শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের দাবি  ;  সাত শহীদের সমাধি ও সড়ক নদীতে বিলীনের আশঙ্কা

প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের দাবি  ;  সাত শহীদের সমাধি ও সড়ক নদীতে বিলীনের আশঙ্কা

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা)  প্রতিনিধি:  ছায়াঘেরা মনোরম পরিবেশে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের ফুলবাড়ী সীমান্ত ঘেঁষা গনেশ্বরী নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত সাত শহীদের সমাধি। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকেরা সীমান্তের সৌন্দর্য্য উপভোগের পাশাপাশি পরিদর্শন করেন এ সমাধিস্থল। মুহুর্তেই পর্যটকদের মনে নাড়া দেয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। সমাধীর সামনে কেউ কেউ দাঁড়িয়ে যান শহীদের শ্রদ্ধা জানাতে। প্রতি বছর ২৬ জুলাই জেলা ও উপজেলা প্রশাসন নানান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হয় মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের। কিন্তু গনেশ্বরী নদীর ভাঙন ক্রমশ পূর্ব দিকে তেড়ে আসছে। ফলে সমাধীতে পৌঁছানোর কাঁচা সড়কে ভাঙন ধরেছে। এ ভাঙন দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন পর্যটকেরা।

এ ভাঙন অব্যাহত থাকলে সড়কের পাশাপাশি এক সময় সমাধীস্থল বিলীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই সড়ক ও সমাধীস্থল রক্ষায় টেকসই প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গসহ মুক্তিযোদ্ধারা।

লেংঙ্গুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন, ৭১ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোের সুরক্ষা অত্যন্ত জরুরি। সরকারের উচিত সাত শহীদের স্মরণে একটি জাদুঘর নির্মাণ করা। সেখানে শহীদদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য, তাদের ব্যবহৃত স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এতে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে, সেই অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতহাস।

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক এনামুল হক বলেন, যারা দেশের জন্য জীবন দিলেন তাদের সমাধীস্থল রক্ষায় এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যদি নদীর পাড়ে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করা হয় তাহলে একদিকে যেমন সড়ক ও সমাধীস্থল রক্ষা পাবে অন্যদিকে স্থানটিও হয়ে উঠবে দৃষ্টিনন্দন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান ভূইয়া বলেন, প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ী ঢল এলেই পানির স্রোতের কারণে ১১৭২ নং সীমান্ত পিলার সংলগ্ন গনেশ্বরী নদীর তীরের প্রায় ১০০ মিটারের কাঁচা রাস্তা পানির চাপে ভেঙে অত্যন্ত সরু হয়ে যাচ্ছে। সময়মতো উদ্যোগ নেওয়া না হলে বিলীন  হয়ে যেতে পারে ওই সমাধিস্থলটি। টেকসই প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করে নদী ভাঙন থেকে সড়কটি ও সাত শহীদের সমাধিস্থল রক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।

কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক তালুকদার বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই নাজিরপুর বাজারে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে শহীদ হন নেত্রকোনার ডা. আবদুল আজিজ ও মোহাম্মদ. ফজলুল হক, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মুহাম্মদ ইয়ার মাহমুদ, ভবতোষ চন্দ্র দাস, দ্বিজেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস ও মো. নুরুজ্জামান এবং জামালপুরের মো. জামাল উদ্দিন। পরে যুদ্ধে নিহত শহিদদের লেংগুরার ফুলবাড়ি সীমান্তের গনেশ্বরী নদীর পাড়ে ১১৭২নং পিলার সংলগ্ন স্থানে সমাহিত করা হয়। শহিদদের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতেই সহযোদ্ধারা নির্মাণ করেন সাত শহিদের সমাধিস্থল। প্রতি বছর ২৬ জুলাই দিনটা ‘ঐতিহাসিক নাজিরপুর দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। এদিনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে নানান কর্মসূচি পালন করেন।

এ ব্যাপারে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী শুভ্রদেব চক্রবর্তী বলেন, যতটুকু অংশ নদী ভাঙনের কবলে পরেছে সেটুকু অংশ এলজিইডি’র না। লেংগুরা বাজার থেকে সাত শহীদের সমাধিস্থল পর্যন্ত রাস্তাটি সংস্কার ও রাস্তার ঝুকিপূর্ণ বিভিন্ন অংশে গাইড ওয়াল নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

নেত্রকোনার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, এ বিষয়টি কেউ তাকে জানায়নি, তবে খোঁজ নিয়ে দেখবেন। যদি নদী ভাঙনে সাত শহীদের সমাধিস্থলটি হুমকির মুখে থাকে তাহলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

৫৬ বার ভিউ হয়েছে
0Shares