শনিবার- ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নির্বাচনি প্রস্তুতির প্রচারণায় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনি প্রস্তুতির প্রচারণায় বিএনপি নেতারা

দুই বছর করোনায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঈদ-উৎসব করতে না পারলেও এবার তার কমতি ছিল না। বিএনপি নেতাকর্মীদের বেশিরভাগ নিজ নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপন করেছেন। ঈদের নামাজের পর মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় এবং কর্মীদের খোঁজখবর নেওয়াসহ তাদের বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত ছিলেন। অনেক নেতা এখনও গ্রামে সময় কাটাচ্ছেন। সব কিছুর মধ্যেই ছিল তাদের ‘নির্বাচনকালীন রাজনীতি’।
বছর দেড়েক পর সংসদ নির্বাচন। যাকে ঘিরে এলাকামুখী হচ্ছেন নেতারা। নিজেদের কর্মী বলয় শক্তিশালী করছেন। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে নেতারা গ্রামে অবস্থান করছেন। তাদের বাড়িতে এখন কর্মী-অনুসারীদের ভিড়। ঈদের শুভেচ্ছা সংবলিত পোস্টারে ছেয়ে গেছে এলাকা। এ নিয়ে একদিকে যেমন আলোচনা হচ্ছে, তেমনি চলছে সমালোচনাও।
বিএনপি সমর্থক ও সাধারণ মানুষের ভাষায়- অনেক পাতি কিংবা অপরিচিত নেতার শুভেচ্ছা পোস্টার ঝুলছে দেয়ালে দেয়ালে, গাছে গাছে। উড়ে এসে জুড়ে বসা এমন নেতাদের নিয়ে চলছে হাসাহাসি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেকে বিরক্তি প্রকাশ করছেন।
গাজীপুর জেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নেতারা এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সংবলিত পোস্টারে লেখা আছে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। ঈদের পর এলাকায় বিয়েশাদি, খেলাধুলাসহ সামাজিক নানা কাজ ও উৎসবে অংশগ্রহণ করছেন তারা। নিজেদের বক্তব্যে নিজের এবং খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের জন্য দোয়া চাচ্ছেন।
বিশেষ করে গাজীপুর জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা হয়েছে ঈদের আগে। এখন পদ পাওয়া নেতারা কর্মীদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। ফাঁকা সড়কে মোটরসাইকেল শোডাউন করছেন। সামনে নির্দলীয় সরকারের আন্দোলনে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক ভিত মজবুত করছেন। হাইকমান্ডের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন।

ঈদের দিন বিকালে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার স্বপ্নতরী নামে একটি রেস্তোরাঁয় দেখা যায় বিএনপি স্থানীয় নেতাকর্মীরা জমায়েত হয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। আড্ডায় প্রতিপক্ষ দল শাসক দল আওয়ামী লীগের অবস্থা নিয়েও আলোচনা করেন। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঠখোলা বাজারে চায়ের দোকানেও একই চিত্র দেখা যায় বুধবার রাতে।
বিশেষ করে গাজীপুর ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা এলাকায় নানাভাবে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। অন্যদিকে বিভিন্ন পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীও ঈদে নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদীবাগে নিজ বাসভবনে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, দলীয় নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের জনসাধারণের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, বিএনপির কর্মসূচিতে জনগণের যে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এটিও আন্দোলনের অংশ। এই আন্দোলন ক্ষমতার জন্য নয়, এই আন্দোলন দেশকে মুক্তির আন্দোলন, গণতন্ত্রের মুক্তির আন্দোলন, মানুষের মুক্তির আন্দোলন। এটি দেশের মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার, ভোটাধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার আন্দোলন।
শুধু মূল দল বিএনপিই নয় তার অঙ্গ সংগঠনের নেতারাও ঈদ রাজনীতিতে বেশ সরব। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল শোডাউন করে গ্রামের বাড়ি বরিশালের উজিরপুর যান। সেখানে তার অনুসারীদের ‘বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে’ এমন সেøাগান দিতে দেখা যায়।
নরসিংদীর মনোহরদী-বেলাব উপজেলার দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল। বুধবার দিনভর তার নিজ এ আসনের মনোহরদী থানার গোতাশিয়া ইউনিয়নের চুলা গ্রামের মানুষের সঙ্গে তিনি শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে মনোহরদী-বেলাবর দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণকে ঈদ শুভেচ্ছা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আজকে দেশে গণতন্ত্র নেই, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন। দেশের গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখতে হবে। শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের বেলাব উপজেলার আহ্বায়ক কয়েস মিয়াসহ মনোহরদী ও বেলাব থানার বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়া যুবদল, কৃষক দল ও শ্রমিক দলসহ কয়েকটি সংগঠন তাদের কার্যক্রম চালিয়েছে। তারা বলছেন, গত দুই বছর করোনার সঙ্কটে নিষ্ক্রিয় ছিল ঈদ রাজনীতি। এবার তা কাটিয়ে সক্রিয় হয়েছেন নেতাকর্মীরা। সবাই কর্মসূচিতে ব্যস্ত। আগামী জাতীয় নির্বাচন মাথায় রেখে ঈদের সময়ে জনসংযোগে জোর দিচ্ছেন তারা। সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যাচ্ছেন।
এ ছাড়া বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র জোট শরিক জামায়াতে ইসলামীও এবারের ঈদে বেশ সক্রিয় ছিল। বিশেষ করে ঈদের আগে জাকাত, দান ও সদগাতে ব্যস্ত সময় পার করেছে দলটি। সংগঠনটি বৃহস্পতিবার ঈদ পুনর্মিলনী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মে দিবসে কল-কারখানার শ্রমিক ও পুড়ে যাওয়া বস্তিতে আর্থিক ও খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।
৫১ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS