দুর্গাপুরে আইটি উদ্যোক্তা পিন্টু দিও’র বিআইটিআই বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানে ব্যাপক সাড়া মিলছে
কলিহাসান,দুর্গাপুর(নেত্রকোণা)প্রতিনিধি: উৎসব পিন্টু দিও। দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি গ্রামে বাড়ি। তিনি একজন প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইনার এবং ফ্রিল্যান্সার। ২০০২ সালে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ থেকে ৩ মাস মেয়াদী এমএস অফিসের ওপর একটি ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেণ। কলেজ জীবন ২০০৪ সাল থেকেই সরাসরি আইটি ক্যারিয়ারের সাথে জড়িত। কলেজে পড়াশুনার পাশাপাশি তাঁর দুই ভাইকে বাবা একটি ডিজিটাল স্টুডিও করে দেন। মূলত সেই কাজ করতে করতেই আমার গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে জানার আগ্রহ শুরু হয়। ২০০৯ সালে উচ্চতর শিক্ষা এবং চাকুরীর জন্য ঢাকায় এসে তিনি ডিজাইন জগতে পা রাখেন। ঢাকায় বেশ কয়েকটি ডিজিটাল প্রিন্টিং প্রেস, স্বনামধন্য ২ টি কর্পোরেট ডিজাইন ফার্ম এ চাকুরী করেণ। সর্বশেষ ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিএসবি ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রæপে সিনিয়র গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেণ। ২০১৬ সাল থেকে ফ্রিল্যান্সিং পেশার সাথে জড়িত এবং দেশে বসে ফিনল্যাÐের বায়ারের রিমোট জব করছেন।
২০১৬ সালে তিনি নিজের ডিজাইন ও ফ্রিল্যান্সিং স্কীল শুধুমাত্র নিজের মধ্যে না রেখে শিক্ষিত বেকার যুবাদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে বিআইটিআই নামে একটা আইটি ট্রেনিং সেন্টার শুরু করেণ। প্রথম অবস্থায় তিনি মিরপুরে বাসায় আলাদা একটা রুমে ছোট আকারে কাজ শুরু করেণ এবং ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী বাবু কবির (মানিকগঞ্জ- ফাইভার মার্কেট প্লেসে টপ রেটেড সেলার), ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিও ঘ্রাগ্রা (ঢাকা মিরপুর-ফাইভার মার্কেট প্লেসে লেভেল টু সেলার) এবং ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থী নিলয় নীল (নীলফামারী থেকে- ফাইভার মার্কেট প্লেসে লেভেল টু সেলার) । এভাবে আরও অনেকে নিজ এলাকায় ক্ষ্রদ্র উদ্যোক্তা হয়ে ব্যবসা করছেন, ফ্রিল্যান্সিং করছে এবং নিজের কর্মসংস্থান তৈরী করে নিয়েছে। ঢাকা মিরপুরে বিআইটিআই অফ লাইন এবং অনলাইন কোর্স চালু ছিলো। ঢাকায় ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল করোনার আগে ২০০০ জনেরও বেশি শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্ম সংস্থানের পথ তৈরীতে সহযোগিতা করছেন।
২০২০ সালে করোনা পরবর্তীতে লকডাউনের পর পারিবারিক চাপে পিন্টু দিও’র আর ঢাকা যাওয়া হয়নি। তাই বিআইটিআই কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার দূর্গাপুরে শুরু করেণ যেন দুর্গাপুরের শিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্ম সংস্থানের পথে সাহায্য করা যায়। সেই লক্ষে তিনি ২০২০সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুর থানার বিরিশিরি গ্রামে বিআইটিআই কার্যক্রম শুরু করেণ। গত ২বছরে (অফ লাইন অনলাইন) ১৫০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীকে ব্যাসিক কম্পিউটার এবং এডভান্স গ্রাফিক্স ডিজাইন উইথ ফ্রিল্যান্সিং কোর্সের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ও কর্মসংস্থান তৈরীতে সহযোগিতা করা হয়েছে। যারা বিআইটিআইতে কোর্স করেছে তারা কেউ ফ্রিল্যান্সিং করে দেশের রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করছে, কেউ ব্যবসায় করছে আবার কেউ উদ্যোক্তা হয়ে নিজের কর্মসংস্থানের পথ তৈরী করে নিয়েছে। বর্তমানে বিআইটিআই এর ২ টি শাখা রয়েছে এবং খুব শীঘ্রই কলমাকান্দা ও ময়মনসিংহে ব্রাঞ্চ চালু হবে।
বিআইটিআই এর কার্যক্রমকে আরও গতিশীল এবং চাকুরীর ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সরকারি সার্টিফিকেট প্রদান করার লক্ষে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি তার এক বন্ধুর মাধ্যমে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের উদ্যোক্তা সম্পর্কে জানতে পারেণ। ডাক বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী বিরিশিরি পোষ্ট অফিস এবং কলমাকান্দা চৈতা পোস্ট অফিসের জন্য এক ছোট ভাইকে দিয়ে আবেদন করি। অনেক চেষ্টা করার পর গত ২২ আগষ্ট বাংলাদেশ ডাক বিভাগের দুর্গাপুর থানার বিরিশিরি ব্রাঞ্চ পোষ্ট অফিসের উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি নিয়োগ পেয়েছেন এবং তাঁর ভাই কলমাকান্দা থানার চৈতা পোষ্ট অফিসে উদ্যোক্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সহযোগিতায় পার্শবর্তী থানা কলমাকান্দাতেও বিআইটিআই শিক্ষিত এবং বেকার যুবাদের জন্য কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। উনার সাথে বিআইটিআই পরিবারে আরও ৭ জন ট্যালেন্ট মেন্টর কাজ করে যাচ্ছেন। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশের শিক্ষিত বেকার সমস্যা সমাধানে দক্ষতাবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান তৈরী এবং ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে দেশের রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে চলেছে। বাংলাদেশের এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বেকার সমস্যা নীরসনে এবং দেশকে ডিজিটাল করার লক্ষে তিনি এবং বিআইটিআই কাজ করে যাচ্ছে এবং সবার সহযোগিতা কামনা করেণ তিনি।