তানোরে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নির্যাতন করে গর্ভের সন্তান নষ্ট করলো স্বামী
তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে পারিবারিক কলহ ও যৌতুকের দাবিতে পাষন্ড স্বামীর বর্বর নির্যাতনে সাত মাসের অন্তঃস্বত্তা স্ত্রীর গর্ভপাত হয়েছে। উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) বিলশহর গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত কয়েক দিন যাবত প্রায় রাতে মদ্যপ অবস্থায় রবিউল ইসলাম তার অন্তঃস্বত্তা স্ত্রী ময়নার ওপর পাশবিক নির্যাতন করে আসছে। এদিকে খবর তার স্বজনেরা ময়নাকে মুমূর্ষু অবস্থায় গত শুক্রবার রাত ২টার দিকে তানোর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা ময়নার গর্ভের সাত মাসের মৃত বাচ্চা প্রসব করান। কিন্ত্ত ময়নার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হলে।পরদিন শনিবার তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) প্রেরণ করা হয়। ঘটনা জানা জানি হলে গ্রামবাসি রবিউল ইসলামের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। নির্যাতনের শিকার গৃহবধু ময়না আক্তার মুক্তা (২৪) রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকেরা জানান, তার অবস্থা এখানো আশঙ্কাজনক।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৩ মাস আগে উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) নারায়ণপুর গ্রামের মৃত উসমান আলীর কন্যা ময়না আক্তার মুক্তার (১৮) সঙ্গে একই ইউপির বিলশহর গ্রামের মৃত মহির উদ্দিনের পুত্র রবিউল ইসলামের বিবাহ হয়। ময়না তার দ্বিতীয় স্ত্রী। বিয়ের পর রবিউল দ্বিতীয় স্ত্রী ময়নাকে নিয়ে দেবীপুর মোড়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। যৌতুক ও পারিবারিক কলহের জের ধরে রবিউল তার সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ময়নাকে বেধড়ক মারধর ও পাষবিক নির্যাতন
করেন। এরপর গুরুত্বর অসুস্থ ময়নার চিকিৎসা না দিয়ে বাড়িতে তালা দিয়ে রাখতেন। ময়না মানসম্মানের ভয়ে কাউকে কিছু বলেননি। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ময়নার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকলে তিনি তার মাকে খবর দেন। তার মা এসে বাড়ির তালা ভেঙে ভেতরে যান। ময়নার অবস্থা দেখে তিনি তাকে তানোর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা ময়নার মৃত বাচ্চা প্রসব করান।
সরেজমিন গত শনিবার সকালে তানোর উপজেলা হাসপাতালে ময়নার সঙ্গে কথা হয়। এসময় ময়না বলেন, ‘বিয়ের পর আমার স্বামী রবিউল তাকে বলেছিল, তার বাচ্চা হলে সে তাকে তার তানোর সদরের জায়গা লিখে দেবেন। কিন্ত্ত তাকে জমি দেবেন না বিধায় সে তার পেটে লাথি, কিল-ঘুষি মারে ও পাশবিক নির্যাতন করে বাচ্চা মেরে ফেলেছে। তিনি এর সুষ্ঠু বিচার চান।এবিষয়ে
তালন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দীন বাবু বলেন, ‘রবিউল তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ময়নাকে মারপিট ও পাশবিক নির্যাতন করেছে, এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে জেনেছি। আমি রবিউলকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেছিলাম; কিন্তু সে আমার কথায় কোনো কর্ণপাত করেননি। এবিষয়ে
তানোর থানার অফিসার ইন্চার্জ ওসি কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, ঘটনাটি শোনার পর আমি ওসি (তদন্ত) উসমান গনিকে তানোর উপজেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম। ডাক্তাররা মৃত বাচ্চা প্রসব করিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।এবিষয়ে জানতে চাইলে রবিউল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।