শুক্রবার- ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বড়পুকুরিয়ার কয়লা উৎপাদন বন্ধ, সংকটে পড়তে পারে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

বড়পুকুরিয়ার কয়লা উৎপাদন বন্ধ, সংকটে পড়তে পারে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

মোঃ আফজাল হোসেন, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ফেস পরিবর্তন হওয়ার কারণে সময়িক কয়লা উৎপাদন বন্ধ, সংকটে পড়তে পারে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

দেশের উত্তর অঞ্চলের ও বাংলাদেশের একমাত্র সল্পমাপের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি। ওপেন মাইনিং পদ্ধতিতে কয়লা না তোলায় প্রায় ৮০ ভাগ কয়লা মাটির নিচে থেকে যাচ্ছে কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ সাময়িক লাভের মুখ ২৭ বছর দেখলেও বর্তমান কর্তৃপক্ষ লাভের মুখ দেখছে না।চীনা সিএমসি কোম্পানির মাধ্যমে চুক্তিতে মাত্র ১৫-২০ ভাগ কয়লা তোলা উত্তোলন করা হচ্ছে। যা প্রায় ভূ-পৃষ্ট থেকে ১৪শত ফিট নিচ থেকে শূড়ঙ্গো পথে উত্তোলতন করা হচ্ছে এই কয়লা। এই পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হলেও খনি শ্রমিকদের জীবনের ঝুকি বাড়ছে।

বাংলাদেশের জ্বালানীর চাহিদা মেটানোর জন্য উত্তর অঞ্চলের দিনাজপুর জেলার পাবর্তীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তৎকালীন সরকার গত ২৭ জানুয়ারী ১৯৯৪ ইং সালে খনিটির উদ্বোধন করেন। অল্পসময়ের মধ্যেই পেট্রো বাংলার সাথে চীনের মেসার্স চায়না মেশিনারী ইনপোর্ট এন্ড এক্সপ্টে করপোরেশনের (সিএমসি) এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়্ সেই সময় ১লা জানুয়ারীতে।

চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক মাসের মধ্যে পুরো দমে কাজ শুরু হয় কয়লা খনিটির। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিটি ১৯৮৫ ইং সালে আবিষ্কৃত হলেও ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন চলছে। ৬.৬৮ কিলোমিটার কয়লার ক্ষেত্র ১১৮ থেকে ৫০৬ মিটার গভীরতায় ৬টি স্তরে কয়লার মজুদ ৩৯০ মিলিয়ন টন। ২০০১ ইং সাল থেকে শুরু করে ১৯ জুলাই ২০১৮ ইং সাল পর্যন্ত ১,০১,৬৬,০৪২.৩৩ মেট্রিকটন কয়লা উৎপাদন হয়েছে। ২০১৯-২০২২ ইং সাল পর্যন্ত কত মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন হয়েছে। তার হিসাব জানা সম্ভব হয়নি। উৎপাদিত কয়লা মূল্য প্রায় ২শত ৩০ কোটি টাকা। ১৯৯৪ইং সালে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি উদ্বোধনের ৯ বছর পর কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। ২০০৩ সালে বড়পুকুরিয়ায় কয়লা ভিত্তিক ২৫০ মেগাওয়াড বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের কাজ শুরু হয়। ২০০৫ ইং সালে তার নির্মাণ কাজ শেষ হয়। পর্বর্তীতে বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যায় করে গত কয়েক বছর আগে তৃতীয় ইউনিট নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। বর্তমান তৃতীয় ইউনিটটি চালু রয়েছে। প্রচুর কয়লা সংকটের কারণে বর্তমান ১ নং ও ৩ নং ইউনিট চালু রয়েছে।

প্রতি দিন প্রায় দুইটি ইউনিট চালু রাখতে জ্বালানীতে ৬ হাজার মে:ট কয়লা ব্যবহার হয়। এখন ২টি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে জাতীয় গ্রেটে সরবরাহ করা হচ্ছে। ৩টি ইউনিট চালু রাখতে ৯ হাজার মে:টন কয়লা প্রযোজন। কিন্তু সে পরিমান কয়লা বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলন করা সম্ভয় হয় না। সেই কারণে ৩টি ইউনিট একযোগে চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ২০ বছর ধরে পূর্ব উত্তর দক্ষিণ দিকে শূড়ঙ্গ পথে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে।

কয়লা উত্তোলনের কারণে ১৪টি গ্রামের অফূরন্ত ক্ষতি সাধন হয়। ১৪টি গ্রামের মানুষ যখন বুঝতে পারল কয়লা তোলার কারণে বাড়ীঘর ফসলি জমি স্কুল কলেজ কবরস্থান মসজিদ মন্দির সহ বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে তখন এলাকার মানুষ গত ৭ বছর আগে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আন্দোলন শুরু করে। সরকার খনি এলাকর ৩ কি.মি এলাকা অধিগ্রহণ ও আড়াই হাজার গ্রামবাসীকে পূর্ণবাসনে এলাকার মাইনিং সিটি নামক একটি শহর স্থাপন ও জমি ও ঘরবাড়ীর ক্ষতিপূরণ দিতে চুক্তিবন্ধ হয়।

এ জন্য ক্ষনি কর্তৃপক্ষ জ্বালানী মন্ত্রনালয়ের নিকট ২শত ২৮ কোটি টাকা ব্যায় হতে পারে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন। অবশেষে সরকার ক্ষতিগ্রস্থদেরকে তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করে সাড়ে ৬শত একর জমি অধিগ্রহণ করেন। বর্তমান খনি এলাকার আশেপাশ্বের ১৪টি গ্রামের বাসিন্দারা অন্যত্র চলে গেছে। খনি হওয়ার করণে এই এলাকার মানুষ তেমন কোন লাভবান হতে পারে নি। বর্তমান বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিটির উৎপাদন দেখা গেলেও ভবিষ্যত্যে কয়লা খনিটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে অনেকের ধারনা।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশী মো কামরুজ্জামান এর সাথে কয়লা উত্তোলন বন্ধ হওয়ার বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান খনির ফেইস পরিবর্তন হওয়ার কারণে তিন মাস কয়লা উৎপাদন বন্ধ থাকবে। কারণ কারিগরী যন্ত্রপাতি নতুন ফেইস এ স্থাপন করতে এই সময় লাগে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী এ এম ওয়াজেদ আলী জানান, কয়লা সংকটের কারণে বর্তমান ১ নং ও ৩ নং ইউনিট চালু রাখা হয়েছে। বড়পুকুরিয়ায় মজুদ কয়লা দিয়ে চার মাস চালানো সম্ভব। বিষয়টি ইতিমধ্যে উদ্ধতর্ণ কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।

১৪৭ বার ভিউ হয়েছে
0Shares