![সিডরের ভয়াল স্মৃতি আর নভেম্বরে অধিকাংশ বন্যায় শংকিত সিডরের ভয়াল স্মৃতি আর নভেম্বরে অধিকাংশ বন্যায় শংকিত](https://spnewsbd.com/wp-content/uploads/2022/11/potoukali.jpg)
সিডরের ভয়াল স্মৃতি আর নভেম্বরে অধিকাংশ বন্যায় শংকিত
![](https://spnewsbd.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
পটুয়াখালী প্রতিনিধি ; ‘সিডোরের সোমায় (সময়) আমাগো ঘরআলায় (স্বামী) গরু দুইডা লইয়া টিলাডায় বইয়া রইছে। গুরাগারা (সন্তানাদি) লইয়া আমি উপজিলায় গেছিলাম। হেই টিলাডার মাডি কাইট্টা (কেঁটে) জমিনে মিশাইয়া হালাইছে। পেরতেক বইন্যায় টিলাডা কামে লাগে। আন্নালে (অন্যথায়) সব ভাইস্সা (ভেসে) যাইবে।’ পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলা সদর ইউনিয়নের নলখোলা গ্রামের মো. আক্কাস মিয়ার স্ত্রী জাহানারা বেগম ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বললেন। সিডরের ভয়াল স্মৃতি আর নভেম্বরে অধিকাংশ বন্যার ঘটনায় শংকিত নলখোলা বন্দরের টিলার (মাটির কেল্লা) আশপাশের গ্রামের মানুষগুলো। বন্যায় গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নিত ওই মাটির কেল্লায়।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নথিপত্র সংরক্ষণ না করার সুযোগে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মাটির কেল্লাটি নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছে। খরিদদার মালিক মাটির কেল্লা কেটে বহুতল ভবন নির্মাণ করে নিয়েছে।
১৯৭০সালে ভয়াবহ বন্যার পর ঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ¡াস কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে প্রাণহানি রোধে সাতটি এলাকায় সাতটি মাটির কেল্লা তৈরি করা হয় সরকারি সহায়তায়। রক্ষণাবেক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের প্রয়োজনে মাটি কেটে কেল্লাগুলো অস্তিত্বহীন করে দিচ্ছে। মধ্য দশমিনা গ্রামের কেল্লাটির মাটিক্ষয় হয়ে গেছে। নদীভাঙনের হুমকির মুখে চর-হাদির টিলাটি। মাটি কেটে নেওয়ায় চাঁদপুর গ্রামের কেল্লাটি ছোট হয়ে গেছে। চর-বোরহানের কেল্লাটির মাটি কেটে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। পাতারচরের টিলাটি পুরো এলাকার সাথে নদীগর্ভে চলেগেছে। ১৯৯৫সালে নির্মিত চর-বাঁশবাড়িয়ার মাটির কেল্লাটি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মূখে রয়েছে ২০১০সালে নির্মিত গোলখালী গ্রামের মাটির কেল্লাটি।
এদিকে, এ উপজেলায় ৯৩টি বিদ্যালয় ভবন সাইক্লোন সেল্টার হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে। ৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে বহুমূখী সাইক্লোন আশ্রয়ণ। ইউপি কমপ্লেক্স ভবন ৭টি, কলেজ ভবন ২টি ও উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ১টি ভবনসহ রয়েছে ১০৯টি ফ্লাড সেল্টার মিলে ৭৮টি ইউনিটে ১হাজার ১৭০জন সেচ্ছাসেবক রয়েছে। করোনাকালীন দীর্ঘ ছুটির কারণে তালাবদ্ধ বিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগ কাজে আসবেনা বলে সিপিপি’র উপজেলা টিম লিডার মোঃ আব্দুল হাই জানায়। তিনি আরও জানান, নভেম্বর মাস আসলেই এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করে, উদিগ্ন হয়ে ওঠে বন্যা খবরে।
অপরদিকে, চলতি বছরের অতিবৃষ্টি ও প্লাবনের কারণে প্রায় ৬দশমিক ৩কিলোমিটার বেঁড়িবাধ ভাঙণের ফলে উপজেলার মূলভূখন্ডর বহুগ্রাম অরক্ষিত হয়ে পরেছে। জেয়ার, প্লাবন বন্যা পরিস্থিতিতে অতিঝুঁকিতে রয়েছে চরবোরহান ইউনিয়ন, দশমিনা ইউনিয়নের চরহাদি ও বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের চর-বাঁশবাড়িয়া এলাকা।
এ বিষয়ে চরবোরহান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারমান মো. নজির আহম্মেদ বলেন, ইউনিয়ন গঠনের পরে কোন বেঁড়িবাধ তৈরী করা হয়নি। এ ইউনিয়নের চর-বোরহান গ্রামে ১৯দশমিক ২কিলোমিটার ও চর-শাহজালালে ৬দশমিক ৮কিলোমিটার বেঁড়িবাধ প্রয়োজন প্রায় ৭হাজার মানুষের জানমাল রক্ষায়।
এ বিষয়ে দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, ‘টিলাগুলো রক্ষায় স্থানীয় লোকদের বলা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে টিলাগুলো স্থানীয় জনসাধারণের উপকারে আসবে, তাই তাদেরই এগুলো রক্ষা করতে হবে। সাইক্লোন সেল্টার হিসেবে নির্মিত বিদ্যালয়গুলোর পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের ডাটাবেজ রয়েছে উপজেলায়। বন্যার আগাম সংকেত পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।