বুধবার- ২২শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই হত্যা মামলার আসামী আরসা প্রধান আতাউল্লাহ’র অর্থ সমন্বয়ক গ্রেপ্তার

গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই হত্যা মামলার আসামী আরসা প্রধান আতাউল্লাহ’র অর্থ সমন্বয়ক গ্রেপ্তার

কায়সার হামিদ মানিক,কক্সবাজার। কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প থেকে আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী ও আরসা প্রধান আতাউল্লাহ’র একান্ত সহকারী ও অর্থ সমন্বয়ক মোহাম্মদ এরশাদ প্রকাশ নোমান চৌধুরীকে র‌্যাব-১৫ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে।সোমবার ভোর রাতে কুতুপালং ক্যাম্প থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু কোনারপাড়া, জিরো লাইন এলাকার বসবাসকারী সাব্বির আহমেদ এর ছেলে মোহাম্মদ এরশাদ প্রকাশ নোমান চৌধুরী (২৭)।
কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) মোঃ আবু সালাম চৌধুরী সোমবার বিকালে স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান,গত ১৪ নভেম্বর ২০২২ তারিখে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি থানাধীন ঘুমধুম ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের তুমব্রু বাজার সংলগ্ন কোনারপাড়া গ্রামের তুমব্রু মধ্যম পাড়া মসজিদের দক্ষিণ পাশে ইটের রাস্তা এলাকায় মিয়ানমারের আরসা ও আল ইয়াকিন গ্রুপের বিচ্ছিন্নতাবাদী, স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রধারী খুনি, লুটেরা, ধর্ষক, ডাকাত, মাদক চোরাকারবারী ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। উক্ত অভিযানে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা মুহুর্মুহু গুলিবর্ষন ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি আক্রমণের ফলে অভিযানে থাকা রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার স্কোয়াড্রন লীডার রিজওয়ান রুশদী নৃশংসভাবে হত্যা এবং একই সাথে র‌্যাব সদস্য কনস্টেবল সোহেল বড়ুয়া’কে গুরুতর আহত করা হয়। উক্ত ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
এই নৃশংস ঘটনা সংঘঠিত হওয়ার পর থেকে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন নিবিড়ভাবে কাজ করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১৫ কর্তৃক বর্ণিত ঘটনার সাথে জড়িত ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ (আরসা) এর শীর্ষ সন্ত্রাসী আসামী হাফেজ নুর মোহাম্মদ কে গত ২১ জুলাই ২০২৩ তারিখ এবং আসামী রহিমুল্লাহ প্রকাশ মুছাকে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে গ্রেপ্তার করা হয়।
সম্প্রতি র‌্যাব-১৫ এর গোয়েন্দা নজরদারী, তৎপরতা ও অনুসন্ধানের একপর্যায়ে বিশ্বস্ত সূত্রে র‌্যাব জানতে পারে, উক্ত নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত দীর্ঘদিন যাবত পলাতক এজাহারনামীয় আসামী নোমান চৌধুরী  উখিয়া থানাধীন কুতুপালং এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার ২ অক্টোবর ভোর রাতে র‌্যাব-১৫ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে।
এসময় আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী ও আরসা প্রধান আতাউল্লাহ’র একান্ত সহকারী ও অর্থ সমন্বয়ক মোহাম্মদ এরশাদ প্রকাশ নোমান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়
জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামী গত ১৪ নভেম্বর ২০২২ তারিখে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এবং র‌্যাব-১৫ এর যৌথ অভিযানের সময় রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কক্সবাজার শাখার স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদি হত্যাকান্ড এবং র‌্যাবের কনস্টেবল সোহেল বড়ুয়া গুরুতর আহতের হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে বলে অকপটে স্বীকার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামী মোহাম্মদ এরশাদ প্রকাশ নোমান চৌধুরী আরও স্বীকার করে যে, আমেরিকা প্রবাসী পিতার মাধ্যমে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ’র সাথে তার পরিচয় হয়। আরসার হয়ে দীর্ঘদিন সক্রিয়ভাবে কাজ করার ফলস্বরূপ আতাউল্লাহ তাকে তার একান্ত সহকারী ও সার্বক্ষনিক অস্ত্রধারী বডিগার্ড হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিল। এছাড়াও হুন্ডির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আরসার জন্য প্রেরিত অর্থের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে এবং প্রাপ্ত অর্থ আরসা’র বিভিন্ন ক্যাম্প কমান্ডারদের মাঝে পৌঁছে দেয় বলে সে স্বীকার করে। সে আরসা’র জন্য ইউনিফরমের কাপড়, ঔষধ সামগ্রী, ওয়াকিটকি, ল্যান্ড মাইন এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি কেনা-কাটা করে বলে জানায়। আরসা প্রধান আতাউল্লাহ’র নেতৃত্বে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার অন্যতম ব্যক্তি হিসেবে কাজ করে বলে সে জানায়।
২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এর মংডু অঞ্চলের সদর দপ্তরে হামলায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে অস্ত্র লুট ও ১৪ জন জওয়ান হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল বলে স্বীকার করে।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
৭০ বার ভিউ হয়েছে
0Shares