
ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষক সিরাজগঞ্জে যমুনার চরাঞ্চল রাঙাচ্ছে লাল মরিচ

এইচএম মোকাদ্দেস,সিরাজগঞ্জ :; সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর চরের নতুন পলি মাটিতে চাষ হচ্ছে লাল সোনা খ্যাত মরিচের। চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ খেত রাঙাচ্ছে লাল মরিচ। এ বছর মরিচের ভালো ফলন হয়েছে। সেই সঙ্গে ভালো দাম পাওয়ায় খুশি চাষিরা।
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর জেলায় ১ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে। চাষকৃত মরিচের মধ্যে হাইব্রিড জাতের বিজলী, যমুনা, রশনী, ঝিলিক উন্নত জাতের মধ্যে বারি-৩, সুপার সনিক, রংপুরী, বগুড়া ছাড়াও স্থানীয় জাতের মরিচের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে শুকনা মরিচের উৎপাদন হয়েছে ২ দশমিক ৫৯ মেট্রিক টন। এ বছর জেলায় শুকনা মরিচের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৫১৯ মেট্রিক টন।
স্থানীয় বাজার সূত্রে জানাযায়, বর্তমানে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে আর শুকনো মরিচ মণ ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৫৫০ টাকা কেজি দরে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যমুনার চরে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। সিরাজগঞ্জের যমুনার চরে উৎপাদিত কাঁচা মরিচ ও শুকনো মরিচ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কিনতে আসছেন পাইকাররা। প্রতি সপ্তাহে শনি ও বুধবার কাজিপুরের নাটুয়াপাড়া হাট বসে। এই হাট থেকে দেশের বড় বড় কোম্পানির প্রতিনিধিসহ ব্যাপারীরা মরিচ কিনে নিয়ে যান। অনেক ব্যাপারী হাট থেকে মরিচ কিনে চরের তপ্ত বালুর ওপর শুকিয়ে নিয়ে যান। এ বছর চরের কৃষকরা মরিচ চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন।
সোনামুখী ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের মরিচ চাষী আনছার আলী জানান, এ বছর ১ বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছেন। কাঁচা মরিচ বিক্রি করেও চার মণ শুকনো মরিচ রেখেছেন। তার এই ১ বিঘা মরিচ খেতে চাষ করতে খরচ হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। শুকনো মরিচ বাজারে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজি। বর্তমান বাজারে চার মণ মরিচ ৯৬ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান এই মরিচ চাষী।
নাটুয়াপাড়ার কৃষক আব্দুল করিম বলেন,কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শে এক বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছি। এরই মধ্যে ২০ মণ কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছি। আরও চার মণ মরিচ শুকিয়ে রেখেছি। এখন যদি শুকনো মরিচ বিক্রি করি তাহলে প্রায় ১ লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার সাদাত বলেন, ভালো দামের আশায় চরের কৃষকরা মরিচ চাষে ঝুকচ্ছেন। সদর উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। যার বেশির ভাগই চর এলাকায়। স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকেও কৃষকদের এ বিষয়ে নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কাজীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চরের চাষিরা মরিচ চাষে নেমেছিলেন। এ বছর এই উপজেলায় ৪৪০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আ জা মু আহসান শহীদ সরকার বলেন, মরিচের ভালো দাম থাকায় যমুনা চরের কৃষকরা মরিচ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। চলতি বছর জেলায় ১ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিরা লাভবান হবেন বলে আশা করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।