শুক্রবার- ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে স্ত্রী হত্যার দায়ে ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে স্ত্রী হত্যার দায়ে ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

দিনাজপুরে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতনে হত্যা ও লাশ পুড়িয়ে আলামত বিনষ্ট করার অভিযোগে স্বামী, সতীন ও সতীন পুত্র এবং ১ দেবরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। অপর ১ দেবরকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ১ লক্ষ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
বুধবার (১১ মে) বিকেল সাড়ে ৩টায় তার দিনাজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত এ চাঞ্চল্যকর মামলার রায় ঘোষণা করেন। পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম রায়ের বিষয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, বিচারক স্ত্রী হত্যার ঘটনাটি সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মামলার অন্যতম আসামি নিহত গৃহবধূ তপতি রানীর স্বামী সাধনা নন্দ চৌধুরীকে (৬২) বয়সের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩ আদালতের বিচারক এস এম রেজাউল বারী আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করার সাজা প্রদান করেন। অপর আসামি নিহত গৃহবধূ তপতি রানীর সতীন শ্রীমতি প্রতিমা রানী (৪৫), তার পুত্র আকাশ চৌধুরী (২৫) ও দেবর কাজ মহন্তকে (৩০) মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। অপর আসামি জীবন চৌধুরীকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
দিনাজপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান আজ বিকেল ৪টায় মামলার ঘটনার বর্ণনায় বলেন, গত ২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল রাতে গৃহবধূ তপতি রানীকে তার স্বামী সাধনা নন্দ চৌধুরী তার দ্বিতীয় স্ত্রী প্রতিমা রানী ছোট স্ত্রীর পুত্র আকাশ চৌধুরী ছোট ভাই কাজল ও জীবনের সহায়তায় রানীকে নির্মমভাবে শারীরিক নির্যাতনে ও শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। নিহত তপতি রানী লাশ হত্যার পর পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার সুজাপুর গ্রামের বাঁশ ঝাড়ে ফেলে রাখে। পরদিন ৭ এপ্রিল নিহত তপতি রাণীর লাশ আগুনে পুড়ার জন্য প্রস্তুতি নিলে তপতি রানীর একমাত্র পুত্র কাস্টমস কর্মকর্তা শুভনন্দ চৌধুরী (৩২) বাঁধা দেয়। তার উদ্যোগেই ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের সহায়তা লাশ উদ্ধার করে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। এই ঘটনায় দণ্ডিত ৫ জনকে আসামি করে শুভনন্দ চৌধুরী বাদী হয়ে ফুলবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সূত্রটি জানায়, মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ এই চাঞ্চল্যকর মামলায় স্ত্রী হত্যার অন্যতম আসামি স্বামী সাধনা নন্দ চৌধুরী, তার ২য় স্ত্রী প্রতিমা রানী, ২য় স্ত্রীর পুত্র আকাশ চৌধুরী ও ছোট ভাই কাজল এবং জীবনের বিরুদ্ধে পুলিশ আদালতে বিচারের জন্য অভিযোগপত্র পেশ করেন। মামলাটি বিচার আমলে বাদী পক্ষে ২২ জনের সাক্ষীর সাক্ষর গ্রহণ করা হয়। বিচারক ঘটনাটি সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামি প্রতিমা রানী, আকাশ চৌধুরী ও কাজল মহন্তকে মৃত্যু দণ্ডে দণ্ডিত এবং সাধনা নন্দ চৌধুরীকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত ও জীবন চৌধুরীকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১ লক্ষ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে রায় প্রদান করেন। দণ্ডিত আসামিদের সকলেই জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার সুজাপুর গ্রামের বাসিন্দা।
মামলাটি সরকারের পক্ষে অ্যাডভোকেট কাজেম উদ্দীন আহমেদ ও আইনজীবী সমিতির সভাপতি একরামুল আমিন এবং আসামী পক্ষের অ্যাডভোকেট হামিদুল ইসলাম পরিচালনা করেন। দণ্ডিত আসামিদের আজ বুধবার বিকাল ৪টায় আদালত থেকে দিনাজপুর জেল কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
১৭১ বার ভিউ হয়েছে
0Shares