শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রাজশাহীতে আদিবাসীদের ১৬ দফা দাবিতে ডিসি অফিস ঘেরাও

রাজশাহীতে আদিবাসীদের ১৬ দফা দাবিতে ডিসি অফিস ঘেরাও

নাজিম হাসান,রাজশাহী প্রতিনিধি:
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রাজশাহী জেলা শাখার উদ্যোগে আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সমতলের আদিবাসীদের পৃথক মন্ত্রণালয়, ভূমি কমিশন গঠন ও গোদাগাড়ির সেচের পানি না পাওয়ায় দুই আদিবাসী কৃষকের আত্মহত্যার বিচারসহ ১৬ দফা দাবিতে রাজশাহী ডিসি অফিস ঘেরাও এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। জাতীয় কৃষক সমিতি ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রাজশাহী জেলা ও মহানগর শাখার উদ্যোগে গতকাল বুধবার (১৮ মে ) বেলা ১১ টার দিকে জজ কোর্ট এলাকায় ডিসি অফিসের সামনে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এর আগে সকাল থেকে কেন্দিয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আদিবাসীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে রাজশাহী ডিসি অফিসের সামনে জড়ো হয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শেষে আদিবাসীরা মিছিল নিয়ে রাজশাহী ডিসি অফিস ঘেরাও করে এবং পরে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আদিবাসীদের ১৬ দফা দাবিতে রাজশাহী ডিসির মাধ্যমে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রাজশাহী শাখার সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়ারের সভাপতিত্বে উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জেলা কৃষক সমিতির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গণেষ মাঝি, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা, মহানগর সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামানিক দেবু, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য রাজ কুমার শাও, দপ্তর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম প্রমুখ। এসময় আদিবাসী নেদাদেও দাবি আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে। দখলি শর্তে খাস জমি, বসতভিটা, কবরস্থান, পুকুর আদিবাসীদের নামে প্রদান করতে হবে। প্রাকৃতিক বনে আদিবাসীদের প্রথাগত অধিকারকে নিশ্চিত করতে হবে, বনায়ন ও প্রকল্পের নামে প্রাকৃতিক বন ও বননির্ভর আদিবাসী জীবন বিপন্ন করা যাবে না, আদিবাসীদের নামে মিথ্যা বন মামলা ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং বনায়নের নামে আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেয়া যাবে না। রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে সেচের পানি না পেয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করা অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডির মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করতে হবে। বরেন্দ্র অঞ্চলের খাস পুকুরগুলো উদ্ধার করে কৃষকদের সেচের পানি নিশ্চিত করাসহ কৃষিকাজে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ প্রণোদনা চালু করতে হবে। আদিবাসীদের জমি আদিবাসীদের কাছে হস্তান্তরের রক্ষাকবচকে আরো কঠোর করাসহ বিনা অনুমতিতে যেসব দলিল তৈরি হয়েছে সেগুলো বাতিল করতে হবে। সকল আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষায় প্রাথমিক স্তরে শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে ও আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কমপক্ষে একজন করে আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। আদিবাসীদের জন্য উচ্চ শিক্ষা ও প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেনীসহ সকল সরকারি চাকুরিতে আদিবাসীদের জন্য বিশেষ ৫% কোটা সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। দিনাজপুর ও নওগাঁয় প্রতিষ্ঠিত আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমীতে দ্রুত জনবল নিয়োগ করতে হবে এবং রাজশাহী বিভাগীয় আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমীর উপ-পরিচালক পদে আদিবাসীদের মধ্য থেকে নিয়োগ করতে হবে। শুধুমাত্র থোক বরাদ্দ নয়, জাতীয় বাজেটে সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য বাজেট প্রণয়ন করতে হবে এবং ‘সমতল আদিবাসী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠনসহ আদিবাসী কমিশন গঠন করতে হবে।আদিবাসীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে আদিবাসী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের জন্য আইন প্রণয়ন ও সংরক্ষিত আদিবাসী নারী আসনের ব্যবস্থা করতে হবে; পাশাপাশি স্থানীয় সরকার কাঠামোতে নির্দিষ্টভাবে সদস্য পদ আদিবাসী নারীদের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। আদিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে; পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে সক্রিয় করতে হবে। বর্তমান সরকারের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত আদিবাসীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।আদিবাসীদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং চর্চার অনুকূল পরিবেশ, গবেষণার ক্ষেত্র প্রস্তুতসহ আদিবাসী একাডেমী গঠন করতে হবে।গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের ১৮৪২.৩০ একর সম্পত্তি প্রকৃত জমি মালিকদের ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড স্থাপনের পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে; এবং গত ৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে পুলিশের গুলিতে নিহত তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানসহ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সেই সাথে আদিবাসীদের ওপর থেকে সকল প্রকার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।আদিবাসীদের মালিকানাধীন কোন জমি অধিগ্রহণ চিরতরে বন্ধ করতে আইন প্রনয়ন করতে হবে। সরকারি গেজেটে বাদপড়া আদিবাসী জাতিসত্তাগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। উক্ত রাজশাহী ডিসি অফিস ঘেরাও ও স্মারকলিপি প্রদান কালে জেলার আদিবাসী সংগঠনের লোকজন ও রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।#

৬২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares