শুক্রবার, ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথেই ভোলার সাংবাদিক লীগ প্রেসক্লাব ছেড়ে লাপাত্তা

রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথেই ভোলার সাংবাদিক লীগ প্রেসক্লাব ছেড়ে লাপাত্তা

৪৬ Views

ভোলা প্রতিনিধিঃ দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনসহ স্বৈরাচার সরকারের পতনের সাথেই ভোলার সাংবাদিক লীগ ও “র” এর জেলার নেতারা প্রেসক্লাব ছেড়ে পালিয়েছেন। ৫ আগষ্ট সোমবার দুপুর ১টার পর থেকেই ভয়ে ও আতঙ্কে একে একে ক্লাব তথা ভোলা ছেড়ে লাপাত্তা হয়েছেন ডর্জন খানেক। একই সাথে চুরি করে নিয়ে গেছেন প্রেসক্লাবের সকল গুরুত্বপূর্ন কাগজ পত্র। সঙ্গত কারণেই টানা ১ মাস গত হলেও তাদের কোথাও খুজে পাওয়া যায়নি।

ভোলা প্রেসক্লাবের বিভিন্ন সাংবাদিক নেতা ও ক্লাবের একাধিক সদস্যরা জানান, কথিত জংশস ঘাটের সভাপতি হাবিবুর রহমান, সাধারন সম্পাদক “র” এর জেলার নেতা ও দৈনিক যুগান্তর এবং আর টিভির জেলা প্রতিনিধি ও ফাতেমা খানম (তোফায়েল আহমেদের কলেজ) কলেজের শিক্ষক অমিতাভ রায় অপু, বাংলাদেশ টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি ও ছাত্রলীগ নেতা তৈয়বুর রহমান, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) জেলা প্রতিনিধি মুন্ন,দৈনিক দেশরুপান্তর ও বৈশাখী টিভি জেলা প্রতিনিধি যুবলীগ নেতা হোসাইন সাদী, প্রতিদিনের বাংলাদেশ ও ডিবিসি টেলিভিশনের প্রতিনিধি (র এর) নেতা অচিন্ত মজুমদার, সংবাদ ও যমুনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি (র এর নেতা) জুয়েল সাহা, এটিএন বাংলার জেলা প্রতিনিধি গজারিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এম সিদ্দিকুল্লা, লিটন (মাই টিভি), কামাল উদ্দিন সুলতানসহ আরো অনেক সাংবাদিক লীগ ও ভারতীয় “র” এর নেতারা ভোলা ছেড়ে পালিয়েছেন।

২০২০ সালের দিকে হলে প্রেসক্লাবের নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির সাংবাদিকদেরকে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ এর নির্দেশে প্রেসক্লাব থেকে বেড় করে দিয়ে পুরো ক্লাবকে কুক্ষিপ্ত করে নিজেদের দখলে নিয়ে সাংবাদিক লীগ কার্যালয় বানিয়েছেন। তার পর থেকেই পুরো জেলায় শুরু করেন তাদের লুটপাট ও বিভিন্ন দিকে চাঁদাবাজি। কেউ মালিক হয়েছেন মার্কেটের, কেউ নিয়েছেন পার্ক, কেউবা দিয়েছেন পর্যটন কেন্দ্র সহ করেছেন বিভিন্ন উপজেলায় চর দখল। দিনের পর দিন অবৈধ উপায়ে উপার্জন করেছেন অঢেল টাকা, গড়েছেন বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য সহ বাড়ি-গাড়ি। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে ফুলে ফেফে কলা গাছ হয়েছেন কয়েক কথিত সাংবাদিকরা। তাদের বানিজ্যে দিশেহারা হয়ে পরেছেন ভোলার সাধারণ ব্যবসায়ী, বিভিন্ন অফিসের কর্মচারী কর্মকর্তা গন। বাদ পড়েনি জেলা সাত উপজেলার জনপ্রতিনিধি সহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বারররাও।

