শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সেনবাগে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের সংঘর্ষ : পুলিশের হামলা ও আ.লীগের কার্যালয় ভাংচুরের দুই মামলায় আসামি ১৩৪৮ গ্রেফতার ১৫

সেনবাগে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের সংঘর্ষ : পুলিশের হামলা ও আ.লীগের কার্যালয় ভাংচুরের দুই মামলায় আসামি ১৩৪৮ গ্রেফতার ১৫

মোঃ জাহাঙ্গীর আলম শায়েস্তানগরী, নোযাখালী প্রতিনিধি :  নোয়াখালীর সেনবাগে বিএনপির কাজী মফিজ গ্রæপ ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওযা, সংঘর্ষ ,পুলিশের ওপর হামলা ও আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয় এবং নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ভাংচুরের ঘটনায় পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ওই মামলা দুইটিতে আসামি করা হয়েছে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমান, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাহার চেয়ারম্যান, সেনবাগ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ওবায়দুল হক, সদস্য সচিব মোক্তার হোসেন ইকবাল, নোয়াখালী জেলা কৃষকদল সভাপতি রবিউল হাসান পলাশ, সেনবাগ পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক আবদুল হান্নান লিটন, সদস্য সচিব কামাল উদ্দিন বাবুল, বিএনপির নেতা ভিপি মফিজুল ইসলাম, সেনবাগ পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি জহিরুল ইসলাম লিটন, সাবেক সেক্রেটারী ফারুক বাবুল, নোয়াখালী জেলা মহিলা দল সাংগঠনিক সম্পাদিকা মনোয়ারা বেগম মনিসহ দুই মামলায় এক হাজার ৩৪৮ জন নেতাকর্মীকে।

এর মধ্যে একটি মামলা দায়ের করেছে সেনবাগ থানার এসআই নোমান হেসেন অন্য মামলটির বাদী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন উজ্জল মেম্বার। মামলা দুইটি দায়েরের পরপরই পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে।

পুলিশ জানায়, সোমবার বিকেলে উপজেলার ৩নং ডমুরুয়া ইউনিয়নের গাজীরহাট চৌ-মোড় এলাকায় বিএনপি কাজী মফিজ গ্রæপ তেল,গ্যাস,বিদ্যুৎ ও গুম,খুনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভার ডাকদেয়। একই সময় আওয়ামীলীগ ২১ আগষ্টের হামলা ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে পাল্টা বিক্ষোভ মিছিলের ডাকদেয়। এসময় উভয় মিছিল বের করলে বিএনপি ও আওয়ামীলীগ কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় বিএনপির মিছিল থেকে কাজী মফিজুর রহমানের নেতৃত্বে দুই থেকে আড়াই হাজার নেতাকর্মী গাজীরহাট মোড়ে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র তছনছ করে এবং জাতির পিতা,প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি মোরশেদ আলমের ছবি ভাংচুর করে ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক শওকত হোসেন কানন সহ থেকে ১০জন নেতাকর্মী আহত হয়। এসময় আওযামীলীগ কার্যালয়ে হামলা চলাকালে দায়ীত্বরত পুলিশ হামলা কারীদের বাঁধা দেওয়ার চেষ্ঠা করলে বিএনপির কাজী মফিজ গ্রæপেরে নেতাকর্মীরা পুলিশের চড়াও হয়ে তাদেরকে লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে সেনবাগ থানার এসআই শ্রীবাস পাল, কনষ্টেবল আরমান ও সুফিয়ান আহত হয়।

সরকারি কর্তব্য কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রাতে সেনবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমানসহ ২২৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৪০০ থেকে ৪৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে ।

অপরদিকে একই ঘটনায় আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ে হামলা ভাংচুর ও দলীয় নেতাকর্মীদের আহত করার ঘটনায় ডমুরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সাখাওয়াত হোসেন প্রকাশ উজ্জল বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলাও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমানসহ ২২৩ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়াও ওই মামলায় আরও ৩৫০ থেকে ৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে ঘটনার পর থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত দুইটি মামলায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে সেনবাগ থানা পুলিশ হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো (ফারুক গ্রæপের) সেনবাগ পৌর বিএনপির আহŸায়ক কমিটির সদস্য ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ কাউন্সিলর মহিন উদ্দিন (৪২), পৌরসভা ছাত্রদলের সদস সচিব মিয়া মোহাম্মদ ওয়ালিদ বিন হায়দার (২৫),মোহাম্মদপুর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক জেলা কমিটির সদস্য জাফর খান (৬০), ছাত্রদল কর্মী হাফিজুর রশিদ মানিক (২২),( কাজী মফিজ গ্রæপের ) শহিদুল ইসলাম (১৯), মোঃ আকাশ (১৯), ইমরান হোসেন রানা (১৯), মোঃ মুরাদ (২৫), মোঃ হৃদয় (২২), হুমায়ুন কবির (৩০), স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী মোঃ ই¯্রাফিল (৩০), সাদ্দাম হোসেন পলাশ (৩৫) ,তাজুল ইসলাম রতন (৫৫)বিএনপির কর্মী মোহাম্মদ আলী (৫২), কাদরা ইউনিয়ণ যুবদল সভাপতি ইমাম হোসেন (৪০) ।এদিকে ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতে ডমুরুয়া চৌশোড় সংলগ্ন কাজী মফিজের ইটভাটার একটি অফিসঘর রহস্যজনক ভাবে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়ও বেলা ১১ টার দিকে সেনবাগ পৌরশহরের উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে অজ্ঞাত দুবৃত্তরা হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাংচুর করে।

সেনবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় দুইটি মামলা দায়ের হওয়ার বিষটি নিশ্চিত করে বলেন, মামলা দুইটির একটির বাদী পুলিশ। অন্যটির বাদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা সাখাওয়াত হোসেন ওরফে উজ্জল। দুইটি মামলায় গতকাল রাতে ১৫ জন আসামিকে গ্রেফতর করা হয়েছে। তাদেকে আজ মঙ্গলবার বিকেলে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করা হয়। এ ছাড়া মামলার অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ওসি।

প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার বিকেলে সেনবাগ উপজেলার গাজীরহাট মোড় এলাকার কেবিএম ইটভাটাই কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে উপজেলা বিএনপির একাংশের নেতা কাজী মফিজুর রহমান। বিকেলে বিএনপির একটি মিছিল সমাবেশ স্থলের দিকে যাওয়ার পথে গাজীরহাট মোড়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মুখোমুখি হয়। এ সময় দুইপক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও তিনটি দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শর্টগান থেকে ১১টি ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে।

১২০ বার ভিউ হয়েছে
0Shares