বৃহস্পতিবার, ৯ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভোলার খায়ের হাট হাসপাতাল ছিল তোফায়েল আহমেদের স্বজনের জলসা ঘর

ভোলার খায়ের হাট হাসপাতাল ছিল তোফায়েল আহমেদের স্বজনের জলসা ঘর

১৫৬ Views

ভোলা প্রতিনিধি : ভোলা-খায়ের হাট (কোড়ালিয়া গ্রাম)সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা তোফায়েল আহমেদের গ্রামের বাড়ির কাছে হাসপাতালটি সদর, দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার বর্ডার এলাকার প্রায় দুই লাখ মানুষ জরুরী সেবা নিতেন। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পরে ওই হাসপাতালটি তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা, ভাগ্নে ও বিভিন্ন পর্যায়ের স্বজনেরা জলসা ঘর হিসাবে ব্যবহার করতেন। দিনের বেলায় সেখানে বসতো জুয়ার আসর। রাতে চলতো জলসা ও নারী ব্যবসা। প্রতিদিন হাসপাতালে কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকার মাদক বেচা কেনা চলতো। তাই কোন ডাক্তার ও নার্স থাকতে পারতেননা। তাই রুগীরা হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার ও নার্স না পেয়ে ভোগান্তি পরতেন। কাগজে-কলমে হাসপাতালটি চালু থাকলেও রুগীদের কোন কার্যক্রম ছিলনা। হাসপাতালের সকল প্রকারের অর্থ ভাগা ভাগী করে নিতেন তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা সাবেক চেয়ারম্যান ইফতেখারুল হাসান স্বপন ও তার চাচাতো এবং ফুফাতো ভাইয়েরা।
হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, ভোলা সদর, দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার বর্ডার এলাকার প্রায় দুই লাখ মানুষ জরুরী চিকিৎসা সেবা নিতেন। এখনও হাসপাতালটিতে মিলছে না তেমন চিকিৎসা সেবা। কোন রোগী ভর্তি করা হয়না। হাসপাতালে বর্তমানে রয়েছে একজন ডেন্টাল সার্জন ও পাশের উপজেলা থেকে সংযুক্তিতে আছেন একজন মেডিকেল অফিসার। তবে এই মেডিকেল অফিসারও দিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য বহির্বিভাগে বসে দিচ্ছেন জ্বর ও ঠান্ডাসহ সামান্য রোগের চিকিৎসা। কোন প্রকার ঔষধ নাই সেখানে, রোগীকে বাহির থেকে কিনে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
রোগীর স্বজন রোজিনা বেগম ও সাদিয়া আক্তার জানান, তারা সন্তাানদের চিকিৎসা করাতে খায়ের হাট হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু এখানে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। একজন মেডিকেল অফিসার আছেন। ডাক্তার কিছু ঔষধ লিখে দিয়েছেন সেগুলো বাহির থেকে কিনে খাওয়াবো। যদি ভালো হয় তাহলে তো ভালো, আর না হলে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল কিংবা বরিশাল গিয়ে ডাক্তার দেখাতে হবে।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আব্দুল মন্নান জানান, তিনি ডায়রিয়া জন্য ডাক্তার দেখাতে এসেছেন। ডাক্তার তাকে দেখে কয়েকটি ঔষধ লিখে দেন। আব্দুল মাজেদ নামে এক রোগী বলেন, নিচে পরে গিয়ে বুকে ও কোমরে ব্যথা পেয়েছি। খায়ের হাট হাসপাতালে গেলে ডাক্তার বলেন এক্সরে ছাড়া কিছু বলা যাবে না। এখানে পরীক্ষার যন্ত্রাংশ না থাকায় ভোলা সদর হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করাতে বললেন ডাক্তার। হাসপাতাল এলাকার মাকসুদুর রহমান শিকদার, রাইসুল ইসলাম ও সুমন জানান, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পরে ওই হাসপাতালটি তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা, ভাগ্নে ও বিভিন্ন পর্যায়ের স্বজনেরা জলসা ঘর হিসাবে ব্যবহার করতেন। দিনের বেলায় সেখানে বসতো জুয়ার আসর। রাতে চলতো জলসা ও নারী ব্যবসা। প্রতিদিন হাসপাতালে কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকার মাদক বেচা কেনা চলতো। তাই কোন ডাক্তার ও নার্স থাকতে পারতেননা। তাই রুগীরা হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার ও নার্স না পেয়ে ভোগান্তি পরতেন। কাগজে-কলমে হাসপাতালটি চালু থাকলেও রুগীদের কোন কার্যক্রম ছিলনা। হাসপাতালের সকল প্রকারের অর্থ ভাগা ভাগী করে নিতেন তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা সাবেক চেয়ারম্যান ইফতেখারুল হাসান স্বপন ও তার চাচাতো এবং ফুফাতো ভাইয়েরা। এখনতো হাসপাতাল মুক্ত, কোন দখলবাজ নাই।
খায়ের হাট হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধ রয়েছে। আর জরুরী বিভাগেও সামান্য সমস্যা ছাড়া কোনো চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি হাসপাতালে পরীক্ষার যন্ত্রাংশও নেই। চিকিৎসার জন্য যেতে হয় প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। তাই দ্রæত হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা পুরোদমে চালু রাখার দাবী জানান তারা।
খায়ের হাট হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত¡াবধায়ক ডেন্টাল সার্জন ডা.আরেফিন রশীদ জানান, এই হাসপাতালে ৯ জন চিকিৎসকের পদে ১ জন ও ১৩ নার্স পদের মধ্যে ২ জন রয়েছেন। এছাড়া চিকিৎসক-নার্সসহ তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে মোট ৫৩ জন থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ১৫ জন। এতে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষকে বেশ কয়েকবার জানানো হয়েছে।
ভোলা সিভিল সার্জন ডা. মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, খায়েরহাট ৩০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সসহ সব সমস্যা সমাধানে লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর ১ জন চিকিৎসক দেওয়া হলেও তিনি এখনো যোগদান করেননি। বর্তমানে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এটি দ্রæত সমাধানের চেষ্টা চলছে। পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ হলে সব পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। রোগী ভর্তি, ঔষধ ও কাদ্যের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

Share This