এছাড়াও নদীপথে বিভিন্ন চোরাই কারবারি, ফেরী, লঞ্চ ও মাছ ঘাট, বালু চোরেরাও তাদের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনার জন্য রীতিমতো দিয়ে আসছেন তাদেরকে মাসোহারা। তাদের কৃতকর্মে বর্তমানে প্রকৃত সাংবাদিকদের চেহারা দেখলেও ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেন সাধারন জনতা।

দীর্ঘদিন যাবত এই সকল বিষয় নিয়ে প্রকৃত সাংবাদিকদের সাথে বাক-বিতন্ডা হয়ে আসলেও তৎকালীন স্বৈরাচার সরকারের শাসনামলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিনের রাজনীতি মুক্ত ভোলা প্রেসক্লাবকে আওয়ামী সরকারের দলীয় কার্যালয় বানিয়েছেন। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করায় দৈনিক দিনকালের জেরা প্রতিনিধি মিজানুর রহমানকে আওয়ামী ক্যাডারেরা ২২ মে রাতে নতুন বাজারে রাত সাড়ে ৯টার সময় পিটিয়ে ও গ্যাসের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টাও করেছেন। তিনি ১ মাস ভোলা হাসপাতাল ও পরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলেন।

শুধু তাই নয়, ওই সকল সাংবাদিক লীগ দেশব্যাপী সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্র জনতার বিপক্ষে অবস্থান করেছিলেন। বিভিন্ন সময় আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে প্রেসক্লাবের সামনে দাড়াতে দেননি। তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের কোন ধরনের সংবাদ পরিবেশনতো দূরের কথা, উল্টো বরাবরই ছাত্র-জনতাদের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করেছেন।

অভিযোগ রযয়েছে, কয়েক বছর যাবত ক্লাবের মোট অংকের টাকা, ক্লাবের প্রথম ফ্লোরে রেষ্টুরেন্ট, চতুর্থ ফ্লোরে জিমনেসিয়াম ভাড়ার টাকা, বিভিন্ন সময়ে প্রেস কনফারেন্সের জন্য হল রুম ভাড়ার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। নিজেরা ও অনেক অসাংবাদিকের নাম দিয়ে সাংবাদিক কল্যান ট্রাস্টের টাকা এনে নিজেরা আতœসাত করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ২৪ সালের ৫ আগষ্ট সোমবার স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর পরই দুপুরের দিকে তারা ক্লাবের-চেক, জমা বই, রেজিষ্টার ও রেজুলেশনের সকল খাতা বই ও চাদা আদায়ের রশিদ বই এবং গুরুত্ব পুর্ন কাগজ পত্র নিয়ে যান। এখন পর্যন্ত ভোলা শহরে কিংবা কোন স্থানে তাদেরকে দেখা যায়নি।

এদের মধ্যে আবার কয়েকজন সাংবাদিক লীগ নেতা বিভিন্ন স্কুল কলেজে চাকরিও করেন। সেখানেও তারা অনুপস্থিত রয়েছেন।

এদিকে গেল ৫ আগস্ট থেকে কথিত ওই সকল সাংবাদিক লীগ ও ভারতীয় “র” এর নেতাদের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। তারা কোথায় আছেন তা তাদের পরিবারের সদস্যরাও জানেননা বলে জানান।

একটি সুত্র জানিয়েছেন, অমিতাভ রায় অপু লক্ষিপুরের এক গ্রামে রয়েছেন, আর অন্যান্যরা ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন।

যদিও র্দূনীতিবাজ কথিত সাংবাদিক লীগ পালিয়ে যাওয়া বিষয়টি পুরো ভোলার টক অব দ্যা টাউন। তাদের অবৈধ অর্থ-সম্পদের, বাড়ি-গাড়ির হিসাব, দীর্ঘদিন যাব তাদের বিভিন্ন ধরনের কুকর্মের জন্য অবিলন্বে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য জোর দাবী জেলার প্রকৃত সাংবাদিকসহ ছাত্র-জনতার।

Share This