পার্বতীপুরে জনবল সংকটে খুড়িয়ে-খড়িয়ে চলছে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানাটি
র্বতীপুর (দিনাজপুর) থেকে মোঃ মিজানুর রহমান মিজানঃ দেশের রেলওয়ে একমাত্র জংশন পার্বতীপুর রেল ষ্টেশন । বাংলাদেশের পার্বতীপুরে এখানে অবস্থিত একমাত্র কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা রেলইঞ্জিনের ভারী মেরামতের জেনারেল ওভারহোলিং কারখানা । সারা দেশের ডিজেলচালিত রেল ইঞ্জিনের ভারী মেরামতের কাজ এখানে হয়ে থাকে। দেশের চলমান ট্রেনে ব্যবহূত প্রতিটি ইঞ্জিন পাঁচ বছর পর-পর পূবনির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী জেনারেল ওভারহোলিং বা ভারী মেরামত করতে হয়। এছাড়াও দুর্ঘটনাজনিত ইঞ্জিনের বিশেষ মেরামতও করা হয় এখানে। এ কারখানায় সারা দেশের রেলযোগাযোগ সচল রাখলেও কারখানায় মেকানিক্যাল (কারিগরি), যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক , নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, স্টোরসহ মোট ১১টি বিভাগের জন্য পদ রয়েছে ৭২৪টি। যার বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছে মাত্র ২১৩জন। পদ খালি রয়েছে ৫১১টি। প্রতি বছর বড় একটা সংখ্যা অবসরে গেলেও জনবল নিয়োগ হচ্ছে না। তাই একারখানায় জনবলের অভাবে খুড়িয়ে-খুড়িয়ে চলছে লোকোমোটিভ কারখানাটি। কারখানার অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে লোকোমোটিভ রয়েছে ২৯৪টি (ব্রডগেজ ১০৮টি, মিটারগেজ ১৮৬টি)। ইতিমধ্যে ১৩০টি ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে ব্রডগেজ ৬০টি ও মিটারগেজ ৮০টি। রেল বহরে ৬৭ বছর পূরনো ছয়টি মিটারগেজ রেলইঞ্জিন চালু রয়েছে। আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া লোকোমোটিভগুলোকে বছরের পর বছর ধরে জেনারেল ওভারহোলিং করে সচল রাখা হচ্ছে। একটি রেলইঞ্জিনে ৩৪ হাজারের বেশি যন্ত্রংশ রয়েছে। মেকানিক্যাল সেকশনে নিয়োগ পাওয়া একজন কর্মচারীর ইঞ্জিনের হাজার হাজার যন্ত্রাংশ চিনতে এবং তা খোলা ও মেরামতের কৌশল শেখতে ১০-১২ বছর লেগে যায়। এর পর এই কর্মচারীরাই দক্ষ হিসেবে বিভিন্ন ট্রেডে পদোন্নতি পেয়ে উপরের পদে চলে যান। এখন নিয়োগ দিলেও দক্ষ জনবল গড়ে উঠতে অন্তত আট বছর সময় লাগেবে। জানা যায় , রেলঞ্জিন কারখানা অত্যাধুনিক মেকানিক্যাল সেকশনে ৫৫৯টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছে মাত্র ১৫১ জন। আর পদ শূন্য রয়েছে ৪০৮ জন। প্রতি মাসে এক-দুজন করে অবসরে যাচ্ছেন। এই সেকশনে ৭৩ শতাংশ পদ শূন্য। আগামী এক-তিন বছওে কর্মরতদেও অধিকাংশ চলে যাবেন অবসরে। এক সময় কারিগরি বিভাগে কর্মরত ছিল প্রায় সাড়ে ৪ শত শ্রমিক কর্মচারী। ১৫-২০ বছরে প্রায় ২শত জন অবসওে গেছেন। কেউ বা পদোন্নতি পেয়ে ওপারে গ্রেড চলে গেছেন। এখন মূল জনবলের তিন ভাগের এক ভাগ রয়েছে কারখানায়। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক কারখানার এক কর্মকর্তা জনান, গত অর্থবছওে একাখানা থেকে ৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে গেছেন। সর্বশেষ ২০১৩ সালে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে খালাসি ৪৮ জন। ১২৪ আউট সোসিং ও অস্থায়ী শ্রমিক (টিএলআর) ৩০ জন জনবল দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এ কারখানা জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় জনবল সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ ও দক্ষ জনবলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। কারখানার উৎপাদন সচল রাখতে শূন্য পদে নিয়োগ অতিবজরুরি। পার্বতীপুর কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম বলেন, রেলইঞ্জিন কারখানাটি সারা দেশের রেল যোগাযোগের ব্যবস্থাকে সচল রাখছে। রেলওয়ে কেন্দ্রী লোকোমোটিভ কারখানাকে সক্রিয় করতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগসহ খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ ও সময়মত অর্থ বরাদ্দ পেলে প্রতি মাসে তিনটি আউট টার্ন দেওয়া সম্ভব হবে। কারখানায় যন্ত্রংশ ও জনবল সংকট থাকার পরেও ভারী মেরামত শেষে আউট টার্ন করা হয়েছে জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৯টি । এর মধ্যে তিন থেকে পাঁচ বছর পড়ে থাকা তিনটি অকেজো ভারী রেলইঞ্জিন মেরামত করে চলাচল উপযোগী করা হয়েছে।