শুক্রবার- ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নরসিংদীর লটকন যাচ্ছে ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যে

নরসিংদীর লটকন যাচ্ছে ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যে

শান্ত বণিক, নরসিংদী থেকে : এক সময়ের কদরহীন ঔষধি গুণসম্পন্ন লটকন এখন নরসিংদীর অন্যতম অর্থকরী ফসল । লটকন বর্তমানে জেলার ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। জেলার শিবপুর ও বেলাব উপজেলায় চাষ করা লটকন রফতানি হচ্ছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভাষ্য, জেলায় ১ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে লটকন আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, শিবপুর উপজেলায় ১৬০০ হেক্টরে, বেলাবতে ৩১০ হেক্টর, রায়পুরায় ৫০ হেক্টর ও মনোহরদীতে ৪০ হেক্টরে লটকন আবাদ হয়েছে। এতে প্রায় ৩০ হাজার টন ফল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এসব লটকনের বাজারমূল্য অন্তত সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা। এ থেকে চাষিরা লাভবান হবেন ২০০ কোটি টাকার মতো। আড়াই হাজার টনেরও বেশি লটকন রফতানি হচ্ছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। চলতি মৌসুমে জেলাজুড়ে লটকনের ফলন ও দাম, উভয়ই ভালো পাওয়ায় চাষিরাও বেশ খুশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের
কর্মকর্তারা বলছেন, লটকনে অধিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও আয়রন আছে; যা আর্থ্রাইটিস, পাকস্থলীর আলসারসহ বিভিন্ন ত্বকের সমস্যা সমাধানে কাজে দেয়। রুচি বাড়াতে এবং মানসিক অবসাদ দূর করতেও ফলটি উপকারী। লটকনগাছের পাতা গুঁড়া করে খেলে ডায়রিয়া ও বাকল খেলে চর্মরোগের উপশম করে।
সরেজমিনে কয়েকটি লটকনের বাগানে দেখা গেছে, গাছে গাছে ঝুলে আছে থোকা থোকা পাকা লটকন। হলুদ হয়ে আছে একেকটা গাছ। অনেক গাছে গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত এমনভাবে ফল ধরে যে ডালও দেখা যায় না। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুইপাশে ঝুপড়ি দোকানে অন্তত ৩০ থেকে ৪০টি জায়গায় নিজের গাছের লটকন বিক্রি করতে দেখা গেছে কৃষকদের। এর মধ্যে মরজাল, বারৈচা ও চৈতন্যা এলাকার হাটে স্থানীয় কৃষকরা ভোর থেকেই ভ্যানে করে নিজেদের বাগানে আবাদ করা লটকন নিয়ে আসেন। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা পাইকাররা দরদাম করে কিনে নেন এসব লটকন।  বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাসিম বলেন, আমার প্রকার ও আকারভেদে প্রতি কেজি লটকন ৭০ বাগানে ২০০ লটকন গাছ আছে। এই গাছগুলোর পেছনে ৩২ বছর শ্রম দিতে হয়েছে। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে, লাভবানও হব। এই পর্যন্ত ১০ লাখ টাকা ফল বিক্রি করেছি। সামনে দিনে আরো বিক্রি হবে।
শিবপুর উপজেলার চৈতন্য এলাকার লটকন বাগানে কথা হয় ইমান আলী সরকার নামের একজন লটকনচাষির সঙ্গে। তিনি বলেন, লটকন চাষে তুলনামূলকভাবে খরচ কম, শ্রমও দিতে হয়। কম। আমি ৩০ বছর ধরে লটকন চাষ করে আসছি। লটকন চাষ করতে করতে আমরা অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছি। আমার বাগানের লটকন বিদেশেও যায়। তার জন্য ভালো মানের লটকন বাছাই করে ৪০০ গ্রাম করে পলিথিনের প্যাকেট করে ঢাকা শ্যামবাজারে পাঠাই। সেখান থেকে তারা পরীক্ষা করে বিদেশে পাঠায়।
নরসিংদীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ- পরিচালক আজিজুর রহমান জানান, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে নরসিংদীর ব্র্যান্ডখ্যাত লটকনের সুনাম। দেশ-বিদেশের বাজারে চাহিদা থাকায় এবং অল্প খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় বেশির ভাগ কৃষকই বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করছেন। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার লটকন বিক্রি করতে পারবেন নরসিংদীর কৃষকরা।
৩১ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS