মঙ্গলবার- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিগগির ভারতের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্ট কানেক্টিভিটি : ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী

শিগগির ভারতের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্ট কানেক্টিভিটি : ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী

খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্ট সলিউশনের ইন্টার কানেক্টিভিটি হবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। আমাদের নাগরিকরা যারা ভারতে যাচ্ছেন তাদের রুপি বা ডলার করে নিতে হয়, সে জায়গায় সমাধানের পথ কী- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সে জায়গাটা অনেকটা এগিয়ে এসেছে। আমাদের দুই দেশের মধ্যে বিনিময় একদম লিগ্যাল চ্যানেলে, খুব নির্বিঘ্নে হতে হবে।

এরইমধ্যে আমাদের ‘টাকা পে’ প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। আমাদের উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনায় ইন্টার অপারেটেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফর্ম ‘বিনিময়’ তৈরি করে ফেলেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকে গত পরশু (মঙ্গলবার) গিয়েছিলাম, এটার ইউজার ডাবল হয়ে গেছে। আমরা খুব খুশি। এখন ‘টাকা পে’র সঙ্গে রুপির কানেকশন করে দিতে পারলে ডিজিটাল পেমেন্টের ইন্টারফেসটা হয়ে যাবে। তিনি বলেন, যেভাবে ভারতের সঙ্গে এখন সিঙ্গাপুরের লেনদেন হচ্ছে, যেভাবে প্যারিসে হচ্ছে, একইভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ডিজিটাল পেমেন্ট সলিউশনের ইন্টার কানেক্টিভিটি হবে।

আমাদের একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আসবে, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে, মানুষের হয়রানিও কমবে। যেমন ধরেন আপনি টাকা কেরি করছেন, মানি লন্ডারিং কিংবা হুমকি- এগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এটা কি ডলার নাকি রুপিতে কনভার্ট হবে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমার জানা নেই। এটা আসলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইস্যু। আমরা শুধু টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট করছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে বলেছেন, অপচয় রোধ করে আইসিটি সেক্টরে আমাদের রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে।

ডাক-টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে আমাদের বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে এবং স্থানীয় তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। এই তিনটি জায়গায় আমরা ভারতের সহযোগিতা পাবো বলে প্রত্যাশা করছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের ১২টি হাইটেক পার্কের সঙ্গে ছয়টি জায়গায় ডিজিটাল সার্ভিস এমপ্লয়মেন্ট ট্রেনিং সেন্টারের কাজ শেষ হয়ে গেছে। সেখানেও কিন্তু আমাদের প্রায় ৩০ হাজার ছেলেমেয়ে ব্লগচেইন, রোবোটিক্স, ডাটা এনালিটিক্স- এ ধরনের ভবিষ্যৎমুখী চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রয়োজনীয় যে প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তি আমরা গড়ে তুলতে পারবো। ‘দুই দেশের সাইবার জগৎকে নিরাপদ রাখার জন্য আমরা একটি এমওইউ করেছিলাম, সেটার আমরা মেয়াদও বৃদ্ধি করেছি।

এখন আমরা দুই দেশ একত্র হয়ে সাইবার ড্রিল পরিচালনা করবো। যেন বাংলাদেশ-ভারতের সাইবার স্পেসসহ সারা বিশ্বের সাইবার জগৎকে নিরাপদ রাখার জন্য বাংলাদেশ-ভারত একসঙ্গে মিলে কাজ করতে পারে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ডেটা সেন্টার নির্মাণ করবো। আমাদের প্রাইভেট সেক্টরে, ডাক, টেলিযোগ সেক্টরে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা, বিনিয়োগ আকর্ষণ করা- এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যেভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ-ভারত একসঙ্গে কাজ করেছে, একই ভাবে ডিজিটাল ভারত বিনির্মাণে বাংলাদেশও ভারতের পাশে থাকবে। কারণ, আমাদের দুই দেশের স্টার্টআপদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী একটি সেতুবন্ধন রচনা করেছেন গত জুলাই মাসে। বাংলাদেশ-ভারত স্টার্টআপ ব্রিজ, এটি একটি ইউনিক কলাবরেশন প্ল্যাটফর্ম। গত পাঁচ বছরে স্টার্টআপে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এরমধ্যে অধিকাংশ বিনিয়োগ এসেছে ভারত এবং সিঙ্গাপুর থেকে। কিছু অংশ এসেছে জাপান থেকে। ভারতের প্রায় দেড় বিলিয়ন জনগোষ্ঠী, একটি পণ্য যদি আমরা ভারতে সেটা সফটওয়্যার হোক বা হার্ডওয়ার নিতে পারি, তবে বিশাল মার্কেট আমাদের ঘরের কাছে। আবার বাংলাদেশের গ্রোয়িং মার্কেটও ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা গ্রহণ করতে পারে। তিনি বলেন, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে সরকারের লাইন অব ক্রেডিট বিলিয়ন ডলারের উপরে বিনিয়োগ করার সুযোগ আছে। প্রাইভেট সেক্টরেও বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগের সুযোগ আছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশ থেকে আইসিটি রপ্তানি পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা। আগামী পাঁচ বছরের আমরা আরও ১০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই। তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছরে আগামীর ২০৪১-এর স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে যে ভিত্তিটা রচনা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, সেখানে বাংলাদেশ-ভারত একসঙ্গে কাজ করবে এবং আমরা একসঙ্গে এগিয়ে যাবো। এক প্রশ্নের জবাবে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ১২টি হাইটেক পার্কের নির্মাণকাজ চলছে। কোথাও ৫০ শতাংশ, কোথাও ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি, ২০২৫-২৬ এর মধ্যে ১২টি হাইটেক পার্কই অপারেশনাল হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার আছে, তাদের অর্থ এবং তথ্য সংরক্ষণ করা এবং সাইবার সিকিউরিটির জন্য আমাদের পারস্পরিক একসঙ্গে কাজ করা দরকার। ইনফরমেশন শেয়ারিং করা দরকার, হুমকি শেয়ার করা দরকার। এগুলোর যে ভালো প্র্যাকটিস আছে, কোনো দেশ কিন্তু এককভাবে সাইবার স্পেস নিরাপদ করতে পারে না। এজন্য আমরা এটা একসঙ্গে করতে চাই। যেন বাংলাদেশ ও ভারতের সাইবার এক্সপার্টরা একসঙ্গে মিলে থ্রেটগুলো এনালাইসিস করা, প্রিভেন্টিভ মেজার নেওয়া- সেগুলো করতে পারেন। হয়তো আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে উভয় দেশ একটা সময় ঠিক করবো।

৫১ বার ভিউ হয়েছে
0Shares