শুক্রবার- ১৪ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাদাম বিক্রি করে ৪ সদস্যের পরিবার চালায় ১১ বছরের মেয়ে

বাদাম বিক্রি করে ৪ সদস্যের পরিবার চালায় ১১ বছরের মেয়ে

সঞ্জয় ব্যানার্জী, পটুয়াখালী প্রতিনিধি : আয়ের কোনো পথ না থাকায় ভাজা বাদাম বিক্রি করে চার সদস্যের পরিবার (সংসার) চালান শিশু রাহিমা (১১)। সে পটুয়াখালী সদর উপজেলার আরামবাগ গ্রামের মোসা. নাজমা বেগমের মেয়ে। পরিবারে দুই বোন, মা-বাবা রয়েছেন। তবে বাবার পরিচয় দিতে নারাজ রাহিমা। রাহিমা পটুয়াখালীর একটি মাদ্রসায় লেখাপড়া করতেন। পরিবারের হাল ধরতে সে আর পড়াশুনা করতে পারেনি। তিন বছর পুর্বে লেখাপড়া বন্ধ করে বাদাম বিক্রি করে আসছেন রাহিমা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট পটুয়াখালী পিডিএস মাঠে বাদাম বিক্রি করে রহিমা। তবে ঝাউবাগান, শেখ রাসেল শিশুপার্কসহ বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় বাদাম-চানাচুর বিক্রি করতে দেখা যায়।

এদিকে, ভাজা বাদাম বিক্রি অন্য একজন শিশু ছিলো আল আমিন(১৪)। রহিমা আর আল আমিনের বাসা পাশাপাশিই। আল আমিনের বাবা কিছুই করে না। আমরা দুই ভাই বাদাম বিক্রি করি। বাবা বাদাম ভাঁজে আর কিছু করে না।

জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট পিডিএস মাঠে দেখতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কারণে উড়ন্ত বয়সের সময় দুরন্ত রহিমা-আলামিনদের হতে হয়েছে ভ্রাম্যমাণ বাদাম বিক্রেতা। অথচ এ বয়সে তারা সপ্ন দেখবে লেখাপড়া করে দেশবাসীর কল্যান সাধনের। কিন্তু এমন বয়সে শিশুদের কতোটা যতেœ লালিত হওয়ার কথা। আর কত আদরে বড় হওয়ার কথা।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর লুৎফর রহমান শাহরিয়ার বলেন, আমরা এসব শিশুদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকি। তারা আমাদের পৌরসভার পক্ষ থেকে অনেক সময় অনেক সহযোগিতা পায়। বর্তমানে নতুন কিছু শিশুদের দেখা গেছে। আমরা তাদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

রাহিমা বলেন,আমার মা আগে একটা বাসায় পানি দিত। এখন সেই বাসায় কল (টিউবওয়েল) বসাইছে তাই তাদের পানি লাগে না। পরিবারের জন্য মাদ্ররাসায় লেখাপড়া ছাড়ছি।

পটুয়াখালী জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা আবদুল্লা আল জব্বার বলেন, আমরা তো আসলে আমাদের জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে সমন্বয় ছাড়া কোনো কাজ করতে পারি না, যদি উপর থেকে আমাদের কোনো প্রকল্প দেয়া হয় তবে আমরা এসব বাচ্চাদের পূনর্বাসন করা হবে।

পটুয়াখালী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শিলা রানী দাস জানান, এমন অবস্থা শুধু পটুয়াখালীতে নয় সারা বাংলাদেশে। আমরা শিশুদের তো কিছু করতে পারবো না। তাদের বাবা-মা যদি বেকার হয় তাহলে তাদের আবেদনের ভিত্তিতে আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দিতে পারি বা যদি বয়স্ক হয় তাদের বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা এবং প্রতিবন্ধী হলে প্রতিবন্ধী ভাতা’র ব্যবস্থা করতে পারি।

শিশুদের পুনর্বাসন ও শিক্ষায় জেলা প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তার সাথে সমন্বয় করলে তাদের হাতে বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে সেগুলি বাস্তবায়িত হবে।

৩৩ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS