বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সাপাহারে চলতি মৌসুমে ২২মে থেকে আম নামানো শুরু ১লক্ষ ৩৯ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা।

সাপাহারে চলতি মৌসুমে ২২মে থেকে আম নামানো শুরু ১লক্ষ ৩৯ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা।

তছলিম উদ্দীন,সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁ সাপাহার উপজেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানির সমস্যা দীর্ঘদিনের যার কারণে ধান চাষে নানা ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যে হঠাৎ করেই স্বল্প পরিসরে আম চাষে সফলতা দেখা দেওয়ায় পর্যায়ক্রমে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায় এবং অপেক্ষাকৃত কম পানি ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদন শুরু হয়। প্রায় এক যুগ ধরে আমের বানিজ্যিক চাষ হচ্ছে বরেন্দ্র এই উপজেলায়। ধান চাষের চেয়ে আম চাষ অধিক সাশ্রয়ী ও লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা ধানের পরিবর্তে আম চাষেই অধিক আগ্রহী হয়ে পড়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় নওগাঁ জেলার বরেন্দ্র এই অঞ্চলে আম উৎপাদনে দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই অঞ্চলের আম সুমিষ্ট হওয়ার ফলে দেশের সর্বত্রই এর সুনাম অর্জন করেছে। প্রতি বছর এই উপজেলার আম দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জেলা সহ দেশের বাহিরে অনেক দেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে, এ বছর নওগাঁ জেলায় ৩৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছে । যার মধ্যে সাপাহার উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এ বছর আমরুপালি, ব্যানানা ম্যাংগো, মিয়াজাকি, কাটিমন, গৌড়মতি, বারি-৪ সহ দেশি-বিদেশ মিলে প্রায় ১৬ জাতের আম চাষ হয়েছে এ জেলায়।মৌসুমের শুরু থেকেই তীব্র শীত খরা এবং অনাবৃষ্টির কবলে পড়ে উত্তরের বরেন্দ্র এই অঞ্চল।
চলতি মৌসুমে জেলা প্রশাসক কর্তৃক গুটি আম নামানোর সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে গত ২২মে থেকে ওই দিন থেকে সাপাহারে গুটি আম পাড়ার মধ্য দিয়ে আম নামানো শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কৃষকের গাছে গাছে এখনও গুটি আম অপরিপক্ক থাকায় এই দিনে সাপাহারের বাজারে কোন আম নামেনি। হয়ত আর কয়েক দিন পরেই বাজারে আম পাওয়া যাবে এবং নওগাঁ-১আসনের খাদ্য মন্ত্রী বাবু সাধন চন্দ্র মজুমদার ও কয়েকদিন পরে আনুষ্ঠানিকভাবে এখানে গাছ হতে পরিপক্ক আম নামানোর উদ্বোধন করবেন বলে উপজেলা কৃষি দপ্ত থেকে জানা গেছে। পরবর্তীতে গোপালভোগ ৩০ মে, ক্ষীরশাপাত/হিমসাগর ২ জুন, নাক ফজলি ৫ জুন, ল্যাংড়া/হাড়িভাঙ্গা ১০ জনু, আম্রপালি ২০ জুন, ফজলি ২৫ জুন এবং আশ্বিনা/বারি-৪/বারি-১১/গৌড়মতি/কাটিমন ১০ জুলাই এসব আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

নওগাঁর সাপাহারের বরেন্দ্র এই অঞ্চলে উৎপাদিত সুস্বাদু ও উন্নত জাতের আমের কদর দেশ ছড়িয়ে বিদেশে এবং পাশাপাশি বেড়েছে ব্যাপক চাহিদা। ইতিমধ্যেই সারাদেশে আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এই অঞ্চল ।বর্তমানে এই উপজেলা থেকে প্রতি বছর ২৫০০কোরি অধিক টাকার আম বানিজ্য হয়।
সরেজমিনে এলাকার বিভিন্ন আমবাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছে গাছে ঝুলে আছে নানা জাতের আম। উল্লেখযোগ্য আম গুলো হচ্ছে গুটি, আশ্বিনা, গোপালভোগ, হিমসাগর, আম্রপালী, হাড়িভাঙ্গা,খিরসাপাত, কাটিমন সহ নানান জাতের আম। তবে এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে আম্রপালী জাতের আম । এই জাতের আম সুমিষ্ট ও কৃষকেরা দাম ভালো পাবার ফলে প্রায় ৭৫শতাংশ আম্রপালী জাতের আম চাষ করা হয়েছে।
উপজেলার ফুটকইল গ্রামের আমচাষী এহ্তামামুল হক জানান, এবছর তীব্র খরার কারণে বাগানে নিয়মিত সেচের জন্য তুলনামূলক ভাবে বেশি খরচ হয়েছে। আমের দাম ভালো হলে এই খরচ পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।
সাপাহার উপজেলা আমচাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, এবার শীতের তীব্রতা বেশি হওয়ায় দেরিতে মুকুল এসেছে এবং দীর্ঘ সময় খরার কবলে পড়ায় আমের ফলন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় সেচের সুবিধা থাকায় ফলন ভালো হয়েছে সবকিছু মিলিয়ে বাজারে আমের মূল্য ভালো থাকলে কৃষক লাভবান হবে।
সাপাহার উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান টকি জানান, চলতি বছরে এই উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছে । তীব্র খরায় আমের ফলনের কিছু বিপর্যয় হলেও শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে প্রায় ১লক্ষ ৩৯ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে যার আনুমানিক বাজার দর ২হাজার ৫শ কোটি থেকে ৩হাজার কোটি টাকা।

১১৮ বার ভিউ হয়েছে
0Shares