বৃহস্পতিবার, ২৩শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব উদযাপিত 

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব উদযাপিত 

৩১ Views

এম.এ আহমদ আজাদ, হবিগঞ্জ থেকেঃ প্রতি বছর মাঘ মাসের এক তারিখে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার গোয়াহরি গ্রামের বড়বিলে সবাই মিলে উৎসব আমেজে মাছ ধরেন। এই মাছ ধরাকে স্থানীয়রা বলেন ‘পলোবাওয়া’। গোয়াহরি গ্রামের মানুষ দেশ বা প্রবাসে যেখানেই থাকেন না কেন পহেলা মাঘের আগে সবাই বাড়ি চলে আসেন পলোবাওয়া উৎসবে অংশ নিতে।

শীতের শুরুতে বিলের পানি শুকাতে শুরু করে। তাই প্রতি বছর মাঘ মাসের প্রথম দিন ছেলে-বুড়ো মিলে দিনব্যাপী উৎসব আমেজে বিলে মাছ ধরেন। এর ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার গোয়াহরি গ্রামের বড়বিলে এবারও ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব উদযাপিত হয়েছে। স্থানীয়দের মতে প্রায় দুইশত বছর থেকে গোয়হরি গ্রামের মানুষ এই পলোবাওয়া উৎসব উদযাপন করছে।

রুই, কাতলা, আইড় ও শোল মাছসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরেন স্থানীয় মানুষজন। কেউ ৮ থেকে ১০টি মাছ নিয়ে যান কেউবা আবার ২ থেকে ৩টি মাছ নিয়েই বিল থেকে উঠে পড়েন। এই পলোবাওয়া উৎসব দেখতে সকাল থেকে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের লোকজন বিলের পাড়ে যান। উৎসব উদযাপন করতে এই বিলের আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের নারী, শিশুরাও বিলের পাড়ে ভিড় জমান।

লন্ডন থেকে পলোবাওয়া উৎসবে অংশ নিতে আসা আলম খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘শুধুমাত্র এই পলোবাওয়ার লাগি লন্ডন থাকি আইছি। গ্রামোর সবার লগে পলোবাইতে পারিয়া খুব ভালা লাগের। দুইটা মাছ মারছি। আমি গত বছরও আছলাম পলোবাওয়াত।’

সরজমিনে দেখা যায়,  শরীরে সরিষার তেল মেখে পলো, জাল নিয়ে গোয়াহরি গ্রামের বড়বিলে নেমে পড়েন শিশু, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধরা। গোয়াহরি গ্রামের পুরুষরা বিলে নামলেও বাড়ির নারীদের একদল মশলাপাতি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, আরেকদল বিভিন্ন পাত্র হাতে নিয়ে পুরুষদের পাশে বিলের পাড়ে থাকেন। পুরুষরা বিল থেকে মাছ ধরে পাড়ে এসে তাদের কাছে দিয়ে যান।

মাছ ধরতে আসা মরতুজ আলী, হাফিজুর রহমান, গোলাম হোসেন বলেন, প্রতি বছর আমরা এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করি। এই পলোবাওয়া উৎসব আমাদের কাছে ঈদের আনন্দের মত। সবাই মিলে আমরা মাছ ধরে বাড়ি নিয়ে যাই। এরপর রান্না করে সবাই একসঙ্গে বসে খাই। গত বছর বিলে মাছ কম ছিল তাই সবাই বেশি মাছ ধরতে পারেনি। তবে এবার বিলে প্রচুর মাছ ছিল তাই সবাই দুহাত ভরে মাছ নিয়ে বাড়ি গিয়েছে।

মাছ ধরতে আসা লন্ডন প্রবাসী আব্দুল বাছিত, মনোহর আলী, আব্দুর রফিক, ফয়জুল হক, স্পেন প্রবাসী আনোয়ার হোসেন, সৌদি প্রবাসী মহিবুর রহমান  জানান, প্রতি বছরই তারা পরিবার পরিজন নিয়ে দেশে আসেন এই পলোবাওয়া উৎসবে অংশগ্রহণ করতে। তাদের সন্তানরা যেন দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য শিখতে পারে, গ্রামের প্রতি তাদের মায়া জন্মে সেজন্য এ সময় দেশে আসেন।

এর আগে ২০২২ সালে বর্ষাকালের শেষের দিকেই শুকাতে শুরু করেছিল গোয়াহরি বিলের পানি। তখন পানি কমে যাওয়া ও অতিরিক্ত তাপমাত্রার ফলে বিলের মাছে মড়ক দেখা দিলে গ্রামের মানুষ মিলে সিদ্ধান্ত নেন, মাঘে নয় ভাদ্রের শুরুতেই এবার পালিত হবে পলো বাওয়া উৎসব। তাই সেবছর চার মাস আগেই করা হয়েছিল পলোবাওয়া উৎসব। এর পরের বছর ২০২৩ সালে আবার সঠিক সময়েই পলোবাওয়া উৎসব হলেও বিলে মাছের পরিমাণ অনেক কমে যায়। ২০২৪ সালেও অন্য বছরের তুলনায় বিলে মাছ কম ছিল। তবে এবার বিলে মাছের পরিমাণ বেশি ছিল বলে জানান মাছ ধরতে আসা মানুষজন।

Share This