বুধবার, ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সিরাজগঞ্জে ভুট্টা গাছ ভাঙ্গিয়ে  তৈরি হচ্ছে গো-খাদ্য সাইলেজ

সিরাজগঞ্জে ভুট্টা গাছ ভাঙ্গিয়ে  তৈরি হচ্ছে গো-খাদ্য সাইলেজ

১২ Views

এইচএম মোকাদ্দেস,সিরাজগঞ্জ  :  সিরাজগঞ্জে গবাদিপশু লালন-পালনে মিরাক্কেল হিসেবে দেখা দিয়েছে সাইলেজ। সাইলেজ হলো যে কোন সবুজ ঘাসকে প্রক্রিয়াজাত করে বায়ুশুন্য জায়গায় গাজন করে রেখে তার মাসাধিককাল পর হতে গবাদিপশুকে খাওয়ালেই সেটি হবে সাইলেজ। তবে উৎকৃষ্ট মানের হয় ভুট্টার সাইলেজ- ভুট্টা গাছ ভাঙানোর পর লালিগুড় ও লাইম স্টোন পাউডার মিশিয়ে তৈরি হয় সাইলেজ। গো-খাদ্যের অতিরিক্ত দামের কারণে গবাদিপশু লালন-পালন করে লোকসানে পড়তে হচ্ছে গো-খামারিদের। বাজারে প্রতি কেজি ভুসি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা দরে। আর ভুট্টার সাইলেজ ১০-১২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ২ কেজি সাইলেজ ১ কেজি ভুসির কাজ করে। ভুসির থেকেও ভুট্টার সাইলেজে প্রোটিন বেশি। সিরজগঞ্জের  সদর, রায়গঞ্জ, কাজিপুর ও  শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন  মাঠে কথা হয় ভুট্টার সাইলেজ প্রস্তুতকারীদের সাথে। তারা জানান, প্রতি বিঘা ভুট্টা গাছের দাম ৩০-৩৫ হাজার টাকা। সেগুলো ক্রয় করে কৃষকের ক্ষেতেই সাইলেজ তৈরি করছে। প্রতি বিঘায় ৫০ কেজির ১০০ থেকে ১১০ বস্তা সাইলেজ হয়। বাজারে প্রতি কেজি সাইলেজ ১০-১২ টাকা দরে বিক্রি হলে ৫০-৬০ হাজার টাকা প্রতি বিঘা ভুট্টা গাছের সাইলেজ বিক্রি হয়ে থাকে। ভুট্টা ভাঙানোর পর সাইলেজের কাঁচামাল হিসেবে মিশ্রিত হয় লালিগুড় ও লাইম স্টোন পাউডার। ভুট্টার সাইলেজে অধিক পরিমাণে প্রোটিন থাকায় গো-খাদ্যের জন্য এটা উপযোগী। ভুট্টার সাইলেজ এক-দেড় বছর সংরক্ষণ করে রাখলেও গবাদিপশুর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় না বলে দাবি করেন তিনি।

এবিষয়ে কাজিপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: দিদারুল আলম বলেন, কাজিপুর চরাঞ্চল থেকে ভুট্টাগাছ সংগ্রহ করে নিয়ে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নলকাসহ এনডিপির বিভিন্ন শাখায় এই সাইলেজ তৈরি করা হয়। তাছাড়াও এখান থেকে ভুট্টাগাছ সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাইলেজ তৈরির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এতে কৃষকেরা ভুট্টার গাছ বিক্রি করে যথেষ্ট লাভবান হয়। পাশাপাশি গো-খামারিরাও তাদের গো-খাদ্য সহজেই পূরণ করতে পারে।

শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো. বিল্লাল হোসেন জানান, এ অঞ্চল বন্যা প্রবণ এলাকা হওয়ায় চার মাস ঘাসের জমি পানির নিচে থাকে। ফলে সবুজ ঘাসের অভাবে ভুষির দোকানে অনেক টাকা বাকি হয়ে যায় গো-খামারিদের। পরে গরু বিক্রি করে ঐ দোকানের বাকি টাকা পরিশোধ করতে হয়। বর্ষা মৌসুমে গবাদিপশুকে সাইলেজ খাওয়ালে দুধের উৎপাদন বেড়ে যায়, গরু হৃষ্টপুষ্ট হয়। দুধ বিক্রির টাকা দিয়েই ভুষির দোকানের বাকি টাকা পরিশোধ করতে পারবে গো-খামারিরা। তাদের গরু বিক্রি করে আর হালখাতা খাওয়ার প্রয়োজন হবে না।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: একেএম আনোয়ারুল হক বলেন, সাইলেজ খাওয়ালে গাভির দুধ বাড়ে আবার ষাঁড় গরু হৃষ্টপুষ্ট করার মাধ্যমে অধিক মাংস উৎপাদন করা সম্ভব। এতে খরচ কম, এ সাইলেজটি হলো যুগোপযোগী একটি প্রযুক্তি। গবাদিপশু সাইলেজ খাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে শুধু এ উপজেলাই নয় সারা দেশেই গবাদিপশু লালন-পালনে নাটকীয় পরিবর্তন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

Share This

COMMENTS