বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক জঠিলতা শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতন বন্ধ শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত

পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক জঠিলতা শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতন বন্ধ শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত

মাহফিজুল ইসলাম রিপন, দিনাজপুর ব্যুরো প্রধান : প্রধান শিক্ষক জঠিলতায় পার্বতীপুর শহরের ঐতিহ্যবাহি পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। দুই মাস থেকে শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতন বন্ধ। প্রধান শিক্ষক জঠিলতা নিরসনে শিগগির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম একেবারে ভেঙ্গে পড়ার আশংকা রয়েছে। বিএড পাশের জাল সনদ দিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগে পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে (পাবালিক স্কুল) প্রধান শিক্ষক মানিক কুমার রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে সহকারী প্রধান শিক্ষক মকলেছুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়ায় এ জঠিলতা দেখা দিয়েছে।

নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর মানিক কুমার পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে এমপিও ভূক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক কাছে অনলাইনে কাগজপত্র জমা দিলে তার বিএড পাশের সনদপত্র জাল বলে ধরা পড়ে। উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আকতারুজ্জামান জানান, প্রধান শিক্ষক মানিক কুমার এমপিওভূক্তির জন্য তিনবার আবেদন করেন। কিন্তু কাগজপত্র যাচাইকালে জাতীয় বিশ^বিদ্যায়ের ওয়েবসাইটে তার বিএড পাশের সনদপত্রের কোন অস্তিত্ব না থাকায় প্রতিবারই ফাইল প্রত্যাখান করা হয়।

বিষয়টি জানতে পেরে পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় (পাবালিক স্কুল) ব্যবস্থাপনা কমিটি জাল সনদপত্রে চাকরি নেওয়ার অভিযোগে প্রধান শিক্ষক মানিক কুমারকে ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল সাময়িক বরখাস্ত করেন। পরে ১৬ জুন চুড়ান্ত বরখাস্ত করে কাগজপত্র আরবিটেশন বোর্ডে পাঠানো হয়। এছাড়া তৎকালিন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এমএ ওহাব সরকার প্রত্যারনা করে জাল সনদপত্রে চাকরি নেওয়ার অভিযোগে পার্বতীপুর রেলওয়ে থানায় মানিকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন (মামলা নং- জিআর-২০/২১, তাং ৩-৬-২০২১)। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে এবং বিচার কার্য শুরু হয়। এরই মধ্যে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে অদৃশ্য খুটির জোরে মানিক অত্যান্ত গোপনে নিজের পছন্দের লোকদের নিয়ে গত ১৬ মে/২০২২ এডহক কমিটি গঠন করে এবং প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব পালনের চেস্টা করে। এ অবস্থায় অভিভাবক সদস্য মাহফিজুল ইসলাম হাইকোটে রিট পিটিশন দায়ের করেন (রিট নং-৬৪১৯/২০২২)। গত ২১ জুলাই/২০২২ রিট পিটিশনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দিনাজপুর কর্তৃক অনুমোদন প্রাপ্ত অবৈধ এডহক কমিটির উপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ হয় এবং কমিটি অনুমোদনকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক আবু হেনা মোস্তফা কামালকে শোকজ করা হয়। হাইকোটের আদেশের প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে জেলা সরকারি কৌশলী (জিপি) দিনাজপুর এর মতামত চাওয়া হয়। চুড়ান্তভাবে বরখাস্তকৃত মানিক কুমার কর্তৃক গঠিত এডহক কমিটি ও দায়িত্ব পালন সম্পূর্ণ অবৈধ এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মকলেছুর রহমান যেভাবে দায়িত্ব পালন করছেন, বর্তমান মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এবং বিপরীত কোন আদেশ না হওয়া পর্যন্ত সেভাবে দায়িত্ব পালনে আইনগত কোন বাধা নেই বলে গত ১১ আগস্ট জিপি মতামত প্রধান করেন।

সুত্রমতে, কমিটি না থাকায় বিধি অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মকলেছুর রহমানের স্বাক্ষরে এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিস্বাক্ষরে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বিল ছাড়া হওয়ার কথা। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মকলেছুর রহমান জুলাই-আগস্ট মাসের বেতন বিলে স্বাক্ষর করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে জমা দিলেও ইউএনও তাতে প্রতিস্বাক্ষর করেননি। ফলে উচ্চ দ্রব্যমূল্যের বাজাওে ১৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী দু’মাস ধরে বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ ঈসমাইল জানান- চুড়ান্ত বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক মানিক কুমার এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মকলেছুর রহমান পৃথক পৃথক দুটি বিল জমা দেওয়ায় তিনি কোন বিলেই প্রতিস্বাক্ষর করেননি। তাছাড়া দুপক্ষই আদালতে গেছেন। এ অবস্থায় আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছাড়া তিনি বিলে স্বাক্ষর করতে পারেন না।

অভিযুক্ত ও বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক মানিক কুমার রায় এমপিও ভুক্তির জন্য জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের সদনপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান- তিনি ২০০৪ সালে বেসরকারি রয়েল বিশ^বিদ্যালয় থেকে বিএড পাশ করেন। রয়েল বিশ^বিদ্যালয় থেকে বিএড পাশের সনদপত্র জমা দিয়ে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রথমে উচ্চতর স্কেল গ্রহণ করেন এবং পরে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৪ সালে বিএড পাশ করে থাকলে ২০০৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত পার্বতীপুর বিএড কলেজ থেকে বিএড পরীক্ষা দিয়েছিলেন কেন এবং চুড়ান্ত বরখাস্ত করার সময় আপনি জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের বিএড পাশের সদনপত্রটি সঠিক বলে দাবি করেছিলেন, অথচ এখন অস্বীকার করছেন কেন- প্রশ্ন দুটি করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

উল্লেখ্য, মানিক কুমার ২০০০ সালে শহরের বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে ২০০১ সালে এমপিও ভূক্ত হন। ২০০৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত পার্বতীপুর বিএড কলেজ থেকে বিএড পরীক্ষা দিয়ে ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হন। কিন্তু জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে বিএড পাশের জাল সাময়িক সনদপত্র জমা দিয়ে ২০১২ সালে বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সহাকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। মানিক কুমারের জমা দেওয়া সাময়িক সনদপত্রটি যার রোল নং-৬১৪৬৮১, রেজি:নং-৯৯৪৩৬৮, শিক্ষাবর্ষ ২০০৫-২০০৬, পরীক্ষা ২০০৭, দ্বিতীয় শ্রেণি, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে ইস্যু করা হয়নি মর্মে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়। এর আগে এই জাল সাময়িক সনদপত্র দিয়ে তিনি শহরের বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সহাকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে সাতবছর চাকরি করেন। মানিক উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের বছিরবানিয়া গ্রামের প্রফুল্ল কুমার রায়ের ছেলে।

১৬৩ বার ভিউ হয়েছে
0Shares