শুক্রবার- ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কানেকটিকাটে বাক-এর নিবন্ধন বাতিল, নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠন

কানেকটিকাটে বাক-এর নিবন্ধন বাতিল, নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠন

 ইমা এলিস/ বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের বাংলাদেশিদের অন্যতম সংগঠন বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বাক) দীর্ঘ ৬ বছর ধরে আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ বার্ষিক প্রতিবেদক জমা না দেওয়ায় অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তির নিবন্ধন বাতিল করেছেন কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের রাষ্ট্র সচিব। গত বছর (২০২৩) ৫ জুন তৃতীয় বারের মতো নিবন্ধন বাতিল করা হলেও খামখেয়ালীপনা আর অসচেতনার কারণে বাক-এর কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা কেউই তা জানতো না। অদক্ষ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের অবহেলার এ খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রবাসীদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। গত মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মিডল টাউনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বাক-এর সদস্য ও কানেকটিকাট প্রবাসী হালিম আকবর।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ৫ জুন বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বাক)-এর কানেকটিকাট ব্যবসায়িক আর্টিকেল অফ ইনকর্পোরেশন নিবন্ধন বাজেয়াপ্ত করা হয়। এর আগে রাজস্ব বিভাগ কর্তৃক ২০২১ সালের ১৫ মে ৫০১সি(৩) তালিকাভুক্তি বাতিল করা হয়। এছাড়া ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ইউএসপিটিও কর্তৃক বাক-এর লোগো পরিত্যাগ ঘোষিত হয়। এসব বিষয়ে কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের রাষ্ট্র সচিব দফায় দফায় বাক-এর বার্লিন টার্নপাইকের ঠিকানায় চিঠি দিয়ে অবহিত করেছেন কিন্তু কেউই কোন গুরুত্ব দেয়নি।
২০০৫ সালের গঠিত বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বাক) প্রথম নিবন্ধন বাতিলের তালিকায় পড়েছিল ২০১০ সালের ১৫ মে। সেই সঙ্কট থেকে কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলো সেই সময়ে নেতৃত্ব প্রদানকারী কর্মকর্তারা। কিন্তু পরবর্তীতে এ বিষয়ে আর কেউ নজর দেননি। চরম খামখেয়ালীপনায় বিষয়টি অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে।
হালিম বলেন, তিনি বাক-এর এ দুরাবস্থার কথা  যখন জানতে পেরেছেন তখন বাক নামের ধারাবাহিকতা ও ঐতিহ্যকে বজায় রাখার জন্য কানেকটিকাট প্রবাসীদের স্বার্থেই নিজেই এজেন্ট হিসেবে নতুন করে নিবন্ধন করেন। বাক কারো ব্যক্তিগত সম্পদ নয়, এটি সকল প্রবাসীদের। আমি বাক-এর জন্য এজেন্ট হিসেবে পুনঃ নিবন্ধনের কাজ করেছি মাত্র। এতে আমার ব্যক্তিগত কোন উদ্দেশ্য নাই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বছরের পর বছর ধরে বাক কানেকটিকাট প্রবাসী বংলাদেশি সম্প্রদায়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তাদের উদ্যোগগুলি সমাজে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিতও করেছে। গত ৫/৬ বছর ধরে বাক-এর প্রতি সাধারন মানুষের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বাক-এর পুন:নির্মাণের এখন সময় এসেছে। প্রথমিক পর্যায়ে আলোচনা করে বাক-এর অব্যবস্থাপনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং উত্তরাধিকার বজায় রাখার জন্য নতুন একটি ট্রাস্টি বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। ট্রাস্টি বোর্ড-এর সদস্যরা হলেন-হালিম আকবর, আনোয়ার হসেন, শফি আলম, মীর সাব্বির আহমেদ ও সৈয়দ শাহাজ ইসলাম।
