রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আন্দোলনে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত চরফ্যাশনের ৫ জন পায়নি সহযোগিতা

আন্দোলনে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত চরফ্যাশনের ৫ জন পায়নি সহযোগিতা

৫৯ Views

ভোলা প্রতিনিধিঃ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের গুলিতে ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার ৩ থানা এলাকায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। হত দরিদ্র এসব পরিবার সরকারের পক্ষ থেকে আজো কোন সহায়তা পাননি। মঙ্গলবার (২০) আগষ্ট সরজমিনে নিহতদের পরিবার ও চরফ্যাশনের থানাগুলো সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নিহতের পরিবারেরা জানান, আন্দোলনে ১৭ জুলাই (বুধবার) কিশোর মোঃ সিয়াম (১৫), বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) হোসেন (২৫) এবং ১৯ জুলাই (শুক্রবার) কিশোর বাহাদুর হোসেন মনির (১৬), কিশোর সোহাগ (১৫) ও যুবক মোঃ হাছনাইন আহম্মেদ (২৬) গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে নিহত হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পায়নি বলে জানিয়েছেন তারা। নিহত সিয়াম চরফ্যাশন উপজেলার ওসমানগঞ্জ ৪নং ওয়ার্ডের জিয়াউল হকের ছেলে, হোসেন দুলারহাট থানার নীলকমল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মৃত জাফরের ছেলে, বাহাদুর হোসেন মনির শশীভূষণ থানার রসুলপুর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের জাফর মাঝির ছেলে, সোহাগ শশীভূষণ থানার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের স্বপন মিয়ার ছেলে ও মোঃ হাছনাইন আহম্মেদ দক্ষিণ আইচা থানার নজরুল নগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন মালের ছেলে। নিহত পাঁচজনকেই নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও নিহতদের বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি চলছে।
উপজেলার ওসমানগঞ্জ ৪নং ওয়ার্ডের নিহত সিয়ামের মা আঞ্জুরা বেগম জানান, সংসারের অভাব অনটন দেখে সিয়াম গত রোজার ঈদের পরে কাজের জন্য ঢাকায় যান। সিয়াম গুলিস্তানের ফুটপাতে একটি ব্যাটারির দোকানে কাজ করছিলেন। তিনি ছাত্রদের সাথে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন ১৭ জুলাই বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হানিফ ফ্লাইওভারের কাছে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে সিয়াম গুলিবিদ্ধ সেখানেই তার মৃত্যু হয়। বড় ছেলেকে হারিয়ে এখন শোকে কাতর তার মা-বাবা।
হোসেনের স্ত্রী হাসিনুর বেগম ও তার মা রিনা বেগম জানান, নিহত হোসেন ট্রাক ড্রাইভার ছিলেন। দুই কন্যা, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুর লাউতলা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। ১৮ জুলাই রাত ৩টার দিকে হোসেন মোহাম্মদপুর চাঁদ উদ্যান গেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। পরদিন তাকে গ্রামের বাড়ি নীলকমল ২নং ওয়ার্ডে এনে দাফন করা হয়। তার স্ত্রী হাসনুর বেগম আরো জানান, পরিবারে আয়-রোজগার করার মতো হোসেন ছাড়া আর কেউ নেই। হোসেনের মৃত্যুতে দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। বাবাকে হারিয়ে দুই সন্তান আকলিমা (৫) ও সিমা (৩) এখন বাকরুদ্ধ। আমি সরকারের কাছে আমার স্বামী হত্যার বিচার দাবি করছি।
নিহত বাহাদুর হোসেন মনিরের বাবা জাফর মাঝি জানান, চার ভাইয়ের মধ্যে মনির সবার ছোট। তিনি পেশায় একজন ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি ছিলেন। ঢাকার নুরসালা এলাকাতে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। ১৯ জুলাই ৫টার দিকে নতুন বাজার এলাকাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা যান। পরে মৃত্যুর খবর পেয়ে তার ফুফাতো ভাই হাছনাইন আহম্মেদ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে গ্রামের বাড়িতে এনে শনিবার দুপুরে দাফন করে। ছোট ছেলেকে হারিয়ে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এ সময় মনিরের বাবা জাফর মাঝি সরকারের কাছে এ রকম নির্মম হত্যাকান্ডের বিচারের দাবি জানান।
নিহত সোহাগের বাবা কৃষক স্বপন জানান, রামপুর এলাকায় বসবাস করতের তার ছেলে। এলাকার ফুটপাতে জামা কাপড়ের ব্যবসা করতেন। ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। স্থানীয় যুবক সোহাগের মামা আবুল কাশেমকে খবর দিলে লাশ গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করেন। নিহত হাসনাইন আহমেদের স্ত্রী রুমা বেগম জানান, তার স্বামী হাসনাইন পেশায় ডিস ব্যবসায়ী ছিলেন। হাসনাইন ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। আন্দোলনে যোগ দিয়ে ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
এ সময় স্থানীয়রা হাসনাইনের ছোট ভাই হোসেনকে খবর দিলে হোসেন হাসনাইনের লাশ উদ্ধার করে পরদিন শনিবার চরফ্যাশন নিয়ে আসেন। তাদের পারিবারিক কবরস্থানে হাসনাইনকে দাফন করা হয়। বর্তমান সরকারের নিকট হাসনাইনের হত্যার বিচার দাবি করেছেন তার স্ত্রী রুমা বেগম।
এ বিষয়ে চরফ্যাশন, শশীভূষণ ও দক্ষিণআইচা থানার অফিসার ইনচাজর্রা জানান, তারা নিহতদের খবর জেনেছেন এবং তাদের দাফন স¤পর্কে অবহিত আছেন। তবে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ থানায় কোনো অভিযোগ না করায় আর কোন মন্তব্য করেননি। চরফ্যাশন সার্কেলর সহকারি পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান জানান, ঢাকায় নিহত চরফ্যাশনের পাঁচ পরিবারের কেউই উপজেলার কোনো থানায় অভিযোগ দায়ের করেননি। কোনো অভিযোগ না করায় তার কিছু করার সুযোগ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের কোনো অর্থনৈতিক সহযোগিতা করা হবে কি না-জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ ছাড়া কিছুই বলতে পারছি না।

Share This