শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নিয়ামতপুরে পৈত্রিক সম্পত্তি জোর করে দখলের অভিযোগ : উভয় পক্ষের মালিকানা দাবী

নিয়ামতপুরে পৈত্রিক সম্পত্তি জোর করে দখলের অভিযোগ : উভয় পক্ষের মালিকানা দাবী

নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা ‍ৃ প্রায় বিশ বিঘা সম্পত্তি দখলের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিবাদমান ওই জমিতে ইতি মধ্যে ১৫০ থেকে ২০০ লোক নিয়ে জোরপূর্বক চাষ করে ধানও রোপন করেছে প্রতিপক্ষ। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিচার চেয়েও কোন বিচার না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।

দখলকারী উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের নিশিকান্ত সরকারের ছেলে উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক উৎপল কান্ত সরকার পিন্টু।

তবে অভিযুক্ত ঐ আওয়ামী লীগ নেতা উৎপল কান্ত সরকার পিন্টু বলেন, ১৯২০ সালে নূরুদ্দিনের নাম ও ১৯৬২ সালে নূরুািদ্দনের ছেলে আমীর উদ্দিনের নামে উক্ত সম্পত্তি রেকর্ড হয়। পরবর্তীতে সাড়ে ২০ বিঘার মধ্যে সাড়ে ১১ বিঘা ১৯৯২ সালে আমীর উদ্দিনের তিন ছেলে আমার বাবা নিশিকান্ত সরকারের নিকট কবলা দলিল করে দেয়। জেলার পতœীতলার মাতাহাব উদ্দিনের ছেলে গোলাম মোস্তফা শুধু মাত্র ৮৮ শতকের মালিক হয়ে সে পুরো সাড়ে ২০ বিঘাই দখল করে খেত। বর্তমানে ৮৮ শতক জমির জন্য সভিল মামলা চলছে। মামলা নং- ১৫০/২০০৭। ঐ সম্পত্তির উপরই ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। আমরা গত বোরো মৌসুম থেকে আমাদের সাড়ে ১১ বিঘা সম্পত্তি বুঝে নিয়ে চাষাবাদ করছি। তার পরেও যেহেতু মামলা চলছে আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনে যে পাবে আমরা তা মেনে নিব।

ভুক্তভোগী জেলার পতœীতলা উপজেলার পতœীতলা গ্রামের মাহাতাব উদ্দিনের ছেলে পতœীতলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা জানান, নিয়ামতপুর উপজেলার কাটনা মৌজার ৬.৮১ একর সম্পত্তি ১০২০ সালে কাটনা গ্রামের নুরুদ্দিনের নামে রেকর্ড হয়। এরপর ১৯৬২ সালে তারই ছেলে আমীর উদ্দিনের নামে রেকর্ড হয়। ১৯৭২ সালে কাটনা মৌজার জেএল নম্বর ২০, খতিয়ান নম্বর ১৩১ ও দাগ নং ১০৪,১০৫, ১২২,১৩৪, ১২৩,১২৫, ১২৬,১২৮, ১৩০, ১৩১, ১৩২, ১৩৩, ১৫১, ১৫২, ১৫৩, ১৪০, ৬৬৬ এর ১৩৯,১৪০, ১৪১ এর ৬ একর ৮১ প্রায় সাড়ে ২০ বিঘা সম্পত্তি আমার বাবা মাহাতাব উদ্দিনের নামে রেকর্ড হয়। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত আমরা ভোগ দখল করে আসছি। আমরা চার ভাই ৬ বোন সকলেই নিজ নিজ অংশ বুঝে নিয়ে অন্যান্য অংশীদাররা বিক্রি করে দিয়েছে। আমি আমার অংশসহ দুই ভাইয়ের অংশ কিনে নেই। হঠাৎ কোন কাগজপত্র ছাড়ায় নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক উৎপল কান্ত সরকার পিন্টু জোর পূর্ব উক্ত জমি দখল করে ধান রোপন করে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় আমরা তেমন কোন সহযোগিতা আমরা পাচ্ছি না।

ক্রয়সূত্রে মালিক উপজেলার কাটনা গ্রামের মৃত- সোলেমানের ছেলে মোজাফফর হোসেন বলেন, আমি আরএস খতিয়ান দেখে ২০১২ সালে ১.১৬ একর সম্পত্তি ক্রয় করে আজ পর্যন্ত ভোগ দখল করে আসছিলাম। হঠাৎ আওয়ামীলীগ নেতা উৎপল কান্ত সরকার পিন্টু সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করে। গত ৩১ জুন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০জন লোক নিয়ে জোরপূর্বক জমি চাষ করে ধান রোপন করে দেয় এমনকি আমার কাঠাল গাছের কাঁঠাল পর্যন্ত তারা নিয়ে চলে যায়। বিষয়টি নিয়ে আমিসহ অন্যান্য ক্রয়সূত্রে মালিকরা মন্ত্রী মহোদয় এর সাথে দেখা করলে তিনি বিষয়টি দেখার আশ^াস দেন। আমাদের সম্পত্তির কাগজপত্র দেখার সময় দিলেও তারা তা মেনে আগেই জোরপূর্বক চাষ করে ধান রোপন করে দেয়। আমরা বিষয়টি থানায় জানালে তারাও মিমাংসার কথা বলে বিদায় করে দেয়। সরকারী দলের নেতা হওয়ায় আমরা কোন আইনী সহযোগিতা পাচ্ছি না। তবে মন্ত্রী মহোদয় দুপক্ষের কাগজপত্র জমা নিয়েছেন। আইনজীবি বুঝে সমাধান করবেন বলে জানিয়েছেন।

আরেক ভুক্তভোগী কাটনা গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে মিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি এক বিঘা জমি কিনেছি আরএস খতিয়ান মূলে। ২০১৩ সালে ক্রয় করে এখন পর্যন্ত ভোগ দখল করে খাচ্চি। হঠাৎ উৎপল কান্ত সরকার পিন্টুি আমাদের জমি জোর পূর্বক দখল করে নেয়। আমরা গ্রামের নিরহ মানুষ আমরা তো তাদের সাথে শক্তিতে পারবো না। তাই আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আইনে যদি পাই নিব তা পেলে নিব না। মারামারি করতে পারবো না। মন্ত্রী মহোদয়ের ভাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মনোরঞ্জন কাকা আমাদের বলেছেন এর একটি সুষ্ঠু সমাধান করে দিবেন। আমরা তাদের দিকেই চেয়ে আছি।

সম্পত্তিগুলো আমাদের গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে মনসুর রহমান ২০১৪ সালে ৩৩ শতক, মৃত- আনোয়ার হোসেনের ছেলে আরিফুল হক ২০১৩ সালে সাড়ে ৬শতক, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা গ্রামের মাইনুল হোসেন ও তার দুই ভাইসহ আরো তিনজন অংশীদার ৬ বিঘা সম্পত্তি ক্রয় করে ভোগ দখল করে আসছিল।

এ বিষয়ে নিয়ামতপুর থানার অফিসার ইন চার্জ হুমায়ন কবির বলেন, আমি কোন অভিযোগ পাই নাই। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

১৭ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS