, মেট্রো রেল ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল নির্মাণসহ নানাবিধ মেগা প্রজেক্টের বাস্তবায়ন আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার অন্যতম নির্দেশক। বাংলাদেশ আজ ৩৫ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।’
দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যের প্রসংগ টেনে রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দারিদ্যের হার ২০২২ সালে কমে হয়েছে ৫ শতাংশ যা ২০১০ সালে ছিল ১১.২ শতাংশ। রাষ্ট্র হিসেবে সামষ্টিক অর্থনীতিতে  সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সকলের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতকরনে দিয়েছেন বিশেষ অগ্রাধিকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্পের মত উদ্যোগ আজ জাতিসংঘের রেজ্যুলেশনে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এছাড়া অতিমারি কোভিড-১৯ এর ধাক্কা এবং তদ্‌পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবে যখন পৃথিবীর সকল দেশ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন, অর্থনীতির এমন প্রতিকূল সময়েও বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক অনেক সূচকে প্রতিবেশি দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে আছে।
প্রবাসী বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জনবহুল বাংলাদেশের প্রধান শক্তি তাঁর জনগণ আর প্রবাসীরা দেশের মায়া পেছনে ফেলে রাত দিন কষ্ট করে বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অন্যতম চালিকাশক্তি। এ প্রসঙ্গে তিনি বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের আহ্বান জানান। প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদানের পাশাপাশি আপনাদের দেশের সংস্কৃতি ও দেশের ইতিহাসকে লালন করতে হবে যাতে বিদেশে জন্মানো এবং বড় হওয়া আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন এই সংস্কৃতিকে ধারণ করে আর প্রকৃত ইতিহাস জেনে বড় হয়। আমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন, যে দেশেরই নাগরিক হই না কেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে বাঙ্গালী সংস্কৃতির লালন করে যাব, মহান বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠানে আজ এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
আলোচনা পর্ব শেষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা করেন স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ।
এর আগে বিকেলে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়। জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। কনসাল জেনারেল মোঃ নাজমুল হুদা উপস্থিত অতিথিবৃন্দসহ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ই আগস্টের সকল শহিদ, ৭১-এর সকল শহিদ, জাতীয় চার নেতা ও শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রেরিত মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।
কনসাল জেনারেল তাঁর বক্তব্যের শুরুতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন ত্রিশ লক্ষ শহিদ ও দুই লক্ষ মা-বোনদের অপরিসীম আত্মত্যাগের কথা।
তিনি বলেন, জাতির পিতা একটি সুখী, সমৃদ্ধ, শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন যা বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। তিনি নতুন প্রজন্মের মাঝে জাতির পিতার আদর্শ ও দর্শন এবং  স্বাধীনতার ইতিহাস ও গৌরবগাঁথা তুলে ধরার জন্য সকলকে আহবান জানান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশে চলমান উন্নয়নের বর্তমান ধারাকে আরো সুসংহত ও বেগবান করতে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী ভাইবোনসহ সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে মূল্যবান ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানান কনসাল জেনারেল। উন্মুক্ত আলোচনায় নিউইয়র্ক এ্যাসেম্বলী মেম্বার ক্যাটালিনা ক্রুজ বীরমুক্তিযোদ্ধাগণ এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল শহিদ সদস্য, ৭১-এর সকল শহিদ, শহিদ বুদ্ধিজীবী এবং শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। পরে কমিউনিটির শিল্পীদের দ্বারা মনোজ্ঞ এক সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
২৩ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS