শুক্রবার- ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঈদুল ফিতরের চতুর্থ দিনে রাজধানীতে ফিরছে কর্মমুখী লাখো মানুষ

ঈদুল ফিতরের চতুর্থ দিনে রাজধানীতে ফিরছে কর্মমুখী লাখো মানুষ

ঈদুল ফিতরের চতুর্থ দিনে রাজধানীতে ফিরছে কর্মমুখী লাখো মানুষ। যে যেভাবে পারছেন রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন। কেউবা বাস, ট্রেন,লঞ্চ কিংবা বিমানযোগে ফিরছেন।

শুক্রবার ( ৬ মে) রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেল রাজধানীমুখী মানুষের জনস্রোত।এবার লম্বা ছুটিতে আগেভাগেই ঘরমুখো মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করায় বাস টার্মিনালগুলোতে ঈদের আগে তেমনটা ভোগান্তির চিত্র দেখা না গেলেও এবার রাজধানীতে সবাই ঢুকছেন একসঙ্গে। যে কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলের বাসগুলো তথা ব্যক্তিগত গাড়িগুলো যখন গাবতলী দিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করছে তখন দীর্ঘ যানজট দেখা যায়।

এদিকে রাজধানীমুখী বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবাই বলছে এবার ঈদে ভোগান্তির চিত্র ছিল অন্যান্যবারের চেয়ে কম। তবে দক্ষিণাঞ্চলের যারা রাজধানীতে আসছেন তাদেরকে দৌলদিয়া ফেরিঘাটে এখন দীর্ঘ যানজটে পড়তে হচ্ছে। ২-৩ কিলোমিটার যানজট রয়েছে বলে জানা গেছে।

ঈদের ছুটি কাটিয়ে খুলনা থেকে এসেছেন মো কারিমুল আলম। ঈদে ফিরতি পথে কেমন ভোগান্তি পোহাতে হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি খুলনা থেকে আসছি। পরিবার নিয়ে ঈদের আগে যখন যায় তখন ভোগান্তি কিংবা যানজট কম পেয়েছি। কিন্তু আসার সময় দৌলদিয়া ফেরিঘাটে ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে ফেরির জন্য। প্রায় ৩ কিলোমিটার যানজট। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে কাজ করছে। তাই ৩ ঘণ্টা লেগেছে। নয়তো গত ঈদের মতো ১০-১২ ঘণ্টা লাগতো ঘাটে। কিন্তু যতো কষ্টই হোক বাড়িতে সবার সাথে ঈদ করতে পেরেছি এটাই শান্তি।’

মাগুরা থেকে এসেছেন শিহাব শিমুল। তার কাছে ঈদের পথে কেমন ভোগান্তি পোহাতে হলো জানতে চাইলে বলেন, ‘সব ঈদেই ফেরিঘাটে কম বেশি অপেক্ষা করতে হয়। গত ঈদে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। এবার ঘণ্টা চারেক অপেক্ষা করতে হয়েছে। কিন্তু একটি বিষয় ভালো লেগেছে ঘাটে এবার বিশৃঙ্খলা নেই। যদি আরও বেশি ফেরি থাকত তাহলে হয়ত এই অপেক্ষা আরও কমত। কিন্তু এতো কষ্ট হলেও বাড়িতে যাওয়া হয় সবার সঙ্গে দের আনন্দ ভাগাভাগি করা। জানি যাওয়া অনেক কষ্ট তবুও যায় নাড়ির টানে। বাবা-মা-ভাই-বোন সবার টানে। এই কষ্ট কিছুই না,যখন পরিবারের সাথে ঈদ করি।’

নওগাঁ থেকে এসেছেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত তিসা ও তার পরিবার। গাড়ি থেকে নামতেই কথা হয় এই কর্মজীবী নারীর সঙ্গে তিনি  বলেন, ‘যমুনা সেতুর আগে দীর্ঘ যানজট রয়েছে। সেখানে ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষা করতে হয়। এরপর টাঙ্গাইল এবং সাভারে কিছু যানজট পেয়েছি। তবে আজকে একটু কম যানজট। এই ভোগান্তি আসলে কিছুই না পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দের কাছে। ১০-১২ ঘণ্টার বাস জার্নিতে কিছুই মনে হয় না যখন বাড়িতে পৌঁছানো হয় সবার সঙ্গে দেখা হয়। আত্মার টানে বাড়িতে যাওয়া। ছোট-বড় সবার সাথে দেখা হওয়াটাই ইদের আনন্দ।’

এদিকে গাবতলী বাস টার্মিনালে এসে যারাই নামছেন তাদের বেশির ভাগ মানুষ গাড়ি পাওয়া নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন। কারণ রাজধানীর সিটিং সার্ভিসগুলোর গাড়ি ছিলো খুবই কম। আবার সেগুলো একটা দুইটা এলেও ভরে যাচ্ছিল কয়েক মিনিটে। সবাই হুড়োহুড়ি করে উঠে যাচ্ছিলেন। আর যারা বাসে যেতে চান না তারা সিএনজিগুলোর সঙ্গে দরকষাকষি করেও সুবিধা করতে পারছিলেন না। কারণ ভাড়া চাওয়া হচ্ছিলো দ্বিগুণ।

এমনই বিড়ম্বনায় পড়া রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বগুড়া থেকে এসেছেন। বাসে গাদাগাদি করে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে যাবেন না। তাই সিএনজিতে যাবেন বলে ভেবেছেন। বাসা ধানমন্ডি। একটি বেসরকারি আইটি অফিসে কাজ করেন। যেখানে অন্যান্য সময় গাবতলী থেকে ধানমন্ডি ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা সেখানে এখন ৫০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে তাদেরকে ৪০০ টাকা বললেও যাবেন না তারা। কথা বলতে বলতেই এক প্রকার বাধ্য হয়েই বেশি ভাড়া দিয়ে গেলেন গন্তব্যে।

এদিকে জয়পুরহাট থেকে আসা নাহিদা ইসলাম বলছেন, ঈদের আগের দিন বাড়িতে যাই। ৫ দিনের ছুটি ছিল। আগামীকাল শনিবার থেকে অফিস। বাড়ি থেকে আসার সময় মনটা ভারি ছিল। এখনো ভাল লাগছে না। ঢাকায় একাই থাকেন। কিন্তু পরিবারের হাল ধরার কেউ নেই। একাই পরিবারের কর্মজীবী। মনটা ভীষণ খারাপ। কিন্তু কাজ তো করতেই হবে।

পথে কেমন ভোগান্তিতে পড়েছেন জানতে চাইলে বলেন, যমুনা সেতুর আগে রাস্তায় কাজ চলছে। সে জন্য সেখানে গাড়ি আস্তে চলে। আর যমুনা সেতুর আগে ঘণ্টা তিনেক যানজট। সাভার রফতানি যানজট ছিল। কিন্তু এত যানজট, কষ্ট সব দূর হয়ে যায় পরিবারের কথা মনে করলে। তাই এসব ভোগান্তি পরিবারের কাছে তুচ্ছ।

৫৮ বার ভিউ হয়েছে
0Shares