মঙ্গলবার, ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কুড়িগ্রামে ফেসবুক পোস্টের জেরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, সাংবাদিক সহ আহত অন্তত-৫

কুড়িগ্রামে ফেসবুক পোস্টের জেরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, সাংবাদিক সহ আহত অন্তত-৫

Views

বুলবুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলায় ফেসবুকে ‘উষ্কানিমূলক’ পোস্টের জেরে বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠন যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক সাংবাদিক সহ উভয় পক্ষের অন্তত ৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রবিবার সন্ধ্যায় উপজেলা শহরের কয়েকটি স্থানে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে দলটির নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উভয় পক্ষকে নিবৃত করে সরিয়ে দেয়। তবে রাত সাড়ে ৮ টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষের উত্তেজনা চলছিল।

রাজিবপুর থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) তসলিম উদ্দিন সংঘর্ষের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোখলেছুর রহমান এবং উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক রোস্তম মাহমুদের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ ঘটে বলে জানা গেছে। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাদের কয়েকজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

সংঘর্ষের সময় মোখলেছুর রহমানের সমর্থকরা স্থানীয় সাংবাদিক সুজন মাহমুদের ওপরও হামলা করে। পরে উপজেলার সাংবাদিকরা সুজন মাহমুদকে উদ্ধার করেন।

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানায়, রবিবার কুড়িগ্রাম জেলার বিএনপির ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোখলেছুর রহমান জেলা আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পাননি। এনিয়ে সহিদুল নামে এক যুবদলকর্মী ফেসবুকে উষ্কানি ও ব্যঙ্গার্থক পোস্ট দেন। তিনি রোস্তম মাহমুদের সমর্থক। ওই পোস্টের জেরে সন্ধ্যায় রাজিবপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় গেটের সামনে সহিদুলকে কিলঘুষি মারে মোখলেছের সমর্থক কয়েকজন ছাত্রদলকর্মী।

খবর পেয়ে রোস্তমের সমর্থকরা রাজিবপুর পাঁচ রাস্তা মোড়ে মোখলেছ গ্রুপের কয়েকজনকে মারপিট করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মোখলেছ গ্রুপের নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে রাজিবপুর বাজারে যুবদল আহ্বায়ক রোস্তম মাহমুদ গ্রুপের ওপর হামলা করে। উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ইয়াকুব নামে এক যুবদলকর্মী ও সাংবাদিক সুজন অন্তত ৫ জন আহত হন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সাংবাদিক সুজন মাহমুদ বলেন, ‘সন্ধ্যায় সহকর্মীদের সঙ্গে বাজারে আড্ডা দিচ্ছিলাম। সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার হোসেন, সাব্বির হোসেন সহ কয়েজন মিলে আমার ওপর হামলা করে। এসময় সঙ্গে থাকা আমার সহকর্মীরা আমাকে উদ্ধার করেন।’
‘তাদের উভয় পক্ষের সংঘর্ষের সময় তারা আমাকেও মারপিট করেন। মোখলেছকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে আমার ওপর তাদের ক্ষোভ ছিল ’, হামলার কারণ প্রশ্নে বলেন সুজন।

উপজেলা যুবদল আহ্বায়ক রোস্তম মাহমুদ বলেন, ‘ আমি এলাকায় ছিলাম না। আমাদের এখানে কোনও পক্ষ ভাগ নেই। জুনিয়রদের মধ্যে হালকা হাতাহাতি হয়েছে। তেমন গুরুতর কিছু নয়। একজন গুরুতর আহত হয়েছে। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ’

সংঘর্ষের বিষয়টি স্বীকার করলেও তাতে নিজের সম্পৃক্ততার কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোখলেছুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘ আমি ঢাকায় রয়েছি। বিরোধের বিষয় নিয়ে কিছুই জানি না। সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছি। হাসপাতালে ভর্তি আহত একজনের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারকে অনুরোধ করেছি।’
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. হাসিবুর রহমান বলেন, আহত ৪ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তরা সবাই জখম ছিলেন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ইয়াকুবকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা হয়েছে।’

ওসি তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘ ফেসুবুকে পোস্ট করা নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও হালকা সংঘর্ষ হয়েছে। কয়েকজন আহত হয়েছে। খবর পেয়ে আমি নিজে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উভয়পক্ষকে সরিয়ে দিয়েছি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’

Share This

COMMENTS