সোমবার- ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৭ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রাজশাহীতে ডেসটিনির ফাঁদে পড়া গ্রাহকরা আজও তাদের টাকা ফেরৎ পাইনি

রাজশাহীতে ডেসটিনির ফাঁদে পড়া গ্রাহকরা আজও তাদের টাকা ফেরৎ পাইনি

নাজিম হাসান,রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি:
অল্প দিনে বড়লোক বানিয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে রাজশাহী জেলাজুড়ে গণপ্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল কথিত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড। লোভে পড়ে সেই ফাঁদে ধরা দিয়েছে রাজশাহী জেলাজুড়ে হাজার হাজার গণমানুষ। এই সুযোগে ডেসটিনির গুটি কয়েকজন ব্যক্তি বিনা শ্রমে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় ডেসটিনির ফাঁদে পড়ে হাজার হাজার মানুষ কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর এসব টাকা এখন পর্যান্ত ফেরৎ দেওয়া হয়নি বলে অর্ধশতাধিক ব্যাক্তির অভিযোগ পাওয়াগেছে। এলাকা সুত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার বাগমারাসহ বিভিন্ন উপজেলায় ডেসটিনি কোম্পানীর নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। ঐ কোম্পানীর সুবিধাভোগীরা সহজ সরল সাধারণ মানুষকে ডেসটিনি অফিসে বসে টার্গেট নিয়ে কোম্পানীর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মীদের সহজ সরল মানুষের পিছনে লেলিয়ে দিয়ে ঐ সময় কোম্পানীতে ভর্তি করায়। এবং ডেসটিনি -২০০০ লি. নামের কোম্পানী বিভিন্ন্ এলাকার বেকার ছেলে ও মেয়েদেরকে বেশ কিছুদিন হকারী স্টাইলে ট্রেনিং করিয়ে কোম্পানীর উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করার অভিনব কায়দা শিখিয়ে মাঠ পর্যায়ে ছেড়ে দেন। এবং সেসময় কর্মীদেরকে বুঝানো হয় বাজারে প্রত্যেকের যেমন বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী কিনতে হয় তা আমাদের কোম্পানীর মাধ্যমে কিনতে হবে। ফলে ঐ পণ্যের লাভের অংশ ক্রেতা নিজেও পাবে এবং সিংহ ভাগ পাবে যে বা যারা তাকে কিনাতে বাধ্য করবে। তবে কেউ পণ্য না নিয়ে ৫হাজার থেকে শুরু করে ১০ লক্ষ টাকা অথবা তদুর্ধ পর্যন্তত টাকা একই ব্যক্তি ডেসটিনিতে জমা দিয়ে পয়েন্ট ক্রয় করে কোম্পানীর সদস্য পদ লাভ করতে পারবে । এবং তার প্রদান কৃত টাকা উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যারা তাকে ভর্তি করিয়েছে তারা ভাগাভাগি করে নেয়। যে একবার ভর্তি হবে তাকেই অব্যশই তার নিচে আরও ৮ জন অথবা তদুর্ধ ব্যক্তিদেরকে ভর্তি করাতে পারলে তবেই সে ডেসটিনি কোম্পানী থেকে বেতন পেতে উত্তেলন করতে পারবে । যদি সে ভর্তি করাতে না পারে তবে তার কোন বেতন থাকবে না। আবারো কারও কারও নিকট থেকে এককালীন পাঁচ হাজার দশ হাজার ,এক লাখ, দুই লাখ, পাঁচ লাখ, দশ লাখ টাকা নিচ্ছে এমন শর্ত জুড়ে দিয়ে যে ৫ বছর পর তার টাকার ১২ গুণ টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু যদি কেউ প্রশ্ন করে এত টাকা কিভাবে দিবে? ডেসটিনি উত্তরে কোম্পানীর কর্মকর্তারা তাদের মনোনিত গ্র্রাহকদের বুঝায়, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, খুলনা সুন্দরবন এলাকায় উন্নতজাতের গাছ রোপণ করা হচ্ছে। যার মূল্য হবে ইনভেস্টমেন্টের ২০ গুণ। এরমধ্যে ১২ গুণ সদস্যকে দিবে আর অবশিষ্ট কোম্পানী লাভ করবে । আবার কাউকে বুঝানো হয়েছিলো বঙ্গোপসাগরের বেশ কিছু অংশ ভারত বাংলাদেশ ও মায়ানমার সরকারের নিকট থেকে এ কোম্পানী লীজ গ্রহণ করে উন্নত ইলিশসহ অন্যান্য দামী মাছ চাষ করছে যার লভ্যাংশ হবে ইনভেস্টমেন্টের ৬০ গুণ। এদিকে, যারা ডেসটিনি কোম্পানীতে কাজ করেছিল তারা সর্বদা ফিটফাট থাকতো। অশিক্ষিত হলে ও কোট টাই ব্যবহার করে, লোক মুখে গেয়ে বেড়ায় সে এখন সপ্তাহে ৫০ হাজার অথবা তার চেয়ে বেশী বেতন পাচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের তারা প্রতারণা আর প্রলোভনের ফাঁদ পেতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ডেসটিনির স্থানীয় এজেন্ট বা মাঠকর্মীরা। তবে ডেসটিনিতে বিনিয়োগকারী হাজার হাজার গ্রাহক হতাশা ব্যক্ত করে তাদের দেয়া টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছেন প্রশাসনের প্রতি। অপরদিকে ডেসটিনির স্থানীয় এজেন্ট বা মাঠকর্মীরা দাবি করেছেন, তাদের প্রতিষ্ঠান ভূয়া নয়। সঠিক সময়ে আমানতকারীরা মুনাফাসহ অর্থ ফেরত পাবেন। উল্লেখ্য,বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গত ২০১১ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর বিকেলে উপজেলার শিকদারীর সালেহা ইমারত কোল্ড স্টোরেজ প্রাঙ্গণে রাজশাহী-৪ বাগমারার আসনে এম,পি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এক সংবাদ সম্মেলন করে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস ২০০০লিমিটেড’র সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন । এরপর ২০১১ সালের ২৪ আগস্ট বাগমারার সাংসদ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের উদ্দেশে ডেসটিনি ২০০০-এর প্রতারণামূলক কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি তুলেছিলেন। ওই দিন এনামুল হক সংসদে বলেন, তাঁর নির্বাচনী আসনের ১০ হাজার সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকা তুলে নিয়ে গেছে ডেসটিনি কর্তৃপক্ষ। তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন সংসদে দাঁড়িয়ে বলে ছিলেন, ডেসটিনি ২০০০-এর প্রতারণামূলক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

৪৯ বার ভিউ হয়েছে
0Shares