বুধবার, ১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বীরগঞ্জে ব্যস্ত সময় পার করছেন  লেপ-তোষক তৈরির  কারিগররা

বীরগঞ্জে ব্যস্ত সময় পার করছেন  লেপ-তোষক তৈরির  কারিগররা

১৫ Views

দেখতে দেখতে চলে আসছে শীতকাল। আর কিছুই দিনের মধ্যেই স্পর্শ করবে শীতের ঠান্ডা হিমেল হাওয়া। শীত মানেই প্রশান্তির ঘুমের জন্য সবচেয়ে উপযোগী ঋতু। দিনে প্রচন্ড গরম আর ভোর রাতে বইতে শুরু করে হিমেল হাওয়া। সেভাবে শীতের সকাল শুরু না হলেও জলবায়ুর পরিবর্তনে অনুভূত হচ্ছে শীতের আমেজ। কয়েকদিনের প্রচণ্ড ঠান্ডায় জবুথবু দিনাজপুরের বীরগঞ্জের মানুষ। শীতের আগমনে লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। বিভিন্ন স্থানে লেপ-তোষক তৈরির দোকানগুলোতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় সর্বত্রই গত কয়েক দিন থেকে একটু একটু করে শীত আসতে শুরু করেছে। শীতের আগমনে প্রত্যন্ত পল্লী এলাকায় থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কারিগররা। এবার একটু আগে থেকেই শীত নামতে শুরু করেছে। তীব্র শীতে ধুনকর আর লেপ-তোষকের ব্যবসায়ীরা বেজায় খুশি। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) পৌর শহরের বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, দোকানে ব্যবসায়ীরা বিক্রির জন্য লেপ-তোষক মওজুদ করে রেখেছেন। জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে ঠান্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশা পড়ছে। দিনে সূর্যের আলো থাকলেও সন্ধ্যার পর বৃষ্টির মতো কুয়াশায় চারদিকে ঢেকে যাচ্ছে। নভেম্বর  মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বীরগঞ্জ উপজেলায় শীত নামতে শুরু করেছে। তীব্র শীতের কারণে বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় বেজায় খুশি ধুনকর আর গরম কাপড় ব্যবসায়ীরা। লোকজন নিজের পরিবারের সদস্যদের জন্য লেপ-তোষক সংগ্রহ করেছেন। তেপ-তোষাক তৈরির অগ্রিম বায়না নিচ্ছেন কারিগররা। টেইলারগুলোতেও ভিড় করছে মানুষ। বিভিন্ন ধরনের শীত বস্ত্র তৈরির পাশাপাশি কোট-প্যান্ট তৈরির চাহিদাও বেড়ে গেছে। এই প্রচন্ড শীতের মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে বীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হিড়িক পড়েছে লেপ-তোষক বানানোর।
পৌরশহরের বিজয় চত্বর এলাকার আজিজুল ইসলাম, খানসামা রোড,ঢাকা -পঞ্চগড় মহাসড়কের পাশে বাবু ও হাটখোলা এলাকার কাহারোল মোড়ে মা তুলা ঘরের স্বত্বাধিকারী মোঃ ইসরাইল হোসেনসহ অনেকে কারিগর লেপ-তোষক তৈরির কাজে ব্যস্ততা সময় পার করছেন। এ দিকে খোলা বাজারে লেপ-তোষক তৈরির তুলার দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে বলে দাবি ক্রেতারা। পৌরশহরের (পুরাতন শহীদ মিনার) বিজয় চত্বর এলাকার লেপ-তোষক তৈরির কারিগর  আজিজুল ইসলাম জানান, বাজারে প্রতি কেজি গার্মেন্ট তুলা ৫০ টাকা থেকে ৭০ টাকা, শিমল তুলা ৪০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা, কার্পাস তুলা ও শিশু তুলা ১৭০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর তুলার মূল্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে পৌর এলাকা ও গ্রামাঞ্চলের গৃহবধূরা শীতের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পুরান কাঁথা, কম্বলগুলো জোড়াতালী দিয়ে মেরামত করেছেন। বীরগঞ্জে একটি লেপ বানাতে প্রকারভেদে ১২০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। পৌর শহরের পরিত্যক্ত ডাক্তার খানা মাঠ এলাকায় একজন ক্রেতা জানান, গত বার ১০০০ টাকায় যে লেপ বানানো হয়েছিল এবার সেটা ১২০০ টাকা খরচ পড়ছে। লেপ কিনতে আসা মাহবুব ইসলাম  বলেন, ‘আসছে প্রচন্ড শীত, এখন দিনে গরম থাকলেও রাতে একটু একটু শীত অনুভব হয়। আর আমাদের এই জেলায় শীত বেশি হয়, তাই আগে ভাগে লেপ তৈরি করে নিতে এসেছি।’ তিনি আরও  জানান, লেপ-তোষক প্রকারভেদে গত বছরের চেয়ে এবার ২০০-৩০০ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। উপজেলার হাটখোলা এলাকার কারিগর ইসরাইল ও জাকিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন তারা ২টা থেকে ৪টা লেপ-তোষক বানাতে পারেন। আর একটি লেপ-তোষক বানানোর মজুরি হিসেবে পারিশ্রমিক পান ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। তবে সাইজ অনুসারে প্রতিদিন ৬শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার হয়। সেই টাকা দিয়েই সংসার চালান। তারা দীর্ঘ ৯বছর থেকে দোকান করছেন।
এদিকে লেপ-তোষক দোকানদার বাবু বলেন, এখনো ঠিকমতো শীত পড়েনি। তবে রাতে হালকা হালকা শীত অনুভব হয়। তাই লোকজন শীত নিবারণের জন্য শীতবস্ত্রের প্রতি ঝুঁকছেন। উপজেলা শহরে অন্য অনেক দোকান থাকা শর্তেও প্রতিদিন তার দোকানে প্রায়ে ৭ থেকে ১০টি লেপ-তোষক অর্ডার পান। তিনি আরও জানান, ‘অন্য বছরের তুলনায় দামের এবার কাপড় ও তুলার দাম বেশি। যেমন শিমুল তুলা ৪৫০ থেকে ৫শ’ টাকা প্রতি কেজি, সাদা (গার্মেন্টস তুলা) ৬০ থেকে ৭০ টাকা, প্রতি কেজি কালো রঙিন হলুদ লাল লীল রংগের গার্মেন্টস তুলা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা প্রতি কেজি। কার্পাস তুলা ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি করি। বিভিন্ন কাপড়ের মান অনুসারে প্রতি গজ ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। তবে প্রতি লেপ ৫৫০ থেকে ১৫শ’ টাকা এবং তোষক ৮শ’ টাকা হতে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি।

Share This