শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
খাল-বিলে মাছ ধরার বিশেষ ফাঁদ

খাল-বিলে মাছ ধরার বিশেষ ফাঁদ

সঞ্জয় ব্যানার্জী, পটুয়াখালী প্রতিনিধি : আবহমান বাংলার রূপের মধ্যে ভেসাল জাল দিয়ে মাছ শিকারের দৃশ্যটি বেশ চিরচেনা। তবে সময়ের পালা বদলে এ ভেসাল জালে মাছ শিকারের দৃশ্য এখন সর্বত্র চোখে পড়ে না। ‘ভেসাল জাল’ বইয়ের ভাষা হলেও স্থানীয়ভাবে এটি ‘বেয়াল জাল’ নামে মানুষের কাছে অধিক পরিচিত। এ জাল দিয়ে গ্রামের খাল-বিলে মাছ শিকারের দৃশ্য চোখে পড়বে। তবে সচরাচর নয়। বলতে গেলে এটি যেন অনেকটা বিলুপ্তির দুয়ারে এসে ঠেকেছে।

ভেসাল জাল ব্যবহারের মাধ্যমে একজন জেলে খুব সহজে মাছ শিকার করতে পারেন। এর থলি বেশ বড়। খালের ব্যাসার্ধের উপর নির্ভর করে ভেসাল কত বড় হবে। জালের সামনের প্রান্ত খাল বা বিলের পানির গভীর ছুঁয়ে মাছকে থলিতে বন্দি করে। তখন জেলে দু’হাত দিয়ে জালে ঢুকে পড়া মাছগুলোকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারেন। যার কারণে এ জালকে মাছ ধরার বিশেষ ফাঁদ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।

মাছ শিকারের দারুণ এ কৌশল বেশি চোখে পড়বে উপকূলবর্তী এলাকা এবং গ্রামাঞ্চলে। তবে উপকূলবর্তী এলাকায় জলবায়ুর পরিবর্তনে সৃষ্ট নদীভাঙনের কারণে বহু খাল হারিয়ে গেছে। যার কারণে ভেসাল জাল দিয়ে মাছ ধরার সংখ্যাটাও দিনে দিনে কমে যাচ্ছে।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় ছোট বড় অনেক খাল রয়েছে। এসব খালপাড় ঘুরলে চোখে পড়ে, পানি চলাচলে নাব্যতা সংকটের কারণে ¯্রােতে খালের পাড় ভেঙে খাল এলোমেলোভাবে বড় হয়েছে।

ভেসাল জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা হয়। যেমন চিংড়ি, পুটি, টেংরা, পুঁটি, বাইলা, বাইমসহ নানান প্রজাতির মাছ। খাল-বিলে মাছ ধরার আরো অন্যান্য কৌশল থাকলেও এটি একটি স্থায়ী কৌশল। ভেসাল স্থায়ীভাবে নির্মাণ করার জন্য জেলেকে হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। জাল কেনা, ভেসাল তৈরি করার জন্য বাঁশ, রশি কিনতে হয়। তবে বর্ষা শেষে জেলেরা কেবল এ ভেসাল দিয়ে মাছ ধরতে পারেন।

ভেসাল জালে মাছ ধরার মাধ্যমে অনেক জেলের জীবনে পরিবর্তনের ছোঁয়াও লেগেছে। সংসারে মাছের চাহিদা পূরণের পরেও ভেসালে ধরা পড়া মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন তারা।

ভেসাল জাল দিয়ে মাছ শিকারের বিষয়ে উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনয়নের দক্ষিন দাস পাড়া গ্রামের জেলে সংকর চন্দ্য শীল, মজিবর রাড়ি, মাহা আলম রাড়ি, জাহাঙ্গীর রাড়ি ও একই ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের জসিম উদ্দিন, গাজী সহিদ জানান,‘বেয়াল (ভেসাল) জাল দিয়ে মাছ ধরা খুব সহজ। অবসর সময়ে আমরা এ জাল বেয়ে থাকি। আমরা ছাড়াও আমাগো ছেলে সন্তানরা এ জাল বায়। সংসারের একটা বাড়তি আয় আসে এখান থেকে। আমরা কৃষি কাজ করি, আর পাশাপাশি এ জাল দিয়ে মাছ ধরি। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচও চালাতে পারি। বেয়াল দিয়ে মাছ ধরার জন্য ভাটার উপর নির্ভর করতে হয়। জোয়ারে ¯্রােত বেশি হলে জোয়ারে মাছ ধরা সম্ভব হয় না।’

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহাবুল আলম তালুকদার জানান, আবহমান বাঙলার রূপের মধ্যে ভেসাল জাল খাল-বিলে মাছ ধরা চিরচেনা দৃশ্য। বেয়াল দিয়ে মাছ ধরার জন্য ভাটার উপর নির্ভর করতে হয়। জায়ারে ¯্রােত বেশি হলে জোয়ারে মাছ ধরা সম্ভব হয় না।

২৬ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS