বুধবার- ২৬শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১২ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
<span class="entry-title-primary">কাউন্টারেই হজম রেলের অর্ধেক টিকেট</span> <span class="entry-subtitle">পার্বতীপুরে চারগুন দামে কালোবাজারে মিলছে টিকেট</span>

কাউন্টারেই হজম রেলের অর্ধেক টিকেট পার্বতীপুরে চারগুন দামে কালোবাজারে মিলছে টিকেট

আব্দুল্লাহ আল মামুন: দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ের টিকিট কাউন্টার থেকেই হাওয়া হয়ে গেল ঢাকাগামী ট্রেনের অর্ধেক টিকেট। লাইনে দাঁড়িয়েও টিকেট না পেয়ে ফিরে গেছেন শতাধিক যাত্রী। ১৮০টি আসনের বিপরীতে ৪৩ যাত্রীকে দেওয়া হয় মাত্র ৮৬টি টিকেট। কাম্যসংখ্যক টিকেট যাত্রীদের কাছে বিক্রি না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে।

সরেজমিন মঙ্গলবার সকালে স্টেশনে গেলে ২নং কাউন্টার সামনে অগ্রিম টিকেট প্রত্যাশী যাত্রীদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও রহস্য জনক কারনে ২৩ মিনিট বিলম্বে ৮টা ২৩ মিনিটে টিকেট বিক্রি শুরু করেন কর্তৃপক্ষ। এ দিন ১৬ জুলাই’র ঢাকাগামী আন্তঃনগর নীলসাগর, একতা, দ্রæতযান, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট বিক্রি করা হয়। সকাল ৯টা ৫৩ মিনিটে শেষ হয়েছে বলে মাইকে ঘোষনা দেওয়া হয় কাউন্টার থেকে।

টিকেট বিক্রি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাউন্টারের সামনে কয়েকজন সংবাদকর্মী অবস্থান করে টিকেট গ্রহীতা যাত্রীদের সাথে কথা বলেন। এতে দেখা যায়, নীল সাগর ট্রেনের ৭ যাত্রীর কাছে ১৪টি, একতা ৭ যাত্রীর কাছে ১৪টি, দ্রæতযানের ৯ যাত্রীর কাছে ১৮টি ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের ২০ যাত্রীর কাছে ও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের ৪০টি মিলে ৮৬টি শোভন চেয়ারের টিকেট প্রকাশ্যে বিক্রি করা হয় কাউন্টার থেকে। অথচ এখানে বরাদ্দ রয়েছে ১৮০টি আসন। এ ছাড়াও বরাদ্দ থাকা ১৮টি এসি চেয়ারের বিপরীতে ১৪টি টিকেট ৭ যাত্রীর কাছে বিক্রি করা হয়।

জানাযায়, পার্বতীপুরে টিকেট কাউন্টারের একজন বুকিং হেডক্লার্ক এর নেতৃত্বে ৮জন বুকিং সহকারী কাজ করেন। অভিযোগ রয়েছে বুকিং ক্লার্ককের মধ্যে কয়েকজন টিকেট কালোবাজারী সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত রয়েছন। সকাল ৮টায় টিকেট বিক্রি হওয়ার সাথে সাথে কাউন্টারের ভিতরেই টিকেট কেটে রাখতে শুরু করেন তারা। লাইনে টিকেট বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে নিজেদের প্রয়োজনীয় টিকেট কেটে রাখেন তারা।

এ ক্ষেত্রে পার্শে^র আরো একটি কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় এ কাজে। কেটে রাখা টিকেট বেশি টাকায় তুলে দেওয়া হয় কালোবাজারীদের হাতে। এ ছাড়াও তদবির হিসেবে আসা তালিকা অনুযায়ী টিকেটও কেটে রাখেন তারা। ফলে কয়েক হাত ঘুরে ৪৪০টাকার টিকেট কালোবাজারে বিক্রি চার পাঁচগুন বেশিতে। এতো গেল শোভন চেয়ারের কথা। এসি চেয়ার কিংবা বার্থের টিকিটের মূল্য আকাশ চুম্বি।

টিকেট কাটতে আসা শহরের বাবু পাড়ার জীবন বলেন, তিনি পুরুষ লইনের ৭ নম্বর সিরিয়ালে ছিলেন। অথচ তাকে কোন এসি কোচের টিকেট দেওয়া হয়নি। বরং আমাকে কালোবাজারী আখ্যায়িত করা হয়েছে কাউন্টার থেকে। অনেক তর্ক করার পর আমাকে নীল সাগর ট্রেনের ২টি সাধারন আসনের টিকেট দেওয়া হয়েছে। অথচ আমি হিসেবে করে দেখেছি আমার সামনে একজন মহিলাসহ ৫টি ট্রেনের মাত্র ১৪টি এসি কোচের টিকেট বিক্রি করা হয়েছে।

এদের মধ্যে দ্রæতযানের ৪টি, একতা’র ৪টি, নীল সাগরের ২টি, কুড়িগ্রামের ২টি ও পঞ্চগড় ট্রেনের ২টি আসন কিনেছেন অবসর প্রাপ্ত টিটি নারগীজ পারভীন টুনি। অথচ আরো এসি চেয়ারের টিকেট ছিল কাউন্টারে।

ফয়সাল নামের আরেক যাত্রী অভিযোগ করেন, আমরা এ্যপসে লক্ষ করছি টিকেট বের হওয়ার চেয়ে কাউন্টার থেকে আসন মাইনাস হচ্ছে বেশি। তিনি বলেন, বাইরে মনিটর দেওয়া থাকলে এমন কর্মকান্ড করতে পারতেন না বুকিং স্টাফরা।

স্টেশন মাস্টার মোঃ শওকত আলী বলেন, পার্বতীপুর কাউন্টার থেকে আন্তঃনগর ৫টি ট্রেনের জন্য শোভন চেয়ার ১৮০টি ও এসি চেয়ার ১৮টি বরাদ্দ আছে। টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট বিক্রি করতে বুকিং হেডক্লার্ক নিয়োজিত আছেন। তাদের কার্যক্রম মনিটর করার জন্য একজন সহাকরী বানিজ্যিক কর্মকর্তাও রয়েছেন। টিকিট বিক্রির বিষয়ে তারাই ভাল বলতে পারবেন।

এ ব্যপারে সহকারী বানিজ্যিক কর্মকর্তা নূর-এ-আলম কাউন্টারে টিকেট কেটে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বরাদ্দকৃত সকল টিকেট যাত্রীদের মাঝে বিক্রয় করা হয়েছে। তবে, কি কারনে ২৩ মিনিট বিলম্বে টিকিট বিক্রয় শুরু করা হয়েছে তার কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি এই কর্মকর্তা।

রেলের পশ্চিম জোনের প্রধান বানিজ্যিক কর্মকর্তা সুজিত কুমার বিশ^াস বলেন, টিকেট বিক্রি কার্যক্রম তদারকীর জন্য পার্বতীপুরে একজন কর্মকর্তা রয়েছেন। গড়মিলের বিষয়টি তিনি বলতে পারবেন। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তিনি।

৩০১ বার ভিউ হয়েছে
0Shares