ট্রেনে কাটা রুহুল আমিন সম্পর্কে ফেসবুকে মিথ্যা তথ্যে ভরপুর, পরিবার যা বললেন

ট্রেনে কাটা রুহুল আমিন সম্পর্কে ফেসবুকে মিথ্যা তথ্যে ভরপুর, পরিবার যা বললেন
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘায় ট্রেনের নিচে পড়ে এক পেঁয়াজচাষি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন, এমন একটি ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘হৃদয়বিদারক গল্প’ ছড়িয়ে পড়ে। যখন যার তার ভিডিও সাথে তার ট্রেনের ভিডিও যুক্ত করে সেড মিউজিক ব্যবহার করে ব্যক্তিগত আইডি বা পেজে প্রচার করছে এই পেঁয়াজচাষির ‘আত্মহত্যা’ বলে।
সেই সাথে ফেসবুকের ক্যাপশনে লিখে:“ঘটনা রাজশাহী আড়ানির। বৃদ্ধের স্ত্রী ৮মাস আগে মারা যায়। এরপর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে কিছুদিন বাবাকে রাখার পর আর রাখতে চায়না ওনাকে। এ নিয়ে অনেক ঝগড়া। এমনো রাত গেছে বৃদ্ধ সারারাত উঠানে ছিল ছেলেরা দরজা খুলেনিসহ আরো কিছু।
ফেসবুকে ঘটনাটি পড়ে সবাই বৃদ্ধের সন্তানদের তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে কমেন্ট করছিলেন। এই সব পোস্ট, কম্মেন্ট দৈনিক নিরপেক্ষ প্রতিবেদকের চোখে খুব ভালো করেই পরে। সঠিকটা জানতে অনুসন্ধানের জন্য  যাওয়া হলো বৃদ্ধের বাড়িতে।
কথা হয় শোকাহত পরিবারের সঙ্গে। যোগাযোগ করা হয় তার বাড়ির পাশের এক প্রতিবেশির সাথে, সেই আসল তথ্য বের করতে অনেক সহযোগীতা করেন। সাথে নেওয়া হলো প্রতিবেদকের সহযোগী নাহিদ ইসলাম কে। পরে তিনজন বাঘা উপজেলার মাঝপাড়ার বাউসায় তাঁদের (রুহুল আমিন) বাড়িতে যাই।
বাড়িতে গিয়ে কথা হয় এক বৃদ্ধার সাথে তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তার (রুহুল আমিন) স্ত্রী নাম মরিয়ম বেগম। অবাক লাগে, ফেসবুকে লিখা হয়েছে তাঁর স্ত্রী আট মাস আগে মারা গেছেন। এরপর তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, ছেলে-মেয়ে কয়জন? তিনি বলেন তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে ঈশ্বরদীতে, সেখানেই থাকেন। আর তাঁর ছেলে ঢাকায় একটি চাকরি করেন। সেখানে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। বাড়িতে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজন থাকতেন।
এরপর আর বুঝতে বাকি থাকে না যে দুই সন্তানের জিনিসপত্র ফেলে দেওয়া, দরজা বন্ধ করে বাবাকে বাইরে রাখা, চলে যেতে বলা , ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ঘটনাগুলোর সত্যতা নেই।
কথা হয় ছেলে মীর রনির সাথে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায় একটা ছোট চাকরি করি। ফেসবুকে আমার নামে যা লেখা হয়েছে, সব তাদের ভিউ কামানোর জন্য, সব  মিথ্যা। আমার মা এখনো বেঁচে আছেন। আমরা খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি।
পরিবারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, পেঁয়াজ চাষের জন্য মীর রুহুল আমিন কোনো ঋণ করেছিলেন কি না। তখন তাঁর স্ত্রী মরিয়ম বেগম বলেন, এনজিও থেকে ঋণ করেছেন। কিন্তু কিস্তি খেলাপি হয়নি। নিয়মিত কিস্তি দিয়েছেন। এটা নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই।
মেয়ে রুমি খাতুন বলেন, আমি বাবাকে অনেক ভালোবাসি, বাবাও আমাকে অনেক ভালোবাসেন। ফেসবুকে কিছু কিছু লিখা বা ভিডিও দেখছি যা মেনে নেওয়া কষ্টকর।
আত্মহত্যার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবা অনেক চাপা স্বভাবের। আমাদের সাথে সহজে কোন কিছু সেয়ার করে না। আমার বাবা কেন এমন কাজ করলো আমরা ভাবতে পারছি না।
রেলওয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, পরিবারের সঙ্গে পুলিশ কথা বলে জানতে পেরেছেন, এই ঋণের দুশ্চিন্তায় মীর রুহুল আমিন ১৫–২০ দিন ধরে কারও সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলেননি। শারীরিক একটু সমস্যাও ছিল। মূলত ঋণের কারণে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন।
১৪ বার ভিউ হয়েছে
0Shares