শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তানোরে খাল খনন বোরো চাষে কৃষকের আশির্বাদ

তানোরে খাল খনন বোরো চাষে কৃষকের আশির্বাদ

সারোয়ার হোসেন, তানোর: রাজশাহীর তানোরে খাল খনন করায় বোরো চাষে কৃষকের আশির্বাদে পরিনত হয়েছে। উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়ন(ইউপির) লবাতলা ব্রীজ থেকে বিএমডিএ থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার খাল খনন হয়েছে। এতে করে প্রায় ২০০ কৃষকের ৫ হাজার বিঘা জমিতে নির্বিঘ্নে হবে বোরো চাষ বলে মনে করেন চাষিরা। ফলে বোরো ধানে সেচের দু:শ্চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পেরেছেন খাল সংলগ্ন কৃষকরা।
বোরো চাষি মাসুদ দবির, মেহেদি, মিলনসহ অনেকে জানান, অতীতে খাল সংলগ্ন বোরো ধান কাটার আগ মুহুর্তে সেচ পাওয়া যেত না। একারনে বিঘাপ্রতি ফলন ৩-৪ মন ফলন কম হত। কিন্তু লবাতলা ব্রীজ থেকে শিবনদী পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার খাল খনন করার জন্য আমাদের সেচের কোন সমস্যা থাকবে না। খাল সংলগ্ন জমিতে গভীর নলকূপ থেকে পানি এনে সেচ দেওয়া চরম কষ্টের বিষয় ছিল। খালটি খনন হয়েছে সময় মতো। এখন নির্বিঘ্নে সেচ দিতে পারছি, যখন খুশি তখন সেচ দেওয়া হচ্ছে। প্রায় ৫০০ বিঘা জমিতে ৪ মন করে কম ধান পাওয়া যেত। সেই হিসেবে  প্রায় ২ হাজার মন ধান কম হত। শুধু খাল খননের কারনে প্রায় ২ হাজার মন ধান বেশি পাওয়া যাবে।
বিএমডিএ সুত্রে জানা যায়, লবাতলা ব্রীজ থেকে ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। এর বিপরীতে ৮৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। খালটি খনন হওয়ার কারনে ৫০০-৬০০ বিঘা জমিতে বোরো ধানে সেচ নির্বিঘ্নে হবে এবং প্রায় ২০০-৩০০ কৃষক উপকৃত হবে। খালের দুপাশে ২ হাজার কাজি বাদাম গাছ সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫-৬ হাজার গাছ রোপন করা হবে।
স্থানীয়রা জানান, খাল সংলগ্ন নিচের জমিতে সেচের অভাবে ফসল নষ্ট হত। কোনভাবেই সেচ দেওয়া যেত না। বোরো রোপনের শুরুতে খাল খনন শুরু করে। ৩-৪ টি ভেকু মেশিন দিয়ে গভীর ভাবে খাল খনন হয়েছে। খননের পর থেকে খালে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। স্যালোমেশিন দিয়ে অল্প খরচে সেচ কার্যক্রম চলছে। খাল খনন কৃষকের আশির্বাদে পরিনত হয়েছে। উপজেলার যতগুলো খাল রয়েছে এভাবে খনন করে পানি রাখা হল দিগুন চাষাবাদ হবে এবং বারো মাস নানা কৃষি পণ্য উৎপাদন হবে। কৃষিতে এক প্রকার বিপ্লব ঘটবে।
বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান  জানান, বরেন্দ্র অঞ্চল ও খরা প্রবন এলাকা। দিনের দিন ভূগর্ভের পানি নিচে নামতেই আছে এবং চরম হুমকিতে পড়েছে ভূগর্ভের পানি। এজন্য স্থানীয় সাংসদ বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা উপরি ভাগের পানি দিয়ে যাবতীয় কাজ করা। এর ধারাবাহিকতায় লবাতলা ব্রীজ থেকে শীবনদী পর্যন্ত ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৩০ মিটার প্রস্থ খাল খনন করা হয়েছে। সারা বছর খালে পর্যাপ্ত পানি রাখা হবে। শুধু বোরো চাষ না ওই সব জমিতে বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ হবে। অতীতে সেচের অভাবে শুধু বোরো চাষ হত। তাও নিচের জমিতে শেষের দিকে সেচ পেত না। এজন্য ফলনও কম হত। এখন নির্বিঘ্নে অপ্ল খরচে সেচ দিতে পারবেন। শুধু ওই খাল না বিল কুমারী ও বিলের ভিতরে যে খাল আছে সেটিও খননের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটি পাশ হলে বিলের জমিতেও তিনটি করে ফসল হবে। কৃষিতে ঘটবে বিপ্লব। খাল খননের পর কাজি বাদাম গাছ ২ হাজার সহ বিভিন্ন প্রজাতির ৫-৬ হাজার গাছ রোপন করা হবে।  খাল খননের কারনে ৫০০-৬০০ বিঘা জমিতে বোরো ধান সেচ ও ২০০-৩০০ কৃষক উপকৃত হবে। বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ জানান, পর্যায়ক্রমে উপজেলায় সব খাল খনন এবং বিল কুমারী বিল খননের প্রস্তাব দেওয়া আছে। আশা করছি চলতি অর্থ বছরে না হলেও আগামী অর্থ বছরে পাশ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। উপজেলার আনাচে কানাচে যে সব খাল আছে সেগুলোও খনন করা হবে। সব খাল খনন হলে পতিত জমি থাকবে না, সব জমি চাষের আওতায় আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।
৯০ বার ভিউ হয়েছে
0Shares