সোমবার- ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৭ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পটুয়াখালীতে জীবন যুদ্ধে আকলিমা

পটুয়াখালীতে জীবন যুদ্ধে আকলিমা

সঞ্জয় ব্যানার্জী, পটুয়াখালী প্রতিনিধি : জীবনের সাথে জীবীকার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে বৃদ্ধা এক নারী অনন্য দৃষ্টান্ত পটুয়াখালীর দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলার সীমানা নির্দেশকারী সুতাবাড়িয়া নদীর একমাত্র খেয়ার মাঝি আকলিমা বেগম (৬৪)।

জানা যায়, জেলার গলাচিপা উপজেলার বকুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড দোয়ানী গ্রামের মৃত ফুল খাঁ’র স্ত্রী আকলিমা বেগম সংসার ও জীবিকার প্রয়োজনে স্বামীর মৃত্যুর পর প্রায় আঠের বছর ধরে বৈঠা হাতে খেয়ার নৌকার মাঝির কাজ করছেন। নারী হয়েও প্রথম দিকে তিনি সমাজের বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে আপন মনে বাইছেন খেয়া তরী। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন ওই নদীর উভয় পাড়ে দুই উপজেলার কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের সেতুবন্ধনে। অনেক পথচারীর পরিচিত ও প্রিয় মুখ তিনি।

একান্ত সাক্ষাৎকারে আকলিমা বেগম জানান, তিন মেয়ে নিয়ে স্বামী ফুল খাঁ’র সাথে সুখেই কাটছিলো তার সংসার। আঠের বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর তিন কন্যা সন্তান নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন তিনি। পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় জীবন জীবীকার সংগ্রামে আপোষহীন হয়ে উঠেন আকলিমা। বৈঠা হাতে খেয়া তরী পারাপার শুরু করেন জেলার দশমিনা উপজেলার আলীপুরা ইউনিয়নের মীরমদন গ্রাম ও গলাচিপা উপজেলার বকুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের দোয়ানী গ্রামের সীমানা নির্দেশকারী মধ্যবর্তী সুতাবাড়ীয়া নদীতে। খেয়া তরী পারাপারের যাত্রীদের থেকে পাওয়া সামান্য টাকায় কোনরকমে সংসার চললেও তিন মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করার স্বপ্ন ছিল আকলিমার। কিন্তু দারিদ্রতার কষাঘাত বা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ওই স্বপ্ন পূরণের বাস্তবতা কোথায় যে থমকে গেছে তা অজানা থেকেই গেল আকলিমার কাছে।

সরেজমিনে ওই নদীর পাড়ে গতকাল সোমবার গিয়ে দেখা যায়, নদীটি দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষ। কেউবা মটর সাইকেল ও বাইসাইকেল নিয়েও পারাপার হয়। ওই এলাকায় তাদের নদী পারাপারে একমাত্র মাধ্যম হলো আকলিমা বেগমের খেয়ার নৌকা।

আরোও জানা যায়, সকাল ৭ টা থেকে শুরু করে রাত ৯ টা পর্যন্ত রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিঁজে শক্ত হাতে বৈঠা ধরে নৌকার মাঝি হয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের চাপ পড়ে আকলিমার শরীরে। তবুও থেমে যায়নি এ সংগ্রামী বৃদ্ধ নারী। পারাপারে ২ থেকে ৫ টাকা করে যাত্রী প্রতি ভাড়া নিয়ে প্রতিদিন ৫/৬ শত টাকা হওয়ার কথা থাকলেও অনেকে ভাড়া না দেয়ায় প্রতিদিন আয় হয় দুইশত থেকে তিনশত টাকা। তা দিয়েই কোনরকমে চলে যায় আকলিমার সংসার। কষ্ট করে তিন মেয়েকে বিয়ে দিলেও ছোট মেয়ে জাহানুর বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যেই এক কন্যা সন্তান মিথিলাসহ বিধবা হন। বিধবা মেয়ে জাহানুর ও নাতনী মিথিলাকে নিয়েই নদীর ¯্রােতের সাথে সংগ্রাম করে জীবন জীবিকা চলছে আকলিমা বেগমের।

এবিষয়ে দশমিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, উনি একজন সফল জয়ীতা। এই ধরনের সফল জয়ীতাদের আমরা খুঁজি। আর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে।

এবিষয়ে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশিষ কুমার জানান, আকলিমা বেগমকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিধি মোতাবেক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে।

৬০ বার ভিউ হয়েছে
0Shares