এর ফলে পুরাতন যুগের অবসান এবং নতুন যুগের সূচনা হবে। বাক-এর বোর্ড অব ট্রাস্টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য পুনঃরায় নিবন্ধন এবং পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আলোচনা সাপেক্ষে আগামীতে সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানান হালিম।
বাক-এর পুনঃরায় নিবন্ধন করার পর প্রবাসীদের নিয়ে আপনার নতুন কি চিন্তা ভাবনা রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে হালিম বলেন, কানেকটিকাট প্রবাসী বংলাদেশিদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রবাসীদের জন্য কাজ করতে চাই। অতীতের মতভেদ ভুলে সকলকে নিয়ে একসাথে কাজ করতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতারও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বাক)-এর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি নুরুল আলম ও সাধারন সম্পাদক হুমায়ুন জায়গীরদারসহ দু’জন সহ-সভাপতির সাথে মুঠোফোন ও ক্ষুদে বার্তায় কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে সঠিক ব্যাখ্যা দেননি। তবে সহ-সভাপতি এম এ হাশেম জানান, ঘটনাটি খুবই দু:খজনক। ভুল হতেই পারে, এ খবর জানার পর নিজের নামে নিবন্ধন না করে তাদের উচিত ছিল আগে বাক-এর কর্মকার্তাদের জানান। তারা এ কাজটি ঠিক করেননি।নির্বাচন না করে বাক-এর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিতে কীভাবে আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা কর্মকর্তা তারা না করলে আমি কী করব। আমি হলাম সহ-সভাপতি আমার কোন কাজ নাই। এ সংগঠনে এসে কোন লাভ হয়নি, বরং নির্বাচন থেকে এ পর্যন্ত নিজের পকেটের ৫/৬ হাজার ডলার খরচ হয়েছে।
এদিকে, কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের রাজস্ব বিভাগের তথ্যানুযায়ী জানা যায়, অলাভজনক সংগঠনগুলোকে অবশ্যই বার্ষিক কাজগুলি সম্পূর্ণ করতে হবে। প্রত্যেক ৫০১সি(৩) কে প্রতি বছর রাজস্ব বিভাগে একটি বার্ষিক রিটার্ন দাখিল করতে হবে যাকে ফর্ম ৯৯০ বলা হয়। যদি কোনো সংস্থা পরপর তিন (৩) বছর ধরে তার ফর্ম ৯৯০ ফাইল না করে, তাহলে সংস্থার ৫০১সি(৩) অবস্থা প্রত্যাহার করা হবে।
অলাভজনক সংগঠনগুলো তাদের অব্যাহতি উদ্দেশ্য অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যেতে হবে. সংস্থাগুলিকে তাদের উদ্দেশ্য বিবৃতি পরিবর্তন করার জন্য তাদের আর্টিকেল অফ ইনকর্পোরেশন সংশোধন করার অনুমতি দেওয়া হয়, কিন্তু যদি তারা সংশোধন না করে এবং তারা তাদের উদ্দেশ্যের বাইরে কাজ করে, তাহলে তারা তাদের  ৫০১সি(৩) স্থিতি হারাতে পারে।
রাজস্ব বিভাগের তথ্যে বলা হয়, একটি অলাভজনক সংস্থা এবং অলাভজনক জন্য কাজ করা কোনো ব্যক্তি ব্যক্তিগত সুবিধা বা ব্যক্তিগত বীমার সাথে জড়িত হতে পারে না। যখন একটি অলাভজনক কার্যকলাপ অলাভজনক ব্যতীত অন্য ব্যক্তি বা সংস্থার স্বার্থকে উপকৃত করে তখন ব্যক্তিগত সুবিধা ঘটে। অলাভজনক সংস্থাগুলিকে অবশ্যই জনসাধারণের সেবা করার জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য নয়। যখন অলাভজনক আয় বা সম্পদগুলি অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিদের, প্রায়শই বোর্ডের সদস্য, কর্মকর্তা, পরিচালক বা কর্মচারীদের উপকার করার জন্য ব্যবহার করা হয় তখন ব্যক্তিগত বীমা ঘটে। এই ধরনের কার্যকলাপে জড়িত হওয়ার ফলে অলাভজনক তার ৫০১সি(৩) স্থিতি হারাবে এবং জরিমানা আবগারি করের অধীন হবে৷
১৮ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS