মঙ্গলবার- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মৃত শিক্ষকের নামে টাকা উত্তোলনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ! ৯ মাসেও হয়নি ব্যবস্থা  

মৃত শিক্ষকের নামে টাকা উত্তোলনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ! ৯ মাসেও হয়নি ব্যবস্থা  

তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে মৃত শিক্ষককে জীবিত দেখিয়ে বেতন ভাতা উত্তোলনসহ নানা অনিয়মের ঘটনায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ব্যবস্থা নিতে চলতি বছরে মার্চ মাসে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন এবং জেলা শিক্ষা অফিসারকেও দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা অফিসার মার্চ মাসের ৯ তারিখে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২৭০ স্বারকে পত্র প্রেরন করেন। কিন্তু দীর্ঘ নয় মাস অতিবাহিত হলেও প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় শিক্ষক মহলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। ফলে  প্রতারক জালিয়াত প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। চলতি মাসে ব্যবস্থা না হলে আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন সহ নানা কর্মসূচি ঘোষনা করবেন বলেও স্থানীয়রা জানিয়েছেন। উপজেলার তালন্দ ইউনিয়ন(ইউপির) নারায়নপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন টাকা উত্তোলন, অফিসারকে অকাথ্য ভাষায় গালমন্দসহ নানা অনিয়ম দূর্নীতির ঘটনার জন্ম দিয়েছে। এতে করে একজন মানুষ গড়ার কারিগরের এমন জালিয়াতি প্রতারনার ঘটনায় চরম বিব্রত শিক্ষক মহল থেকে শুরু করে জনসাধারন।
জানা গেছে, উপজেলার তালন্দ ইউনিয়ন (ইউপির) নারায়নপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয়(EIIN: ১২৭০৮২) এর প্রধান শিক্ষক জালিয়াত আলাউদ্দিন মৃত শিক্ষকের নামে বেতন উত্তোলন, নিজে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেওয়ার পর থেকেই প্রধান শিক্ষকের স্কেলের বেতন উত্তোলনসহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে চলতি বছরের  মার্চ মাসের ১ তারিখে উমাশিঅ/তান/১.১৬/২০২২/৬২ নম্বর স্মমারকে মহাপরিচালক বরাবর লিখিত দেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান।
অভিযোগে উল্লেখ, বিগত ২০২১ সালের  সেপ্টেম্বর মাসের ৯ তারিখ বিকাল ২ টার দিকে নারায়নপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে স্কুল বন্ধ পাওয়া যায়। এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক কে কার্যালয়ের স্মারক নম্বর :উমাশিঅ/তান/১.১৬/২০২১/১৭৫: তারিখ ২৭/৯/২০২১ মোতাবেক কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। কারন দর্শানোর জের ধরে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন গত ২৮/৯/২০২১ ইং তারিখে অত্র কার্যালয়ের অফিস সহকারী রাহেজুল ইসলামের সাথে  মোবাইল ফোনে ঔদ্ধতাপূর্ণ আচরনসহ খারাপ ভাষায় গালমন্দ করেন। ওই কারন দর্শানোর জেরে ২৯/৯/২০২১ ইং তারিখে বিকাল ২ টা ৩৯ মিনিটে অপরিচিত মোবাইল নম্বর ০১৭১৫-৭১৫৪৯১ থেকে শিক্ষা অফিসারকে অকাথ্য গালমন্দসহ দেখে নেওয়ার হুমকি প্রদান করা হয়। হুমকি ও গালমন্দের বিষয়ে ওই তারিখে থানায় এবং জেলা শিক্ষা অফিসার, ইউএনও বরাবর অভিযোগ দায়ের করা হয়। এছাড়াও চাকুরীর শুরু থেকে পূর্ন প্রধান শিক্ষকের বেতুন তুলেন। স্কুলটিতে বিজ্ঞান শিক্ষক মৃত গোলাম রাব্বানী ইনডেক্স নম্বর R563215 বিগত ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের ২০ তারিখে মারা গেলেও এখন পর্যন্ত এমপিও কপিতে নাম রয়েছে এবং ওই বিজ্ঞান শিক্ষকের নাম অদ্যবধি প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন কর্তনের কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন নি। এছাড়াও ২০২০ সালের e-Requisition পুন; যাচাই- বাছাই কালে প্রধান শিক্ষক অফিসে আসেন না। এমনকি জেলা শিক্ষা অফিসেও যান না। ফলে এমপিও সীটে নাম থাকা স্বত্তেও এনটিআরসিএ কর্তৃক নতুন শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতির মেয়াদ উত্তীর্ন হওয়া সত্বেও স্বীকৃতি নবায়নের কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি এবং বিদ্যালয়ের বর্তমানে কোন কমিটি নেই। এছাড়াও বিদ্যালয়ে সরকার প্রদত্ত শেখ রাসেল ডিজিটাল থাকলেও ল্যাবের কোন কার্যক্রম নেই। প্রধান শিক্ষক কোন জুম মিটিংয়ে অংশগ্রহন করেন না, এবিষয়ে তাকে কারন দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
এদিকে জেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন স্বাক্ষরিত চলতি বছরের মার্চ মাসের ৯ তারিখে ২৭০ নম্বর স্মারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু রহস্য জনক কারনে নয় মাস পার হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
এসব নিয়ে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে
 মৃত শিক্ষকের নামে টাকা উত্তোলন মর্মে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে ঘটনা ধামা চাপা দিতে মরিয়া হয়ে পড়েন প্রধান শিক্ষক ও সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার।
সোনালী ব্যাংক থেকে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনকে সম্প্রতি  নন ড্রয়াল প্রত্যায়ন পত্র দেন, সেখানে দেখা যায়, মৃত শিক্ষক গোলাম রাব্বানী সোনালী ব্যাংক তানোর শাখায় সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর ৪৬২৩০০২০৫৯৩১৩, উক্ত হিসেবের মাধ্যমে জানুয়ারী/২০২০। জানুয়ারী মাসের বেতন ভাতার সরকারী অংশ ১৭১৭৩ টাকা ১২/১/২০২০ ইং তারিখে জমা করা করা হয়, যা তিনি ১৩/১/২০২০ তারিখে উত্তোলন করেছেন। এর পরে আর কোন টাকা এ হিসাব থেকে উঠেনি। এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের ২২ তারিখে মৃত শিক্ষক গোলাম রাব্বানী ৫৭ হাজার টাকা তুলেন। কিন্তু তার দুদিন আগে মারা যান শিক্ষক।
অথচ ব্যাংকের ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক প্রামানিক সাব জানিয়ে দেন, যে দিন মারা যাবে সেদিন থেকে তার একাউন্ট বন্ধ। ম্যানেজারের কাছে জানতে চাওয়া হকে মৃত শিক্ষক ২২ ডিসেম্বর ও ১৩ জানুয়ারী কি ভাবে টাকা উত্তোলন করলেন তিনি জানান, তার নামে ঋন ছিল কাটা হয় এবং ডিসেম্বরের বেতন জানুয়ারীতে তুলেছে। শিক্ষা অফিসার গত মার্চ মাসের এমিও সীটে মৃত শিক্ষক কে নিয়মিত দেখানোর কারনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, আপনি বলছেন লেনদেন হয়নি আড়াই বছরের বেতন সীট দেখানো যাবে কিনা জানতে চাইলে ম্যানেজার জানান, আদালত কিংবা সরকারী কোন দপ্তর চাইলে দেওয়া যাবে তাছাড়া দেওয়া যাবে  না বলে দম্ভক্তি প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।
শিক্ষক আলাউদ্দিন ব্যাংক থেকে এমন প্রত্যায়ন পেয়ে তার নামের ফেসবুক আইডিতে লিখেন মূর্খ সাংবাদিকরা লিখেছে আমি নাকি মৃত শিক্ষকের টাকা উত্তোলন করেছি, সহযোগীতা করেন আমার এলাকার মহাজ্ঞানীরা। ফেসবুকে অনেকেই কমেন্টে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বেতন সীট পোষ্ট করতে বললেও তিনি তা করেন নি।
মৃত শিক্ষক গোলাম রাব্বানীর বাড়ি উপজেলার দেবিপুরগ্রামে। তার পরিবারের নিকট থেকে প্রধান শিক্ষক ১০ টির মত চেকের পাতা নেয় এবং তিনি ওই শিক্ষক চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলাউদ্দিন ২ লাখ টাকা কিংবা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন, ব্যাংক থেকে অবশ্যই টাকা তুলেছেন বলেও নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বেতন সীট অতীতে মাধ্যমিক অফিসে দিত না। আমি এমপিও সীটে মৃত শিক্ষক কে নিয়োমিত দেখানো হয় দেখেছি। এঘটনা সহ শিক্ষক আলাউদ্দিন জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বেতন উত্তোলন করেছেন। অথচ ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা লাগবে, শেখ রাসেল ডিজিটাল আছে, ল্যাবের   কোন কিছুই নেই। এমনকি স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে বন্ধ পাওয়ার কারনে কারন দর্শানোর নোটিশ করা হলে শিক্ষক আমাকে ও অফিস সহকারী রাইজুলকে খারাপ ভাষায় গালমন্দ করেন। আমি ইউএনও, থানা ও জেলা অফিসার এবং মহাপরিচালক বরাবর গত মার্চ মাসে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু কি কারনে কিংবা কেন ব্যবস্থা হচ্ছে না ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন।
জেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিনের কাছে মৃত শিক্ষকের নামে টাকা উত্তোলনসহ গালমন্দ ও হুমকির বিষয়ে অভিযোগ আকারে লিখিত দেওয়া হয়েছে, এতদিনও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কিছুক্ষন নিরবতা পালন করে অস্বীকার করেন। অথচ তিনিও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মহা পরিচালক বরাবর লিখিত দেন।
উপজেলা মাধ্য্যমিক অফিসারের লিখিত অভিযোগ ও জেলা শিক্ষা অফিসারে লিখিত পত্র এই প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
৫৮ বার ভিউ হয়েছে
0Shares