শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অপারেটরদের যাতাকলে পিষ্ট তানোরের কৃষকরা

অপারেটরদের যাতাকলে পিষ্ট তানোরের কৃষকরা

তানোর প্রতিনিধি: বরেন্দ্র অঞ্চল খরা প্রবন এলাকা রাজশাহীর তানোর উপজেলা। এউপজেলার জনসাধারনের উপার্জনের একমাত্র উপায় কৃষি ফসল উৎপাদন। রয়েছে সেচ ভূর্তুকির গভীর অগভীর নলকূপ।অপারেটর নিয়োগ আছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। নিয়োগ পেতে লাগে নিম্মে ৫০-৮০ হাজার টাকা । আর এইসবের খরচের খড়গ পড়ে অসহায় কৃষকদের উপর। একারনে অপারেটরদের যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন কৃষকরা। যদিও জমি কৃষকদের, কিন্তু রাজত্ব অপারেটরদের। বিশেষ করে আলু মৌসুমে প্রজেক্টে জমি লীজ দেয় অপারেটরেরা। অধিক টাকায় লীজ দিয়ে নামমাত্র টাকা কৃষককে দিয়ে অপারেটরেরা আত্মসাৎ করেন। অপারেটরেরা আলু মৌসুমে লাখ লাখ টাকা পকেটে ভরেন এমন অভিযোগ অহরহ। আবার এসব নিয়ে কৃষকরা প্রতিবাদ করলে সেচ দিবে না, ফসল মেরে ফেলবে। এভয়ে কেউ প্রতিবাদও করতে সাহস পায় না। ফলে কোনভাবেই অপারেটরদের কালো থাবা থেকে মুক্তি পাচ্ছেনা কৃষকরা। চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন স্কীম ভুক্ত চাষীরা।
জানা গেছে, উপজেলায় বিএমডিএর আওতায় গভীর নলকূপ রয়েছে ৫৩৬ টি, ব্যক্তি মালিকানা ১৬ টি মোট ৫৫২ টি। অগভীর বিদ্যুৎ চালিত ৪১১ টি, ব্যাক্তি মালিকানা। অগভীর ডিজেল চালিত ৫০ টি। এলএলপি বিদ্যুৎ চালিত ৩ টি, এলএলপি ডিজেল চালিত ৩৫০টি। মোট ১ হাজার ৩৬৬ টি গভীর অগভীর সেচ পাম্প রয়েছে।
উপজেলায় আবাদ যোগ্য কৃষি জমি রয়েছে ২৩ হাজার ৯৯৩ হেক্টর, সেচের আওতায় ২২ হাজার ৩৩২ হেক্টর।সেচ বহির্ভুত জমি রয়েছে ১ হাজার ৬৬২ হেক্টর। এক ফসলী  জমি ৩৪৪ হেক্টর। দুই ফসলী ৪ হাজার ৫৪০ হেক্টর। তিন ফসলী ১৯ হাজার ১০৯ হেক্টর। নীট ফসলী জমি ২৩ হাজার ৯৯৩ হেক্টর,  মোট ফসলী জমি ৬৬ হাজার ৭৫১ হেক্টর।  নিবিড়তা ২৭৮%, ভূমি  ব্যবহার ৮২%। উচুঁ জমি ২০ হাজার  ৩৮৬ হেক্টর, মাঝারি উচুঁ জমি ১ হাজার ৫৭৮ হেক্টর, মাঝারি নিচুঁ জমি ১ হাজার ৫৫৩ হেক্টর, নিচু জমি ৪৭৬ হেক্টর জমি রয়েছে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষ করে গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগ হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। যে যখন ক্ষমতায় গভীর নলকূপ নিয়ে চলে বেপরোয়া বানিজ্য। বর্তমানেও ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রনে গভীর নলকূপ। নিয়োগ পেতে লাগে কাড়িকাড়ি টাকা। আর এই টাকা তুলতে সেচ হার নির্ধারন হয় অপারেটরের ইচ্ছায়। যদিও সেচে প্রচুর ভূর্তুকি, এর তিল পরিমান সুবিধা পায় না কৃষকরা। যে সকল গভীর নলকূপের আওতায় আলুর প্রজেক্ট হয়, সে সব গভীর নলকূপের অপারেটরা কৃষকের জমি লীজ দিয়ে কাড়িকাড়ি টাকা হাতিয়ে নেয়।
কৃষকরা জানান, যে গভীর নলকূপের স্কীম ভুক্ত ১০০ বা ২০০ কিংবা ৩০০ বিঘা জমিতে আলুর প্রজেক্ট হয়। যিনি প্রজেক্ট করেন তাকে যোগাযোগ করতে হয় অপারেটরের সাথে। প্রতি বিঘা লীজ হয় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। কিন্তু কৃষককে ৫ হাজার টাকাও দেওয়া হয় না। প্রতিবাদ করলে ধান চাষ করতে পারবেন না। বিঘা প্রতি বোরো ধানে সেচ হার ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। আবার টান্সফর্মা কিংবা মটর বা ড্রেন এসব দোহায়ে আদায় করা হয়।  সমিতি বা কার্ড এর মাধ্যমে সেচ দেওয়া হলে খুবই কম খরচ হবে। এছাড়াও ব্যক্তি মালিকানা মটরে আরো বাড়তি সেচ হার আদায় করা হয়। এক কথায় যে ভাবে পার কৃষকদের  ধ্বংস কর।
এদিকে বানিজ্যিক লাইন নিয়ে বেপরোয়া সেচ বানিজ্য চলছে। মুন্ডুমালা, বাধাইড় ও কলমা এলাকায় গভীর নলকূপগুলো তিন ঘন্টার বেশি চালাতে পারেনা। দিনের দিন পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ার কারনে আরো বাড়তি সেচ হার আদায় করা হয়।
বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, গভীর নলকূপে প্রকার ভেদে ঘন্টাপ্রতি ১২৫-১৩০ ও ১৩৫ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। কোন অপারেটর বাড়তি সেচ হার নিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য কৃষকদের সচেতন হতে হবে। কারন সরকার সেচে ভূর্তুকি দিচ্ছে। আর কেউ বেশি নিবে তা বরদাস্ত করা হবে না।
২৫ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS