মঙ্গলবার- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দহগ্রামে কৃষকের গরু নিয়ে সিন্ডিকেটের অবৈধ স্লিপ বাণিজ্য

দহগ্রামে কৃষকের গরু নিয়ে সিন্ডিকেটের অবৈধ স্লিপ বাণিজ্য

লালমনিরহাট  প্রতিনিধ। লালমনিরহাটের : বহুল আলোচিত দহগ্রামে গরুর একটি স্লিপ ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। চাহিদার ওপর নির্ভর করে অনেকটা শেয়ার বাজারের মত এই দর উঠানামা করে। এখানে গরু কেন্দ্রীক একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ওই সিন্ডিকেটের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন। ভারত থেকে চোরাই পথে যেসব গরু দহগ্রামে ঢুকছে তার সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের কারনে দহগ্রামের সাধারণ কৃষক ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন রশিদ (স্লিপ) পায়না। সংশ্লিষ্ট সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সুত্র জানায় ভারত বেষ্টিত ২২ দশমিক ৬৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দহগ্রাম  ইউনিয়নে প্রায় ৭ হাজার পরিবার বাস করেন। মুষ্টিমেয়  কিছু চাকুরীজীবি পরিবার ছাড়া অধিকাংশ পরিবার আয় বলতে একমাত্র কৃষি। কৃষি পণ্য বাজারে বিক্রি করে তারা  সংসারের চাহিদা পূরণ করেন। দেশের মূল ভূখণ্ডের সাথে যোগাযোগের তাদের একমাত্র পথ তিনবিঘা করিডোর। বাংলাদেশীদের যাতায়াতের জন্য ২৪ ঘন্টা ওই গেট উন্মুক্ত রাখা হলেও, নিয়ন্ত্রণ করে ভারতের বিএসএফ। ১৯৯২ সালের ২৬ জুন করিডোর গেট খুলে দেয়ার পর কৃষকরা সাংসারিক প্রয়োজনে অবাধে গরু এনে পাটগ্রাম বাজারে বিক্রি করত। কিন্তু পরে বিভিন্ন অযুহাত সৃষ্টি করে কৃষকের অবাধে গরু এনে বাজারে বিক্রি করা বন্ধ করে দেন বিএসএফ। ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে দুদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতে ৩০টি করে প্রতি সপ্তাহে ৬০টি গরু করিডোর গেট দিয়ে দেশের মূলভূখন্ডে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। ওই আদেশ কার্যকর হলে দহগ্রামের কিছু মানুষের ভাগ্যের চাকা খুলে যায়। গরু গুলো কৃষকের জন্য বরাদ্দ থাকলেও তারা বরাবরে থাকেন উপেক্ষিত।
একটি গরু বাজারে বিক্রি করার পূর্বে একজন কৃষককে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্য ও ইউনিয়ন পরিষদের  চেয়ারম্যানের নিকট থেকে রশিদ (স্লিপ) সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু এই স্লিপ তারা মাসের পর মাস মেম্বার ও চেয়ারম্যানের নিকট ধর্না দিলেও তাদের ভাগ্যে একটি স্লিপ জুটেনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দহগ্রাম ইউনিয়নের কাতীপাড়া এলাকার এক কৃষক অভিযোগ করে বলেন ৬ মাস এক বছর ঘুরেও একটি স্লিপ পাওয়া যায়না। তবে উপায়ন্তর না থাকলে পরে বাধ্য হয়ে তাদের ৩৫-৪০ হাজার টাকায় একটি স্লিপ কিনে নিয়ে তার পরে বাজারে এনে গরু বিক্রি করতে হয়। এভাবে কৃষকরা। প্রতিনিয়তহয়রানীর শিকার হচ্ছে। পরিবারে কেউ অসুস্থ হলে অথবা বিয়ে সাদীর প্রয়োজনে তারা পালিত গরু বিক্রি করতে পারেননা।
তার আগেই গরু সিন্ডিকেটের সদস্যরা মেম্বার ও চেয়ারম্যানের নিকট থেকে সব স্লিপ নিয়ে যায়। সুত্রটি আরও জানায় সিন্ডিকেটের কোন কোন সদস্য প্রতিমাসে ৭ থেকে ৮টি পর্যন্ত গরুর স্লিপ নিয়ে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদে রক্ষিত রেজিষ্ট্রার এবং গরু গুলো কোন কৃষকের নামে দেখানো হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হলে তার সত্যতা মিলবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে দহগ্রামে ৩০ থেকে ৩৫ জনের যে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা ভারত থেকে চোরাই পথে অবৈধভাবে গরু এনে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্য ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট থেকে স্লিপ নিয়ে বিজিবির সহায়তায় করিডোর গেট দিয়ে পাটগ্রাম বাজারে এনে বিক্রি করে। অভিযোগ রয়েছে কোন কোন সিন্ডিকেট সদস্য কোন কোন ওয়ার্ড সদস্যকে লাখ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে রেখেছেন। গত নির্বাচনে তারা ওই সদস্যদের পেছনে মোটা অংকের টাকাও খরচ করেছেন। নির্বাচিত হওয়ার পরে কোন সদস্যের গলায় টাকার মালা পরিয়ে আনন্দ উল্লাস করেছেন। সেসব ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে প্রতি হাটে (বৃহসপতিবার ও রোববার) যে ৩০টি গরু বিক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়। এসব গরুর মধ্যে দহগ্রাম চেয়ারম্যানের নামে চারটি ওয়ার্ড সদস্য তিনটি তবে কেউ দু’টি আর সংরক্ষিত মহিলা সদস্যরা একটি করে পেয়ে থাকেন। চাহিদা অনুযায়ী একটি স্লিপের মুল্য নীচে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। সেই হিসাবে প্রতি সপ্তাহে দহগ্রামে শুধু গরুর অবৈধ স্লিপ বানিজ্যই হচ্ছে প্রায় দুই কোটি টাকা।
করিডোর গেট পার করে হাটে এনে বিক্রি করা পর্যন্ত একটি গরুতে স্লিপ সহ খরচ হয় প্রায় ৬০ হাজার টাকা। বিজিবি সহ বিভিন্ন সংস্থাও এই অবৈধ টাকার ভাগ পান। এ ছাড়াও গরুর গোস্ত সহ অন্যান্য খাত তো আছেই। সেখানেও আছে লাখ লাখ টাকার অবৈধ আয়। গত ৯ জুলাই করিডোর গেট দিয়ে ৩০টি গরু নিয়ে যাওয়ার পূর্ব মুহুর্তে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবির সোর্সম্যান রাখা মানুলের হাতে লাঞ্চিত হন পাটগ্রাম প্রেসক্লাবের  সদস্য শামসুদ্দোহা। এ বিষয়ে দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানকে মুঠো ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
৪৪ বার ভিউ হয়েছে
0Shares