শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দরপত্র ছাড়াই প্রায় ৪০ লাখ টাকার দূর্নীতির কাজ ক্ষুব্ধ তানোর পৌরবাসী 

দরপত্র ছাড়াই প্রায় ৪০ লাখ টাকার দূর্নীতির কাজ ক্ষুব্ধ তানোর পৌরবাসী 

তানোর প্রতিনিধি: কোন ধরনের দরপত্র আহবান করা হয়নি, কোটেশন করা হয়েছে কিনা সেটাও কেউ জানেনা, দরপত্র ছাড়াই প্রায় ৪০ লাখ টাকার দূর্নীতির মাধ্যমে পছন্দের দলীয় ব্যক্তিকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন মেয়র ইমরুল হক। একের পর এক কাজ অনিয়ম করে করা হচ্ছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন। কোন কিছুর তোয়াক্কা করেন না রাজশাহীর তানোর পৌর মেয়র ইমরুল হক। তিনি নৌকা প্রতীকের মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। মুলত একারনে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে ইচ্ছে মত কোটেশনে দেখিয়ে একের পর এক ধাপ্পাবাজির কাজ করায় চরম ক্ষুব্ধ পৌরবাসী। এতে করে স্থানীয় সাংসদ, নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিডিএলজি এবং জেলা প্রশাসকের সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি তুলেছেন কাউন্সিলর ও সচেতন নাগরিকরা। নচেৎ মেয়র ইমরুল হকের অনিয়ম কোনভাবেই দূর হবেনা বলে মনে করেন পৌর সচেতন মহল।
সরেজমিনে দেখা যায়, পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ড চাপড়াগ্রামে আলিমের বাড়ির সামনের পুকুরের পূর্ব দিকের প্রটেকশন ওয়াল নির্মাণ হয়ে গেছে। তিন ও দুই নম্বর ইট দিয়ে ওয়াল নির্মাণ হয়ে গেছে। পুকুরের উত্তর সাইডে কাঁদার মধ্যে কয়েকজন মিস্ত্রি ওয়াল নির্মাণের জন্য ঢালায় করছেন। ঢালায়ে যত সামান্য খোয়া ও সামান্য পরিমান সিমেন্ট দিয়ে পঁচা কাঁদার মধ্যে ইট গাতার কাজ করছেন। এক ব্যক্তি বলেন সিমেন্ট দিচ্ছে একাবারেই অল্প, খোয়াতো নাই। কাঁদার মধ্যে ঢালায় দেয়া মিস্ত্রিরা জানান, মুল মিস্ত্রি জাহাঙ্গীর, সে আমাদের কে যেভাবে বলেছে সেভাবে কাজ করা হচ্ছে, এর বেশিকিছু বলতে পারবনা। তাদের সাথে কথা বলতেই আতাউর নামের এক ব্যক্তি বলেন স্বাধীনের পর থেকে পুকুরে প্রটেকশন ওয়াল ও রাস্তা তৈরির জন্য সবাইকে বলা হয়েছিল,  কেউ বাস্তবায়ন করেনি। পৌরসভার প্রয়াত মেয়র এমরান আলী মোল্লা, প্রয়াত ফিরোজ সরকার ও মিজানকেও বলা হয়েছিল কেউ করে দেয়নি। অথচ বর্তমান মেয়র ইমরুল হক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নির্বাচিত হলে প্রটেকশন ওয়াল ও রাস্তা করে দিতে চেয়েছিলেন। সে মোতাবেক তিনি কাজ করছেন। কাজের মান খারাপ হলে কিছু বলতে পারেন, তাছাড়া কোন কথা বলায় ঠিক না।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ দিন ধরে পুকুরের প্রটেকশন ওয়াল ও আলিমের বাড়ি থেকে শামিমের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার প্রয়োজন। কারন বর্ষা মৌসুমে অনেকে বের হতে পারেনা। একেবারেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে প্রটেকশন ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। হয়তো বর্ষা মৌসুমে পুকুরে পানি ভর্তি হলে ঢেওয়ে ভেঙ্গে যাবে। প্রটেকশন ওয়াল ও রাস্তা মিলে ঊর্ধ্বে ১৫/২০ লাখ টাকা খরচ হবে কিনা সন্দেহ । কিন্তু প্রায় ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যাকে বলে মিলেমিশে হরিলুট করা।
কাজের স্থান থেকেই পৌর কার্যসহকারী মাহবুবের কাছে ফোন দেওয়া হলে তিনি সাব জানিয়ে দেন কাজের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
কাজ করা পৌর যুবলীগ সভাপতি রাজিব সরকার হিরো কে কাজের স্থান থেকেই মোবাইল করা হলে তিনি বলেন, কাজ পাড়ার লোকজনের চাঁদার টাকাই করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী সরদার জাহাঙ্গীর আলমের সাথে মোবাইলে কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান অবশ্যই দরপত্রের মাধ্যমে কাজ হচ্ছে। যিনি কাজ করছেন তিনি বলছেন পাড়ার মানুষের চাঁদার টাকায় কাজ হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সে ভুল বলেছে আগামী রবিবারে অফিসে আসেন সব কাগজ দেখানো হবে বলে দায় সারেন।
৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজিমুদ্দিন বলেন, কাজের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
পৌর মেয়রকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ না করায় প্যানেল মেয়র আরব আলীর কাছে কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান এসব বিষয়ে কার্যসহকারী  মাহবুর ভালো বলতে পারবেন, তার কাছ থেকে জেনে নেওয়ায় ভালো।
কার্যসহকারী মাহবুর সকালে কিছু বলতে না পারলেও বিকেলে বলেন, কোটেশনে রাজিব সরকার হিরো কাজটি করছেন।
পৌর মেয়র ইমরুল হকও বিকেলের দিকে ফোন করে বলেন, এডিবি প্রকল্প  থেকে কাজটি হিরো করছেন। রাস্তাটি জরুরি ভিত্তিতে করা প্রয়োজন ছিল এজন্য কোটেশনে করা হচ্ছে। যতখুশি নিউজ করতে পার, আমার কিছুই হবে না, আমি প্রধানমন্ত্রীর সভা শেষ করে গণভবন থেকে বের হয়েছি বেশি কথা বলতে পারবনা।
রাজশাহীর স্থানীয় সরকার উপপরিচালক (ডিডিএলজি) অসিম কুমার বলেন, দরপত্র ছাড়া এত টাকার কাজ করার কোন সুযোগ নেই। খোঁজ খবর নিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সুত্রে জানা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে তানোর পৌরসভায় ৫৮ লাখ টাকা এডিবি থেকে বরাদ্দ পায়। গত জুন মাসের আগেই এডিবি প্রকল্পের টাকার কাজ শেষ করে জুন ক্লোজিং হয়। কিন্তু কোন কাজ না করে টাকা তছরুপ করার পরিকল্পনা করেন মেয়র। কিন্তু ৫৮ লাখ টাকার কোন দরপত্র আহবান করা হয়নি। সেই এডিবির টাকায় অনিয়ম ভাবে কোটেশনে প্রায় ৪০ লাখ টাকার  দূর্নীতির কাজ করা হচ্ছে, যা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে বলে কাউন্সিলরদের দাবি।
৯৪ বার ভিউ হয়েছে
0Shares